ছবি : সংগৃহীত

বৃষ্টি কার না ভালো লাগে? অনেকে বলে থাকেন— শৌখিন বাঙালির প্রিয় ঋতু বৃষ্টি। বৃষ্টির নরোম-কমোল ফোঁটায় সিক্ত হতে ভালোবাসে কেউ কেউ। কেউ আবার অঝোর ঝিমঝিম বারিবর্ষণে স্নাত হতে পছন্দ করেন।

রিমঝিম বর্ষার সুর অথবা টিনের চালের কিংবা পাতা গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানির দৃশ্য অনেকের মন কাড়ে। দহলিজে টুপটুপ করে পড়া বৃষ্টি ফোঁটাও অনেকের মন ছুঁয়ে যায়। বৃষ্টির রকম ও ধরন যেমন হোক প্রায় সব মানুষের কাছে পছন্দ। তবে কিছু মানুষ আছেন, বৃষ্টি যাদের জন্য কষ্ট নিয়ে আসে। বৃষ্টিতে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়। তবুও বৃষ্টির আবেদন ফুরাবার নয়।

বৃষ্টিতে বের হওয়া ও কাপড় ভেজানো সুন্নত

মেঘ-বাদলের দিনে বের হয়ে দুই হাত প্রসারিত করে খানিক স্নাত হতে অনেকে পছন্দ করেন। কিন্তু এই ভালোলাগা আনন্দখানিও সুন্নত। শরীরের কিছু অংশ বৃষ্টিতে ভেজানোও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা রহমতের ধারা হয়ে নামে। তাই বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে— কাপড়ের কিছু অংশ মেলে ধরা সুন্নত।

আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন আমাদের বৃষ্টি পেল। তখন রাসুল (সা.) তার গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন— যাতে করে গায়ে বৃষ্টি লাগে। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে সদ্য আগত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৮)

কল্যাণকর বৃষ্টির দোয়া

বৃষ্টি সাধারণত আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ বয়ে আনে। আবার কখনো অকল্যাণ ও মন্দ কিছুও থাকতে পারে। তাই কল্যাণকর বৃষ্টির দোয়া করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআ।’ [হে আল্লাহ, কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করুন]। (বুখারি, হাদিস : ১০৩২)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা, সায়্যিবান হানিআ।’ [হে আল্লাহ, এ যেন তৃপ্তিদায়ক বৃষ্টি হয়]। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯৯)

বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার বা বৃষ্টি থামানোর দোয়া

প্রয়োজনমাফিক বৃষ্টি কল্যাণকর। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যা অবশ্যই খারাপ। যখন প্রবল বৃষ্টি হতো— তখন নবী (সা.) বলতেন,

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার। (বুখারি, হাদিস : ১০১৪)

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।

বজ্রপাত শুনে যে দোয়া পড়তে হয়

আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বজ্রপাতের সময় কথা বন্ধ রাখতেন। আর বলতেন—

 وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ

উচ্চারণ : ওয়া য়ুসাব্বিহুর রা’দু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিয়ফাতিহি। (সুরা রাদ, আয়াত : ১৩)

অর্থ : বজ্র ও সব ফেরেশতা সন্ত্রস্ত হয়ে তার প্রশংসা পাঠ করে।

এরপর বলেন, এটি দুনিয়াবাসীর জন্য চরম হুমকি। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৭২৩; মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ৩৬৪১; আল-আজকার, হাদিস : ২৩৫)

বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়

প্রসঙ্গত, বৃষ্টিপাতের সময় বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত, করুণা ও সম্পদে প্রাচুর্য নেমে আসার সময়; তাই এটি দোয়া কবুলের উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে- নবী (সা.) বলেন, ‘দুইটি দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া ও বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস : ২৫৩৪; তাবারানি, হাদিস : ৫৭৫৬; সহিহুল জামে, হাদিস : ৩০৭৮)

বৃষ্টির পরে যে দোয়া পড়া সুন্নত

জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৪৬; মুসলিম, হাদিস : ১৫)

বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো—‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ’।

অর্থ : আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ১০৩৮)