প্রতীকী ছবি

কবিরা গুনাহ কাকে বলে? কিংবা কবিরা গুনাহ কী? এটা কেউ কেউ জানেন। আবার অনেকে জানেন না। মূলত কবিরা গুনাহ বলা হয় ওই সব বড় বড় পাপকর্মকে যেগুলোতে— নিন্মোক্ত কোনো একটি বিষয় পাওয়া যাবে।

◉ যেসব গুনাহের ব্যাপারে ইসলামি শরিয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
◉ যেসব গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগের কথা রয়েছে।
◉ যেসব গুনাহের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা রাগ করেন।
◉ যেসব কাজে আল্লাহ তায়ালা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশতা মণ্ডলী লানত দেন।
◉ যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এমনটি করবে— সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়।
◉ কিংবা যে কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
◉ যেসব বিষয়কে মুনাফেকির আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
◉ যে কাজে ‘দ্বীন নাই’ ও ‘ঈমান নাই’ ইত্যাদি বলা হয়েছে।
◉ অথবা যে কাজকে আল্লাহ তায়ালা সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় করা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছোট) গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাবো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩১)

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান এতদুভয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপ রাশির জন্য কাফফারা স্বরূপ যায় যদি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৭৩৩)

পাঠকদের জেনে রাখার সুবিধার্থে এখানে একশটি কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) তুলে ধরা হলো-

০১. আল্লাহর সাথে শিরক করা। ০২. নামাজ পরিত্যাগ করা। ০৩. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। ০৪. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা। ০৫. পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। ০৬. যাদু-টোনা করা।
০৭. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা। ০৮. জিহাদের ময়দান থেকে থেকে পলায়ন। ০৯. সতী-সাধ্বী মু‘মিন নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া। ১০. রোজা না রাখা।

১১. যাকাত আদায় না করা। ১২. ক্ষমতা থাকা সত্যেও হজ্জ আদায় না করা। ১৩. যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা। ১৪. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া। ১৫. অহংকার করা। ১৬. চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগোনো)। ১৭. আত্মহত্যা করা। ১৮. আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা। ১৯. অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা। ২০. উপকার করে খোটা দান করা।

২১. মাদক বা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা। ২২. মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশ গ্রহণ করা। ২৩. জুয়া খেলা। ২৪. তকদির (ভাগ্য) অস্বীকার করা। ২৫. অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা। ২৬. গণকের কাছে ধর্না দেওয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া। ২৭. পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা। ২৮. রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করা। ২৯. মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা। ৩০. মিথ্যা কথা বলা।

৩১. মিথ্যা কসম খাওয়া। ৩২. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা। ৩৩. জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। ৩৪. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া। ৩৫. মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা। ৩৬. হিল্লা তথা চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করা। ৩৭. যার জন্যে হিলা করা হয়। ৩৮. মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা। ৩৯. মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা। ৪০. মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা।

৪১. কোন মুসলিমকে গালি দেওয়া অথবা তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া। ৪২. খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপ যোগ্য অস্ত্রের লক্ষ্য বস্তু বানানো। ৪৩. কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা। ৪৪. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা। ৪৫. ওজনে কম দেওয়া। ৪৬. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা। ৪৭. ইসলামি আইনানুসারে বিচার বা শাসনকার্য পরিচালনা না করা। ৪৮. জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা বা পরের জমি জবর দখল করা। ৪৯. গিবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা। ৫০. দাঁত চিকন করা।

৫১. সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখমণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা (ভ্রু প্লাগ করা) ৫২. মাথায় অতিরিক্ত/ চুল সংযোগ করা (পরচুলা ব্যবহার করা) ৫৩. পুরুষের নারী বেশ ধারণ করা। ৫৪. নারীর পুরুষ বেশ ধারণ করা। ৫৫. বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো। ৫৬. কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা। ৫৭. পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেওয়া। ৫৮. পুরুষের গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা। ৫৯. মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বয়াত বা আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা। ৬০. ডাকাতি করা।

৬১. চুরি করা। ৬২. সুদ লেন-দেন করা, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা। ৬৩. ঘুষ লেন-দেন করা। ৬৪. গনিমত (জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ) বণ্টনের পূর্বে আত্মসাৎ করা। ৬৫. স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা। ৬৬. জুলুম-অত্যাচার করা। ৬৭. অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা। ৬৮. প্রতারণা বা ঠগবাজী করা। ৬৯. রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ আমল করা। ৭০. স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা।

৭১. পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা। ৭২. সাহাবিদেরকে গালি দেওয়া। ৭৩. নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে গমন করা। ৭৪. মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন। ৭৫. ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলি রীতিনীতি অথবা বিদআতের প্রতি আহবান করা। ৭৬. পবিত্র মক্কা ও মদিনায় কোনো অপকর্ম বা দুষ্কৃতি করা। ৭৭. কোন দুষ্কৃতিকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া। ৭৮. আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা। ৭৯. বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া। ৮০. যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট।

৮১. স্বামীর অবাধ্য হওয়া। ৮২. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা। ৮৩. স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করা। ৮৪. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা। ৮৫. বেশী বেশী অভিশাপ দেওয়া। ৮৬. বিশ্বাসঘাতকতা করা। ৮৭. অঙ্গীকার পূরণ না করা। ৮৮. আমানতের খিয়ানত করা। ৮৯. শরীরে উল্কি অঙ্কন করা বা ট্যাটু করা। ৯০. ঋণ পরিশোধ না করা।

৯১. বদ মেজাজি ও এমন অহংকারী যে উপদেশ গ্রহণ করে না। ৯২. তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদি ঝুলানো। ৯৩. পরীক্ষায় নকল করা। ৯৪. ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা। ৯৫. ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অন্যায় বিচার করা। ৯৬. আল্লাহ বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করা। ৯৭. পার্থিব উদ্দেশ্যে দীনী ইলম (দীনের জ্ঞান) অর্জন করা। ৯৮. কোন ইলম (দীনের জ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা সত্যেও তা গোপন করা। ৯৯. নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা। ১০০. আল্লাহর রাস্তায় বাধা দেওয়া।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সব রকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন এবং কু-প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনায় কোনো গুনাহ করে ফেললে— আমাদের ক্ষমা করুন। আমিন।

আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল।। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব