ছবি : সংগৃহীত

নামাজে শুধু ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করাই যথেষ্ট নয়। বরং মনোযোগ, একনিষ্ঠতা ও ধীরস্থিরতা সব কিছুই প্রয়োজন। ফলে অমনোযোগিতা ও নিষ্ঠার অভাবে কখনো নিজের অজান্তেই মুসল্লিরা নামাজে ভুল করে বসে। নিম্নে উল্লেখিত হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, অনেকে কীভাবে ভুল করে বসেন।

সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন নবীজি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একজন সাহাবি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের এক কোনায় অবস্থান করছিলেন। সাহাবি এসে তাকে সালাম দিলেন। নবীজি (সা.) তাঁকে বললেন, যাও তুমি আবার নামাজ আদায় কোরো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। সাহাবি ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর নবীজি (সা.)-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, তোমার প্রতিও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় কোরো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। তৃতীয়বার সাহাবি বললেন, আমাকে অবগত করুন।

তখন নবীজি (সা.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে। আবার ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৬৭)

এছাড়াও আরও কয়েকটি ভুলের কথা এখানে তুলে ধরা হলো— যেগুলো মুসল্লিরা নামাজে সাধারণত মনের অজান্তে করে বসেন। তাই এই ভুলগুলো বেঁচে থাকা প্রত্যেকের কর্তব্য।

এক. নামাজে তাড়াহুড়া করা

নামাজের ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা নবীজি (সা.) নামাজের বিধানগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজের ধীরস্থিরতা অবলম্বনের উপায় হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির করা। যেমন সিজদায় গেলে সিজদায় ব্যবহৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্থির রাখা।

আরও পড়ুন : স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে জামাতে নামাজ পড়তে পারবেন কি?

দুই. মনে মনে কিরাত পড়া

কিরাত পাঠ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঠোঁট ও জিহ্বার ব্যবহার আবশ্যক। জিহ্বা ও ঠোঁট না নাড়িয়ে সম্পূর্ণ মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় না। কেননা নামাজে কোরআন তিলাওয়াত বা পাঠ করতে বলা হয়েছে। আর তা মুখে উচ্চারণ না করলে প্রমাণিত হয় না। তাকে চিন্তা-ভাবনা বলা হয়, পাঠ বলা হয় না।

তিন. সিজদার অঙ্গগুলো মাটিতে স্পর্শ না করা

সিজদার সময় অনেকে নাক ও পায়ের আঙুলগুলো ভূমিতে লাগল কি না তা খেয়াল করেন না। অথচ হাদিসের ভাষ্য মতে সিজদার সময় সাতটি অঙ্গ ব্যবহার করতে হবে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে সাতটি অঙ্গের ওপর সিজদা করতে বলা হয়েছে। তা হলো—কপালের ওপর; এবং তিনি তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন নাক, দুই হাত, দুই টাকনু ও দুই পায়ের আঙুলের দিকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৮১২)

আরও পড়ুন : নামাজের রাকাত ছুটে গেলে যা করবেন

প্রখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘কেউ যদি সাত অঙ্গের কোনো অঙ্গ সিজদার সময় ব্যবহার না করে, তবে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।’

হানাফি মাজহাব অনুসারে কেউ যদি তিন তাসবিহের চেয়ে বেশি সময় ইচ্ছা করে কোনো একটি অঙ্গ যদি মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে, তবে তার নামাজ হবে না।

চার. তাকবির না বলেই রুকুতে চলে যাওয়া

ইমামকে রুকু অবস্থায় দেখলে রাকাত ধরার জন্য বহু মানুষ একটি তাকবির দিয়েই রুকুতে চলে যান। অথচ তার জন্য তাহরিমার তাকবির ছাড়াও রুকুতে যাওয়ার জন্য আরো একটি তাকবির পাঠ করা আবশ্যক ছিল। আবার অনেকে রুকুতে যেতে যেতে তাকবিরে তাহরিমা পাঠ করেন। অথচ বিশেষ অপারগতা ছাড়া তাকবিরে তাহরিমা দাঁড়িয়ে পাঠ করা আবশ্যক।

আরও পড়ুন : চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া যাবে কি?

পাঁচ. টাইট ও ছোট পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানো

বহু মুসল্লি এমন যারা অনেক বেশি আটো পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানোর কারণে ঠিকমতো সিজদা করতে পারেন না। আবার কোনো যুবক এমন গেঞ্জি ও প্যান্ট পরে নামাজে দাঁড়ান যে সিজদার সময় সতর প্রকাশ পেয়ে যায়। অথচ নামাজের সময় সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করা এবং সতর ঢেকে রাখা আবশ্যক। নামাজের সময় উচিত হলো সুন্দর, ঢোলা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কোরো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)।

আল্লাহ সবাইকে যত্নসহ নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।