প্রতীকী ছবি

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। বিলাল ইবনু রাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। বংশসূত্রে তিনি হাবশি। আর সম্পর্কসূত্রে আত-তায়মি আল-কুরাশি। পারিবাকি নাম হলো— ‘আবু অব্দুল্লাহ’ কিংবা ‘আবু আব্দুর রহমান’। (মুয়াজ্জিনু রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; আলুকাহ ডটনেট : ১৯-০১-২০১৯)

ইসলাম গ্রহণের কারণে ‍মুশরিকদের হাতে বহুবার নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন। উমাইয়া ইবনু খালফ তীব্র কাঠফাটা রোদে মক্কার ধু ধু মরুভূমিতে নির্মমভাবে তার উপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে। প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড বুকের উপর চেপে দিয়ে তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে।

জালিমের হাতে বিলাল (রা.)-এর দুঃখ- দুর্দশা দেখে আবু বকর (রা.) নিপীড়ক উমাইয়া ইবনু খালফ-এর কাছ থেক তাকে কিনে নেন। এবং চিরকালের জন্য দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে দেন। পরে তিনি নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্য অবলম্বন করেন। তার একাকীত্ব ও কষ্ট ভাগাভাগি করতে নবীজি (সা.) তাকে ও আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন : প্রতিদিন সবার আগে আজান হয় যে দেশে

তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে প্রায় সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি হয়ে ওঠেন নবীজির বিশ্বস্ত রাষ্ট্রীয় কোষাধ্যক্ষ। ইসলামের ইতিহাসে শুরুর দিকে ইসলাম গ্রহণকারী ও হিজরতকারীদের অন্যতমও তিনি। (বিলাল ইবনু রাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু; আলুকাহ ডটনেট : ১৯-০১-২০১৯)

ইতিহাসের এ মহীরুহ ব্যক্তিত্ব ষাটোর্ধ্ব বয়সে সিরিয়ার রাজধানী দামেশকে ইন্তেকাল করেন। বাবুস সগিরের নিকটে দামেশকের কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। (বিলাল ইবনু রাবাহ; ইসলামস্টোরি.কম : ১৯-০১-২০১৯)

বিলাল ইবনু রাবাহ (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য

বিলাল ইবনু রাবাহ (রা.) ছিলেন ধৈর্যের পাহাড়। আল্লাহর রাস্তায় পুণ্যপ্রত্যাশী। রাসুল (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন- বিলাল (রা.) ছিলেন সর্বপ্রথম সাতজন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণকারীদের অন্যতম। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম সাতজন ইসলাম গ্রহণকারীগণ হলো—

এক. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দুই. আবু বকর। তিন. আম্মার। চার. আম্মারের আম্মাজান সুমাইয়া। পাঁচ. সুহাইব। ছয়. বিলাল ও সাত. মিকদাদ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহম। (বিলাল ইবনু রাবাহ; ইসলামস্টোরি.কম : ১৯-০১-২০১৯)

বিলাল ইবনু রবাহ সর্বদা নবীজির সাহচর্য অবলম্বন করতেন। যা তাকে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করেছে।

বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত

বিলাল ইবনু রাবাহ (রা.)-এর শ্রদ্ধেয়া আম্মাজান হলেন হামামাহ। বনি জুমার সঙ্গে তার হৃদ্যতা ছিল। বিলাল হাবশি (রা.) মক্কাতেই ভূমিষ্ঠ হন এবং এখানেই লালিত-পালিত হন। তার বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হাকিম উদ্ধৃত করেন- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘চারজন অগ্রবর্তী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন—

এক. রাসুল আরবদের অগ্রগামী। দুই. সালমান ফারসি পারস্যের অগ্রগামী। তিন. বিলাল হাবশার অগ্রগামী। চার. আর সুহাইব (রা.) রোমের অগ্রগামী হওয়ার পরম সৌভাগ্য অর্জন করলেন।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, ‘আবু বকর আমাদের সর্দার। আবার তিনি আমাদের আরেকজন সর্দার তথা বিলালকে জালিমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন।’

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহুকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে সমাসীন করুক। আমিন। (আস সাহাবিয়্যুল জালিল, বিলাল ইবনু রাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু; আলুকাহ ডটনেট : ১৯-০১-২০১৯)

শাহেদ বিন হোসাইন ।।

শিক্ষার্থী, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।