প্রতীকী ছবি

ইসলামি বর্ষের নাম হিজরি বর্ষ। হিজরি বর্ষ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এর হিজরতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা হিজরি সনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হিজরি সনের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা মুসলমানদের ওপর ফরজে কিফায়া।

মহররম থেকে হিজরি সন শুরু হওয়ার কারণ

হিজরি সন শুরু হয় মহররম মাস থেকে। মহররম মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেছেন। এছাড়াও আল্লাহর রাসুল (সা.) মহররম মাসকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (মুসলিম, হাদিস : ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)

কিন্তু হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম কেন? এটা অনেকের জিজ্ঞাসা। কী কারণে মহররম থেকে হিজরি সনের সূচনা— সে সম্পর্কে আল্লামা সালমান মনসুরপুরি লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ৫৩ বছর বয়সে নবুয়তের চতুর্দশ বছর ৮ রবিউল আউয়াল, সোমবার কুবা নগরীতে অবতরণ করেছেন। ইংরেজি হিসাবে যা ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ সাল। (রাহমাতুল্লিল আলামিন : ১/১০২)

যে কারণে মহররম থেকে হিজরি সনের সূচনা

মহানবী (সা.)-এর হিজরত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাসে। তাহলে হিজরি বর্ষ মহররম মাস থেকে কেন শুরু করা হয়? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, অতঃপর তারা হিজরত থেকেই সন গণনা শুরু করল। আর মহররমকে প্রথম মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিল। কেননা তৎকালীন আরবে মহররমই প্রথম মাস হিসেবে পরিচিত ছিল। জনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে বিঘ্ন না হয়, সে জন্য এটিকে পরিবর্তন করা হয়নি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৫১৩)

আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) লিখেছেন, রবিউল আউয়ালকে বাদ দিয়ে মহররম থেকে সন গণনা শুরু করা হয়েছে। কেননা হিজরতের সূচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে মহররম থেকে। আর আকাবার দ্বিতীয় শপথও হয়েছে মধ্য জিলহজে। আর আকাবার দ্বিতীয় শপথ হিজরতকে ত্বরান্বিত করে। আর এ ভগ্ন মাসের পর নতুন চাঁদ উদিত হয়েছে মহররম মাসে। তাই একে দিয়েই বছর গণনা শুরু করা হয়েছে। আমার জানামতে, এটি দৃঢ়তম অভিমত। (ফাতহুল বারি : ৭/২৬৮)

আল্লামা শাওকানি (রহ.)-এর মতে, মাসগুলোর এই ধারাবাহিকতা আল্লাহ প্রদত্ত। তিনি লিখেছেন, এ বিষয়ে আল্লামা বগভির বর্ণনাও অনুরূপ। (তাফসিরে বগভি : ২/৩৪৫, সুরা তাওবা : ৩৬ দ্রষ্টব্য)

হিজরত থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু যে কারণে

বর্ষ গণনার ক্ষেত্রে হিজরতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণ কী? অথচ মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তিসহ আরো একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সন গণনা শুরু করা যেত।

এ প্রশ্নের উত্তর আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) এভাবে দিয়েছেন : সুহাইলি (রহ.) এ বিষয়ে রহস্য উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম সন গণনার বিষয়ে হিজরতকে প্রাধান্য দিয়েছেন সুরা তাওবার ১০৮ নম্বর আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে। সেখানে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। এই ‘প্রথম দিন’ ব্যাপক নয়। এটি রহস্যাবৃত। এটি সেই দিন, যেদিন ইসলামের বিশ্বজয়ের সূচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিরাপদে, নির্ভয়ে নিজ প্রভুর ইবাদত করেছেন। মসজিদে কোবার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ফলে সেদিন থেকে সন গণনার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম মতৈক্যে পৌঁছেছেন। (ফতহুল বারি : ৭/২৬৮)

তিনি আরো বলেছেন, মহানবী (সা.)-এর জন্ম, নবুয়ত, হিজরত ও ওফাত— এ চারটির মাধ্যমে সন গণনা করা যেত। কিন্তু জন্ম ও নবুয়তের সন নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য আছে, আর মৃত্যু শোকের স্মারক। তাই অগত্যা হিজরতের মাধ্যমেই সন গণনা শুরু করা হয়।