শেষ পর্যন্ত সেই কটূক্তিই ডোবাল ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) প্রেসিডেন্ট নোয়েল লু গ্রেতকে। দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে কটাক্ষ করে কথা বলার চার দিনের মাথায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহ-সভাপতি ফিলিপ্পা দিয়ালোকে।

ঘটনার সূত্রপাত এক সাক্ষাৎকার থেকে। ফ্রান্সকে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়ে আরও একবার দলটির বিশ্বকাপ কোচ হয়েছেন দিদিয়ের দেশম। আর তাতে, আবারও ফ্রেঞ্চ কোচ হওয়ার সুযোগ হারান জিনেদিন জিদান। গুঞ্জন আছে, এবার বিশ্বকাপ শেষেই নাকি দলের দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল জিদানের। সেই দায়িত্ব নিতেই নাকি পিএসজি এবং ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন জিদান। সাক্ষাৎকারে মূলত এ ব্যাপারেই জানতে চাওয়া হয় গ্রেতের কাছে। 

সহজ ও সাবলীল উত্তরে হয়তো বিষয়টা সামলে যেতে পারতেন গ্রেত। কিন্তু হুট করে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এফএফএফ প্রধান। কটাক্ষ করে বসেন জিদানকে। তিনি বলেন, ‘জিদান কোথায় গেল তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তার যেখানে ইচ্ছা সে যেতে পারে। আমি খুব ভালো করেই জানি যে, জিদান সবসময়ই রাডারে ছিল (ফ্রান্সের সম্ভাব্য কোচ হিসেবে)। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরও অভাব নেই। কেউ কেউ তো দেশমের বিদায়ের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু দেশমকে নিয়ে গুরুতর আপত্তি কার থাকতে পারে? কারও নয়। জিদানের যা ইচ্ছা করতে পারে। আমি পরোয়া করি না। তার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। দেশমের দায়িত্ব ছিন্ন করার কথা আমরা কখনও ভাবিইনি। জিদান যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে, কোনো ক্লাবে বা যেকোনো জায়গায়।’

এখানেই শেষ নয়। জিদান ফ্রান্সের কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হতো এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিদান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমি তার ফোন ধরতাম না।’

দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের এমন অপমানের পর থেমে থাকেনি ফ্রান্সের জনগন। গোটা দেশ একসঙ্গে ফুঁসে ওঠে এ ঘটনায়। সারা বিশ্বের ফুটবল তারকা ও বিভিন্ন নামজাদা ক্লাবও সরব হয়ে ওঠে এ ব্যাপারে। কঠোর সমালোচনার মুখে জিদানের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন ফ্রান্স ফুটবলের প্রধান।

তবে এতোকিছু করেও বহিষ্কার আটকাতে পারলেন না। বুধবার এফএফএফ-এর কার্যনির্বাহী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে। দুই ঘণ্টার সে সভা শেষে গ্রেতকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এফএফএফ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ সদস্যের সঙ্গে আলোচনার পর লু গ্রেত নিজে থেকে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। 

দায়িত্ব থেকে গ্রেতকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে অবশ্য এটাই একমাত্র কারণ নয়। সম্প্রতি আরএমসি রেডিওর এক সাক্ষাৎকারে ফুটবল এজেন্ট সোনিয়া সোইদ যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন লু গ্রেতের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো সব ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের সময়কার। এসময় গ্রেতের পদত্যাগ দাবি করেন সোনিয়া।

এনইআর/এটি