প্রতীকী ছবি

কোরবানি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতময় ইবাদত। কোরবানির সঙ্গে আত্মত্যাগের মহিমা মিশে আছে। এতে আরও জড়িয়ে আছে আর্ত-সেবার গৌরব। আদি পিতা আদম (আ.)–এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল থেকে কোরবানির ইতিহাস শুরু হয়। এরপর মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)–এর মহান আত্মবিসর্জনে কোরবানির ইতিহাস কিয়ামত পর্যন্ত উজ্জ্বল ও অম্লান থাকবে।

যেসব জন্তু দিয়ে কোরবানি করা যায়

সব জায়েজ পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যায় না বা কোরবানি আদায় হয় না। কোরবানি করার জন্য শরিয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট পশু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে মোট ছয় প্রকার জন্তু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। সেগুলো হলো- উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল।

এগুলো ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ নেই। কোরবানি করার জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মতো মনে হয়— তাহলে তা দিয়েই কোরবানি করা বৈধ। গরু-মহিষের হতে হবে পূর্ণ দুই বছর। আর উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হিদায়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ১০৩)

পশুতে যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না

কোরবানির পশু দোষত্রুটিমুক্ত হতে হবে। পশুর মধ্যে কিছু ত্রুটি থাকলে, কোরবানি দেওয়া যাবে না। সেগুলো এখানে উল্লেখে করা হলো—

১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা, ২. শ্রবণশক্তি না থাকা, ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা, ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।

মোটকথা, কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। যেমন আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ— যেটার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত— যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু— যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত— যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)

যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে

পশুতে কিছু ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়ার সুয়োগ রয়েছে বা জায়েজ। সেগুলো হলো—
১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়; ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে; ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই, ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা; ৫. কান আছে, তবে ছোট; ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ, ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষের পশু; ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম, ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।