গ্রামে গ্রামে ঘুরলে দেখা মিলত ক্রিকেট পিচের। কোথাও বা টাঙানো থাকত বাঁশের গোলপোস্ট। শীতকালে প্রায় প্রতিটা বাড়ির সামনেই পাওয়া যেত ব্যাডমিন্টন কোর্ট। এসব অবশ্য আছে এখনও। তবে সংখ্যায় অনেক কম। শহরের অবস্থা তো আরও শোচনীয়!

চার দেয়ালে বন্দিজীবনে শিশুদের হাপিত্যেশ এমনিতেই। পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব, অভিভাবকদের ‘ঝামেলা’ নিতে না চাওয়ার মানসিকতা— সবমিলিয়ে খোলা আকাশের দেখা পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে এখানকার শিশু-কিশোরদের জন্য। সঙ্গে বই, ক্লাস আর কোচিংয়ের চাপ তো আছেই। এমন অবস্থা দিন দিন যেন আরও প্রকট হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশের দুটি খেলা আছে। অনেকদিন ধরে একা হয়ে পড়া ক্রিকেটের সঙ্গে গেল কয়েক বছরে যোগ দিয়েছে আরচ্যারি। চলতি বছর হওয়া অলিম্পিকে হতাশ করেছেন রোমান সানারা। ক্রিকেটের পারফরম্যান্সও হতাশাজনক। এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলেও বাংলাদেশের সাফ সাফল্যই নেই এক যুগের বেশি সময়।

আপাত দৃষ্টিতে জাতীয় দল অনেক দূরের মনে হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের ওপর তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিভাবকরা বলছেন, জাতীয় পর্যায়ে খেলা টিকিয়ে না রাখা গেলে সেটা অশনি সংকেত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

আরও বেশি মোবাইল/ট্যাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে শিশু-কিশোররা। বাড়বে সামাজিক বিশৃঙ্খলাও। অভিযোগ আছে, খেলাধুলা আয়োজনে স্কুল পর্যায়ে যথেষ্ট উদ্যোগ নেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা ফেডারেশনের। যেটুকু হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। খেলাধুলা কমে গেলে শিশুদের শারীরিক বা মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে— বলছেন বিশ্লেষকরা।

কমিটি আছে, খেলা নেই

বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা হকি— সব খেলায় খেলোয়াড় তুলে আনার সবচেয়ে বড় জায়গা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসার জায়গা কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন। ক্রিকেট বোর্ডের ‘৯০০ কোটি টাকার এফডিআর’ থাকলেও নেই একটি আধুনিক একাডেমি। ‘একাডেমি ভবন’ নামে একটি বিল্ডিং থাকলেও সেটি মূলত হোস্টেল।

ফুটবল ফেডারেশন বিপুল উৎসাহের সঙ্গে সিলেটে কয়েক বছর আগে একটি একাডেমি শুরু করলেও কিছুদিন না যেতেই বন্ধ হয়ে যায় সেটি। সম্প্রতি আরেকটি একাডেমির কার্যক্রম শুরু হলেও এটি কতদিন টিকে থাকবে এ নিয়েও সংশয় আছে। অন্যান্য খেলায় খেলোয়াড় তুলে আনার প্রক্রিয়া বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেলা ছড়িয়ে দেওয়ার চিত্র আরও ভয়াবহ।

বাংলাদেশে নতুন নতুন খেলোয়াড় তুলে আনার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট মনে করেন না জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট ও গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার। একই মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিমের।

ঢাকা পোস্টকে রিফাত বিন সাত্তার বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড় তুলে আনার যে কার্যক্রম তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি এখানে নেই। বিদেশে খুব ভালো কিছু চর্চা আছে। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে আমরা সেসব দেখিও না, নিয়ে আসার চেষ্টাও করি না। সব খেলাই এক-দুজন তারকাকেন্দ্রিক। তারা হঠাৎ ঝলক দেখান, এরপর শেষ। আমরা তাই ব্যক্তিগত বা দলগত কোনো খেলাতেই দীর্ঘ মেয়াদে সাফল্য পাই না।’

এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পনা দরকার বলে মনে করেন খালেদ মাসুদ পাইলট। বলেন, ‘শটকার্ট পরিকল্পনা নয়, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বাচ্চাদের নিয়ে কী কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। এখন যে পরিকল্পনা আছে, সেটা তো অবশ্যই যথেষ্ট নয়। আমাদের দেশে কমিটি আছে কিন্তু খেলা নাই।’

আর বিনিয়োগের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন— মনে করেন সাদেকা হালিম। ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের একটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আছে, অধিদফতর আছে। প্রচুর বিনিয়োগ আর বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দূর থেকে সেগুলো দেখি। বুঝতে পারি না এদের কাজ কী! আমরা এখন রিয়েল এস্টেটকে মাঠ ভাড়া দিচ্ছি। শিশুদের খেলার জন্য তো কোনো জায়গা থাকছে না।’

ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও ফেডারেশনগুলোর উদ্যোগে ঘাটতি

ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে মূলত চারটি সংস্থা কাজ করে। যুব উন্নয়ন, ক্রীড়া পরিষদ, বিকেএসপি ও ক্রীড়া পরিদফতর। এর মধ্যে প্রথম তিনটির কাজ আলাদা। স্কুল বা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে টুর্নামেন্টগুলোর দায়িত্ব ক্রীড়া পরিদফতরের। এই সংস্থাতে কর্মরত আছেন ৪৩৭ জন।

অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুরো দেশে ১৫ ডিসিপ্লিনে তাদের ভাষায় ‘ক্রীড়া কার্যক্রম’ ছিল ৮৫৯টি। সবচেয়ে বেশি ১৫১টি ক্রীড়া কার্যক্রম ছিল ফুটবলে। সবচেয়ে কম ‘একটি’ জিমন্যাস্টিকে। এছাড়া ক্রিকেটে ৭৮, ভলিবলে ৯৬, হকিতে ২৬ ও হ্যান্ডবলে ৭০টি ক্রীড়া কার্যক্রম ছিল। এই অর্থবছরে ৩৯ জন ‘প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ’ দেয় ক্রীড়া পরিদফতর। আগের তিন বছরে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৮, ৩৯ ও ৩৫ জন। অর্থাৎ প্রতি জেলায় গড়ে একজন করেও ক্রীড়াবিদ প্রশিক্ষণ পাননি। সবচেয়ে বেশি ক্রীড়া কার্যক্রম ফুটবলও পৌঁছাতে পারেনি প্রতিটি উপজেলায়।

অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুরো দেশে ১৫ ডিসিপ্লিনে তাদের ভাষায় ‘ক্রীড়া কার্যক্রম’ ছিল ৮৫৯টি। সবচেয়ে বেশি ১৫১টি ক্রীড়া কার্যক্রম ছিল ফুটবলে। সবচেয়ে কম ‘একটি’ জিমন্যাস্টিকে। এছাড়া ক্রিকেটে ৭৮, ভলিবলে ৯৬, হকিতে ২৬ ও হ্যান্ডবলে ৭০টি ক্রীড়া কার্যক্রম ছিল।

এই অর্থবছরে ৩৯ জন ‘প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ’ দেয় ক্রীড়া পরিদফতর। আগের তিন বছরে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৮, ৩৯ ও ৩৫ জন। অর্থাৎ প্রতি জেলায় গড়ে একজন করেও ক্রীড়াবিদ প্রশিক্ষণ পাননি। সবচেয়ে বেশি ক্রীড়া কার্যক্রম ফুটবলও পৌঁছাতে পারেনি প্রতিটি উপজেলায়।

ক্রীড়া পরিদফতরের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে উপপরিচালক তরিকুজ্জামান নান্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বয়সভিত্তিক পর্যায় নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটা বার্ষিক ক্যালেন্ডার থাকে। সেটার ভিত্তিতে ক্রীড়ার বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। সেখান থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা হয়।’

বাংলাদেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল। এটি আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু এখান থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার যে সদিচ্ছা, তারও অভাব আছে। বিভিন্ন সময় এই টুর্নামেন্টের অনেক খেলোয়াড়ের ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় মনোযোগী হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এখন ক্রিকেট। এক সময় জনপ্রিয় নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট ছিল অনেক খেলোয়াড় উঠে আসার মূলে। বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর অবশ্য গেল বছরই ‘বঙ্গবন্ধু প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট’ চালু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

ধরে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সাফল্য

দেশের ফুটবল ধুঁকছে অনেক দিন ধরেই। কখনোই দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসর সাফের গণ্ডি পার হয়নি এই খেলার সাফল্য। ব্যক্তিগত কিছু ইভেন্টে মাঝেমধ্যে ঝলক দেখা গেলেও সেটি হয় সাময়িক। বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব বলতে আছে কেবল ক্রিকেট। এটিও দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার দশা। অলিম্পিকে পদক তো দূরের কথা, সরাসরি খেলতে পেরেছেন কেবল দুই জন।

খেলাধুলায় তরুণদের আগ্রহ ধরে রাখতে জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের বিকল্প নেই। সামনে তারকা না থাকলে শিশু-কিশোরদের আগ্রহও থাকবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সাফল্য না থাকলে আগ্রহ থাকবে না অভিভাবকদেরও।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (প্রোগ্রাম কোয়ালিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) রিফাত বিন সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন ফলটা ভালো হবে না, তখন বাবা-মায়েরা সন্তানদের খেলাধুলায় নিতে চাইবেন না। তাদের আগ্রহ হারিয়ে যাবে। বলবেন, এতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। বাবা-মায়েরা মনে করবেন, খেলে লাভ কী? খেলোয়াড় হিসেবে তো সম্মান নেই। আয় বা পেশাদারিত্ব যখন থাকবে না তখন কিন্তু দিনশেষে এটা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু ভাববেন না অভিভাবকরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য না থাকলে তাদের এই ভাবনা আরও পোক্ত হবে। এটা আসলে খুব ভয়ঙ্কর ব্যাপার শিশু ও কিশোরদের জন্য।’

জাতীয় পর্যায়ের সাফল্য বা ব্যর্থতা প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রভাব ফেলে কি না— জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘অবশ্যই প্রভাব ফেলে। কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের খেলা দেখেই তো আমরা খেলোয়াড় হয়েছি। টিভিতে দেখে খেলোয়াড় হলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। টিভির খেলোয়াড়কে যখন সামনে থেকে দেখবেন, তার সঙ্গে খেলবেন, স্বপ্নের বাস্তবায়নটা সহজ হবে। তখন নিজের মধ্যেই বিশ্বাস তৈরি হবে যে, সে তো আমার মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ। তখন জড়তাটা কেটে যাবে।’

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অথবা যেকোনো খেলার আন্তর্জাতিক সাফল্যের সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেলার সম্পর্ক কী— এমন প্রশ্ন রাখা হয় রাজশাহী থেকে উঠে আসা খালেদ মাসুদ পাইলটের কাছে। তার মতে, ‘সম্পর্ক তো আছেই। সামনে তারকা না থাকলে খেলাটা ধসে পড়বে গোড়া থেকেই।’

জাতীয় পর্যায়ের সাফল্য বা ব্যর্থতা প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রভাব ফেলে কি না— জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘অবশ্যই প্রভাব ফেলে। কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের খেলা দেখেই তো আমরা খেলোয়াড় হয়েছি। টিভিতে দেখে খেলোয়াড় হলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। টিভির খেলোয়াড়কে যখন সামনে থেকে দেখবেন, তার সঙ্গে খেলবেন, স্বপ্নের বাস্তবায়নটা সহজ হবে। তখন নিজের মধ্যেই বিশ্বাস তৈরি হবে যে, সে তো আমার মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ। তখন জড়তাটা কেটে যাবে।’

মানসিক বিকাশের জন্যও দরকার খেলাধুলা

খেলাধুলা কেবলই বিনোদন অথবা শরীরচর্চার মাধ্যম— এমনটি মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, খেলাধুলা শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনের জন্যও জরুরি। এছাড়া দলগত হয়ে খেলার মাধ্যমে বাচ্চারা সুস্থ প্রতিযোগিতা ও মনের কথা ভাগাভাগি করে নিতে শেখে।

সাদেকা হালিমের ভাষায়, ‘খেলাধুলা কমে যাওয়ায় তরুণদের মধ্যে সাংঘাতিকভাবে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কেবল শারীরিক গঠনই নয়, মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও এর একটা সম্পর্ক আছে। আমি যদি শারীরিকভাবে সবার সঙ্গে অংশগ্রহণ না করি তাহলে মানসিকভাবেও মিশতে পারব না। আমি শেয়ার করতে শিখব না। সুস্থ প্রতিযোগিতা শিখব না।’

‘প্রতিটা খেলা সুস্থ প্রতিযোগিতা শেখায়। ফলে এই যে আমরা মাইন্ড ব্লক করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরি করছি, রোবটের মতো; ফলে আমরা দেখছি অনেকে জঙ্গিবাদ, মাদক— এসব বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছে। আমি খুব শক্তভাবে মনে করি খেলাধুলা ভালোভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত সব জায়গায়।’

বদলাতে হবে মানসিকতা

দেশে খেলাধুলার বিকাশে মানসিকতায় পরিবর্তন প্রয়োজন— মনে করেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার। খেলাধুলার বিষয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দেন এই দাবাড়ু।

তিনি বলেছেন, ‘খেলাধুলাকে আমরা যেভাবে দেখছি সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। প্রত্যন্ত অঞ্চল বলেন আর যে অঞ্চলের কথাই বলেন। খেলাধুলাকে দেখা হয় সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে। আমাদের সাধারণ ধারণা হচ্ছে খেলাটা একটা সময় কাটানোর মাধ্যম। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে অনেক বাবা মা পছন্দ করে না বাচ্চারা খেললে।’

‘হয়তো বলে খেলতে যেও না। সময় নষ্ট। পড়াশোনা করো। এই ধারনা ঠিক না তাদের। তাকে ক্রীড়াবিদ হতে হবে এমন না। কিন্তু খেললে তার মানসিক বা শারিরীক বিকাশে সেটা ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে তার পড়াশোনাতে এটা সাহায্য করে। সামাজিক হতে শেখায়। অন্য শিশুদের সঙ্গে যখন খেলতে যায় অনেক কিছু শিখতে পারে। একটা টিম কীভাবে কাজ করে সে বুঝতে পারে। পরে কর্মজীবনে এটা সাহায্য করে।’

খেলাধুলার উপকার বলতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘দাবার কথা যদি বলেন, ইনডোর গেম। শেখায় কীভাবে প্রবলেম সলভ করবেন। প্রতিটা খেলার মধ্যে কিছু গুণাবলি আছে যেটা শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। কিন্তু সেটা হচ্ছে ধরেন আমরা যারা জানি, বুঝি। তারা বলছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে সময় কাটানো মাধ্যম। এটাতে বদল আনতে হবে।’

তরুণদের নিয়ে ভাবনার জায়গায় বদল আসা জরুরি। ক্রীড়াঙ্গন কেবল অর্থের ঝনঝানি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামাজিক হয়ে ওঠার হাতিয়ারও। ভাবনায় বদল এনে এখনই উদ্যোগী হতে হবে সব মহলকে। মানসিকতায় বদল আনতে হবে অভিভাবকদেরও। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।