প্রতীকী ছবি

মানুষের জীবনে ভ্রমণ কিংবা সফর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মতো এটিও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সে হিসেবে যানবাহনে আরোহন করতেই হয়। অবস্থা, সময় ও অর্থ বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। কিছু কিছু যানবাহনে ভ্রমণ আদতে ঝুঁকিপূর্ণও হয়। আর সবসময়ের মতো সফরেও নিরাপদ থাকা— গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাসুল (সা.) ভ্রমণে সব ধরনের নিরাপত্তার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়েছেন।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটা দোয়া পড়তে নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন। এই দোয়া পড়লে বাইরে অবস্থানের সারাটা সময় আল্লাহর জিম্মাদারিতে থাকা যায়। সব ধরনের বিপদ-আপদ ও অসুবিধা থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেন। 

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তাআলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)

দোয়াটি (আরবি) হলো ​:

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহর নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।

বাহনে চড়ার পর মহানবী (সা.) দোয়া পড়তেন

আরবি :

بسم الله الرحمن الرحيم سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ

উচ্চারণ :  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হা-যা ওয়া-মা-কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন।’

আরও পড়ুন : কসর নামাজের নিয়ম

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও অশেষ করুণাময়। তিনি পূতপবিত্র ওই সত্তা যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।

রাসুল (সা.) আরেকটি দোয়া পড়তেন

আরবি :

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হা-জাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তার-দা আল্লাহুম্মা হাউয়িন আলাইনা সাফারনা হা-যা, ওয়াতওই আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আনতাস্‌-সাহিবু ফিস্‌-সাফার, ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি ওয়াল মাল। আল্লাহুম্মা ইন্না নাউজুবিকা মিন ওয়া-ছা-ইস সাফারি ওয়া-কাআবাতিল মানজারি, ওয়া সুইল মুনকালাবি ফিল আহলি ওয়াল মাল।’

আরও পড়ুন : কসর নামাজ কাজা পড়া যাবে কি?

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের এ সফর সহজ করে দাও। রাস্তার দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সফরের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবারের কাছে তুমি আমাদের স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ! তোমার কাছে সফরের কষ্ট-ক্লান্তি ও ভয়ানক দৃশ্য দেখা থেকে এবং পরিবার, সম্পদ-বিত্ত ও অধীনস্তদের কাছে খারাপ অবস্থায় ফেরত আসা থেকে তোমার কাছে রক্ষা চাই। (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮/২)

নৌকা বা জাহাজে ভ্রমণের দোয়া পড়া 

بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসা-হা, ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রহিম।

অর্থ : তোমরা এতে আরোহন কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান। (সুরা হুদ :৪১)

সফরে কোথাও থামলে যে দোয়া পড়বেন

ভ্রমণের মাঝপথে কোথাও অবস্থান করতে হলে এ দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এই দোয়াটি পড়লে, ঘরে ফেরা পর্যন্ত কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। দোয়াটি-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ من شَرِّ ما خَلَقَ

উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭০৮)

অর্থ : আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমার মাধ্যমে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা চাচ্ছি।