প্রতীকী ছবি

জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান ও নববী আদর্শের বিশুদ্ধ ইসলামি জ্ঞান মানবজীবনের মহামূল্যবান এক আলোকবর্তিকা। যে জ্ঞান জীবন পরিক্রমার প্রতিটি পদে ও পদক্ষেপে মানবজাতিকে আলোর পথ দেখায়।

বিপথগামিতা, প্রান্তিকতা ও আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে দূরে রাখে। এ-জ্ঞান মানুষের জীবন-জগত বিশুদ্ধতা ও স্বচ্ছতার পবিত্র আভায় উজ্জ্বল করে তোলে। মানুষকে পৌঁছিয়ে দেয়— পার্থিব ও স্বর্গীয় সফলতার আরাধ্য সোনালি আঙিনায়।

পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন প্রায় আটশোর্ধ্ব আয়াতে এবং প্রিয়নবী (সা.) বহু হাদিসে— ইসলামি জ্ঞান (ইলম) এবং জ্ঞানীর (আলিম) মর্যাদার কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

করোনা-পরিস্থিতি শেষে দেশে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার কথা চলছে। এছাড়াও প্রতি বছর হিজরি সনের শাওয়াল মাসে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান শুরু হয়।

নতুন প্রতিষ্ঠান, নতুন পরিবেশ ও নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রচুর নতুন শিক্ষার্থীর আগমন ঘটে। তাই জ্ঞানের অঙ্গনে তাদের সাদর সম্ভাষণ জানাতে নবীজি (সা.) বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।

আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একসময় লোকেরা (আমার পরে) তোমাদের অনুসরণ করবে। দূর-দূরান্ত থেকে তারা দ্বীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে— তোমরা তাদের ভালো কাজের নসিহত করবে (দ্বীনের ইলম শেখাবে)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫০; দ্বায়িফুল জামি, হাদিস : ১৭৯৭)

রাসুল (সা.) এই হাদিসে সাহাবায়ে কেরামকে দ্বীনি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা থেকে শিক্ষার্থীদের সম্মান ও উৎকৃষ্টতা ফুটে উঠে। রাসুল (সা.) বলেন, লোকেরা তোমাদের অনুগামী হবে। তথা আমার অবর্তমানে দ্বীনি বিষয়ে লোকেরা তোমাদের কথা-কাজের অনুসরণ করে চলবে। কারণ, তোমরা সরাসরি আমার কাছ থেকে ধর্মীয় হুকুম-আহকাম, জ্ঞানের অমীয় বাণী, উত্তম স্বভাব এবং উৎকৃষ্ট আচার-আচরণের সবক নিয়েছো। যে কারণে আমার উম্মতের পরবর্তী লোকেরা তোমাদেরকে পথপ্রদর্শক, রাহবার এবং দীক্ষাগুরু হিসেবে গ্রহণ করবে। দিগ-দিগন্ত থেকে জ্ঞানপিপাসুরা এসে তোমাদের কাছ থেকে ‘তাফাক্কুহ ফিদ্দিন’ তথা দ্বীনের গভীর জ্ঞানপাঠ নেবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে সময়ের জন্য আমি তোমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে রাখছি। লোকেরা তোমাদের কাছে ইলম শিখতে এলে ও ধর্মীয় জ্ঞান লাভে আগমন করলে— তাদের সাদর স্বাগত জানাবে। সহমর্মিতা, স্নেহ-মায়া আর সৌহার্দ্যরে প্রীতি ডোরে আবদ্ধ করে নেবে। কল্যাণকামিতা ও সহযোগিতায় তাদের পাশে থাকবে।

এ কথাটি তিনি এভাবে ব্যক্ত করেছেন,

 فَإِذَا أَتَوْكُمْ فَاسْتَوْصُوبِهِمْ خَيْرًا

অর্থাৎ : আর তারা দূর-দূরান্ত হতে দ্বীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে তোমরা তাদের ভালো কাজের উপদেশ দেবে (দ্বীনের ইলম শেখাবে)।

বর্ণ-গোত্র, বংশীয় কৌলিন্য, জাতপাতের ভেদাভেদ না করে- দ্বীনের গভীর শিক্ষা অর্জনে যিনি-ই বের হবেন, তিনি কোন গোত্রের, কোন বংশের, কোন এলাকার, কোন দেশের, কোন বর্ণের সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে— একজন তালিবে ইলম হিসেবে-ই তার সাথে উত্তম আচরণ, মিষ্ট ভাষা এবং কল্যাণকামী মুআমালা করা উচিত।

এদিকে ইঙ্গিত করতেই হাদিসে ব্যক্তির একবচন "رجل" রাজুল না এনে— বহুবচন "رجال" রিজাল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে জাত-গোষ্ঠী ও বর্ণ-বংশ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষ শামিল হয়ে যায়। তালিবে ইলম নারী হলে, তারাও এ হাদিসে রিজাল শব্দের মাধ্যমে স্বাগত পাবেন বলে বোঝা যায়।

‘মিন আক্বতারিল আরদ্ব’ বা ‘বিশ্বের দিগ দিগন্ত থেকে’— হাদিসের এই অংশ থেকে বোঝা যায়, তালিবে ইলম ও শিক্ষার্থী সে পৃথিবীর যে প্রান্তের বা যে দিগন্তের বাসিন্দা হোক না কেন— সে সবার কল্যাণকামিতা, সদয় আচরণ বা উত্তম প্রাপ্তির হকদার। কেননা, প্রতিটি দ্বীনি শিক্ষার্থী দ্বীন অন্বেষণ এবং রাসুল (সা.)-এর দরবারের অতিথি হওয়ার দরুন স্বয়ং আল্লাহ তাআলার নৈকট্যশীল বান্দা। যারা এদের সঙ্গে সদাচরণ করে, তারাও আল্লাহর প্রিয়দের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। আর যারা এদের সঙ্গে বিরূপ, রূঢ় এবং কঠিন আচরণ দেখায়, তাদের ওপর আল্লাহ অভিশাপ ধেয়ে আসা অসম্ভব কিছু নয়। 

এই হাদিস গোত্র, বংশ, বর্ণ এবং জাত দেখে শিক্ষাদানকারীদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। যারা স্বগোত্রীয়, স্বদেশি ও নিজ বলয়ের লোক বেছে বেছে দ্বীনি শিক্ষা দেন; ভিন্ন বর্ণ, দেশ, অঞ্চল, গোত্র, বংশের লোকেদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন অথবা তাদের বোঝা মনে করেন। তাদের প্রতি দয়া-মায়া করার পরিবর্তে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন। তারা আল্লাহর কাছে ও সমাজের ভালো মানুষদের চোখে ঘৃণিত।

আল্লাহ তাআলা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের তাওফিক দিন— আমাদের সবাইকে।

মুফতি হামেদ বিন ফরিদ।। শিক্ষক, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম।

ঢাকা পোস্টের ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন : dhakapostislam@gmail.com