জাদুকর, কতজনকেই তো বলা হয়। কিন্তু শেন ওয়ার্ন; আলাদা। বল হাতে জাদুটা তিনি সত্যিই জানতেন। বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটসম্যানদের অবিশ্বাস্য চোখজোড়া যার সাক্ষী দিয়ে যাবে অনন্তকাল। এই জাদু তিনি কোথায় শিখেছেন? ওয়ার্ন বলেছিলেন, ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা তো ছিলই। সঙ্গে তিনি আরেকটা কাজ পারতেন- লক্ষ্য পূরণের আগ অবধি বল ছুঁড়ে যাও, সময় তাতে যতক্ষণই লাগুক।

অথচ বলের নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া ওয়ার্নি ১৮ বছর অবধি ক্রিকেটটা সিরিয়াসলি খেলতেনই না। টেনিস খুব ভালোবাসতেন, একটা ক্লাবের হয়ে খেলতেন আইএফএল। কিন্তু বয়সটা ১৯ এ পা দিতেই সেখান থেকে একটা চিঠি আসে- তুমি আমাদের হয়ে খেলার জন্য যথেষ্ট ভালো নও।

ওয়ার্ন পরে বলেছেন- ওই বয়সে এমন কথা শোনার পর তার সামনে দুটো পথই খোলা ছিল। এক- সংকল্পবদ্ধ হওয়া, দুই- ব্যর্থ হয়ে মুষড়ে পড়া। ওয়ার্ন জানতেন লেগ স্পিন ভালো করেন, তিনি বেছে নিয়েছেন সেটিই। মৃত্যুর তিন বছর আগে এবিসি নিউজকে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে ওয়ার্ন বলেছিলেন নিজের বাঁকবদলের কথা।

আপনি কিছুটা দেরিতে ক্রিকেটে এসেছেন। ছোটবেলায় টেনিস ও আইএফএল খুব পছন্দ করতেন, খেলতেও চাইতেন। হঠাৎ পথ বদলে ফেললেন কেন?

ওয়ার্ন : তারা আমাকে একটা চিঠি লিখে জানাল, আমি যথেষ্ট ভালো না। (হাসি)

আইএফএলের জন্য?

ওয়ার্ন : হ্যাঁ, তারা বলল ক্লাবে আর তোমাকে দরকার নেই; ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল। আমি বললাম এটা আমার স্বপ্ন, মনে হলো অন্ধকারের ভেতর পড়ে গেলাম। আমার বয়স কেবল ১৮, তখন ১৯ এ পড়েছি। আমার অবস্থা তখন খুব খারাপ। আমি ১৪ দিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম অসুস্থ হয়ে, আরও অনেক ঘটনা ঘটেছিল জীবনে, কিন্তু কিছুই আমাকে বিমূর্ষ করতে পারেনি। আমি তখন নিজেকে বললাম, কিছুতে আমি ভালো হবোই। সবাই কিছু না কিছুতে ভালো হয়।

আপনাকে কেবল খুঁজে বের করতে হবে কোন জিনিসটাতে আপনি ভালো। আমি লেগ স্পিন ভালো করতাম। আপনি যেমন বললেন, পরে এটাতে উন্নতি করেছি। কিন্তু আমি নিজের সেরা অবস্থানে যেতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার মনে হয় আমি সেখানে যেতেও পেরেছি।

ওই চিঠিতে বাদ পড়ার খবর পেলেন, এটা আপনার ওপর কেমন প্রভাব ফেলল?

ওয়ার্ন : ১৮ বছর বয়সে যখন শুনলাম, আমি যথেষ্ট ভালো না। তখন সামনে দুইটা পথই খোলা ছিল- সংকল্পবদ্ধ হওয়া, যেটা আমি করেছি। অথবা বলতে পারতাম, এটা অনেক কঠিন, সবাইকে দোষ দিয়ে বেড়াতে পারতাম, নিজেকে ভিক্টিম ভাবতে পারতাম, খারাপ দিকগুলো দেখতে পারতাম। 

আমি অনেক খেলোয়াড়কে চিনি, যারা অনেক ভালো স্পোর্টস ম্যান, ভুল মানুষের হাতে পড়েছে অথবা তাদের বলা হয়েছে তুমি ভালো নও। তারা সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি আর শেষ হয়ে গেছে।

লেগ স্পিন নিয়ে অনেক ধরনের মিস্ট্রি আছে। আপনি কীভাবে অনুশীলন করতেন এতটা ভালো বোলার হতে?

ওয়ার্ন : অবশ্যই একটা সৃষ্টাপ্রদত্ত প্রতিভা ছিল- আমি বল স্পিন করাতে পারতাম। হয়তো কিছু শারিরীক সুবিধাও ছিল, অনেক বড় হাত ছিল, রিস্টটা বড় ছিল, আমি শক্তিশালী ছিলাম, আমার মনে হয় এসব সাহায্য করেছে। কিন্তু অনুশীলনের কথা যদি বলেন, আমি বল করে যেতে পারতাম।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলতে করতে পারতাম ক্রিকেট পিচে। আমি তখন নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিতাম। ধরেন আজকে তিনবার হিট করব একটা জায়গায়, যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টাও লেগে যেত, মাঠ ছেড়ে যেতাম না। যদি বিশ মিনিটে হয়ে যেত; বাড়ি চলে যেতাম। এরপর নতুন লক্ষ্য ঠিক করতাম যে কাল চারবার হিট করতে হবে ওই জায়গায়। 

যখন বাড়িতে থাকতাম, আমার হাতে একটা ক্রিকেট বল থাকতো। সারাদিন হাতের মধ্যে স্পিন করানোর চেষ্টা করতাম। এটা শুধুমাত্র অনুভূতি নেওয়ার জন্য কেমনভাবে বলটা হাতের মধ্যে থাকে, কীভাবে আলাদা বল করা যায়। আমার মনে হয় জিনিসটা খুব উপভোগ করতাম আর নিজের সেরা পর্যায়টা দেখতে চাইতাম।

এমসিজিতে আপনার অনেক ভালো স্মৃতি আছে। ২০০৬ বক্সিং ডে টেস্টের কথাটা আলাদাভাবে বলতে হয়। যখন ৭০০তম উইকেটটা নিলেন। আপনার মাথায় তখনকার স্মৃতিটা কেমন?

ওয়ার্ন : দর্শকদের মধ্যে সেই প্রত্যাশা, মাঠ থেকে যাওয়ার সময় পাওয়া সম্মান, ৭০০ উইকেটে চূড়ায় যেতে পারার আনন্দ; যেটা নিয়মিত ঘটে না। আরেকটা ব্যাপার আলাদা করে বলতে হয়- সবকিছু একদম চুপচাপ। 

আপনি যখন কোনো কিছুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন, ব্যাপারটা কঠিন। প্রতিটা বলই করতে যেতাম এটা ভেবে, এই বলেই বোধ হয় ৭০০তম উইকেট পেয়ে যাবো। ৯০ হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অসাধারণ ব্যাপার। পরিবেশ, এনার্জি; ওই দিন যা কিছু শুনেছি সেটা খুব বিশেষ কিছু।

সাক্ষাৎকারটা নেওয়ার জন্য আপনার অনেক ভিডিও দেখেছি। একটা ব্যাপার খুঁজে পেলাম, আপনার বলে আউট হওয়ার পর ব্যাটসম্যানরা স্টাম্পের দিকে তাকিয়ে থাকত। মানে তাদের বিশ্বাসই হতো না...

ওয়ার্ন : আমি জানি কয়েকজনকে বোকা বানানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু এমন কিছু করা দর্শকদের তৃপ্তি দিতো। আমার মনে আছে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যাকমিলান ছিল, আপনি যদি ভিডিওটা দেখেন। তার মাথায় বোধ হয় চিড় ধরেছিল কারণ সে এত দ্রুত মাথা ঘুরিয়েছে। 

স্ট্যাম্পের দিকে তাকিয়ে সে বলছিল, এটা কী হয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমি এটা পছন্দ করতাম। বলতাম, হ্যাঁ হয়েছে। তুমি কখনো আর আমার সঙ্গে এটা করতে পারবে না।

বল অব দ্য সেঞ্চুরির সময়টায় কেমন লেগেছে?

ওয়ার্ন : একজন লেগ স্পিনারের জন্য, পারফেক্ট লেগ ব্রেক ওইটা। এটা ছিল একদমই অপ্রত্যাশিত। আমি আর কখনো করতে পারবো না, পরে পারিওনি। প্রথম বলেই এমন উইকেট। 

আপনি বইয়ে বলেছেন, অনিশ্চয়তা তৈরি করতে ভালো লাগে। এটার জন্য আসলে কী করেন?

ওয়ার্ন : যখন প্রথম বল করতে আসেন, আপনি চাইবেন এমন কিছু একটা তৈরি করতে যেটা ওখানে নাই। মানে হচ্ছে, আপনি উইকেট নিতে চান, ব্যাটসম্যানকে ভাবাতে চান, স্পিন করতে চান। যদি স্পিন না থাকেও, তাহলে বলটা একটু স্লো করে দেওয়া, ফুটমার্ক, অথবা কিছুটা দ্বিধা তৈরি করা।

এমনকি বলটা ব্যাটের মিডলে লাগলেও, উফ! বলে যদি চিৎকার করে উঠা। ব্যাটার হয়তো বলবে, বলটা ব্যাটের মিডলে লেগেছে, তুমি চিৎকার করছো কেন। আপনাকে অপছন্দ করতে শুরু করবে। তবে সে বিভ্রান্ত হবে। এই ধরনের বিষয়ে। অথবা আসার পরই বললেন তুমি বেশিক্ষণ টিকবে না। এটা হচ্ছে ব্যাটসম্যানের মাথাটা দৌড়ের ওপর রাখা।

সবসময় কিছু করা। তারা আমার হাতের দিকে তাকাতো বেশি। আমি তাই তাদের বিভ্রান্ত করতাম যেন হাতটা না দেখতে পারে। আমাকে পিক করা সহজ। অনেকে হয়তো বলে তোমার অনেক ধরনের বল আছে। কিন্তু ভালো ব্যাটাররা ধরে ফেলতো।

আপনি মানুষের মাথায় কীভাবে ঢুকে যেতেন?

ওয়ার্ন : অনুশীলন করে (হাসি)। আমার মনে হয় আমি প্রতিদ্বন্দ্বীতা পছন্দ করতাম। আমি খুব প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ। এমন লড়াইয়ে থাকতে চাইতাম, বিশেষত যেটা দুজনের। হয় তুমি জিতবে, নয়তো আমি।

আপনি লোকজনকে খুব উত্তেজিত করতে পারেন, আপনার ওপর এটা প্রভাব ফেলেছে কখনও?

ওয়ার্ন : আমার মনে হয় এটা আমাকে আরও গভীরে নিয়ে যেত। কখনো বিরক্ত হয়েছি বা আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে এমন কিছু মনে পড়ছে না কারণ আমি এটা ভালোবাসতাম। তারা আমার ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী মনে হতো।

এমন কোনো স্লেজিংয়ের শিকার হয়েছেন, যেটা এখনও মনে আছে?

ওয়ার্ন : ড্যারল কালনের সঙ্গে একটা আছে। এখনও তার সঙ্গে দেখা হলে মজা করি। চার বছর আগে তার বিপক্ষে খেলেছি, সে এরপর বাদ পড়ে গিয়েছিল। চার বছর পর আবার সে দলে ফিরেছে, আমি স্লিপিংয়ে ফিল্ডিং করছিলাম। তাকে বলেছি, আউট হওয়া যাবে না ড্যারল, আমি তোমাকে আবার বোল্ড করতে চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি। এরপর বল করে তাকে আউট করতে পারিনি। সে আমাকে বলল, মনে হচ্ছে চারটা বছর শুধুু খেয়েই পাড় করে দিলে!

ক্যারি প্যাকারকে নিয়ে কিছু বলবেন?...

ওয়ার্ন : সে আমার কাছে দারুণ একজন। অসাধারণ ক্যারেক্টার। তার ব্যাপারে একটা কথা বলা হয় না, সে ছিল মনোমুগ্ধকর। তার ফেরারি গাড়ি নিয়ে অনেক মজা হতো...

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের এখনকার (তিন বছর আগের) অবস্থা নিয়ে কিছু বলেন...

আমার মনে হয় আমরা ভুগছি। এখনকার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট খুবই সাধারণ। যেকোনো বিজনেসেই আপনাকে ভিত্তিটা শক্ত করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভিত্তিটা সবসময়ই গ্রাসরুড ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেট ও শেফিল্ড শিল্ড। আমার মনে হয় আমরা শেফিল্ডকে  অবমূল্যায়িত করছি।

আমার মনে হয় না যথেষ্ট ফার্স্ট ক্রিকেট আছে স্কুল ক্রিকেটে। তরুণদের অনুপ্রাণিত করা, তাদের সঙ্গে কথা বলে খেলাটাকে বুঝানো, টেকনিকের ধারণা দেওয়া এসবের অভাব আছে। আমি স্কুল ক্রিকেটে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট দেখতে চাই। আন্তর্জাতিক তারকাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে, ক্লাব ক্রিকেটে দেখতে চাই।

তাদের খেলাটাকে কিছুটা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি জানি এটা কঠিন। কিন্তু তাদের এটা করতে হবে। করতে হবে টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ানকে লম্বা যাত্রায় সাফল্য এনে দিতে। 

স্মিথ-ওয়ার্নারদের বল টেম্পারিং নিয়ে কী বলবেন?

ওয়ার্ন : আমার মনে হয় সব অস্ট্রেলিয়ানরাই হতাশ ও লজ্জিত হয়েছে। পুরো ক্রিকেট কমিউনিটি ভেবেছে, অস্ট্রেলিয়ানরা এটা করতে পারে না। তারা এভাবে খেলে না, তারা কঠোর, ছাড় দেয় না, কিন্তু তারা সবসময় নীতি মেনে চলে। সব ধরনের খেলাতেই এটা আমরা মেনে চলি। তাই খুব হতাশ হয়েছি। তাদের সম্মানটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। 

এটা কি সংস্কৃতিতেও প্রভাব ফেলবে?

ওয়ার্ন : হয়তো। আমি জানি না। কিন্তু স্মিথ অধিনায়ক হতেই পারে। সে খুব ভালো মানুষ, খুব সামান্য একটা ভুল করেছে, জাজমেন্টে কিছুটা ভুল ছিল। আমার মনে হয় এই দেশে মানুষকে খুব দ্রুত শাস্তি দিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় তোলা হয় দ্রুত, নামিয়েও ফেলা হয় তাড়াতাড়ি। স্মিথ আমার মতে খুব ভালো ছেলে। দারুণ অধিনায়ক, অসাধারণ ব্যাটার। 

খুব ছোট একটা ভুল করেছে। আমার মনে হয় শাস্তিটা বেশি হয়েছে। ১ বছর নিষেধাজ্ঞা! তবে আমরা তাদের কাজটা পছন্দ করিনি। সম্মানটা তাদেরই ফেরাতে হবে।

আপনার জীবনেও তো অনেক স্ক্যান্ডেল, এটা কি কোনো প্রভাব রাখেনি পারফরম্যান্সে?

ওয়ার্ন : আমার মনে হয় আমার আচরণ খুব ভালো ছিল না। আমি যখন মাঠে নামতাম, তখন ভাবতাম এখানে মানুষকে হতাশ করা যাবে না। আমার সংকল্প, লড়াই করার ক্ষমতা এটা কখনোই বাইরের কোনো কিছুকে প্রভাব রাখতে দেয়নি। 

আপনি বইয়ে অনেক কিছু বলেছেন, এসব বলার সময় কতটা নার্ভাস ছিলেন?

ওয়ার্ন : এটা খুব কঠিন। এমন কিছু বলা যেটা আপনার সন্তান, পরিবারের মাথা নিচু করে দিতে পারে, তাদের লজ্জিত করতে পারে। এটা নিয়ে লেখা সহজ না। আমার সন্তানরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটা সহজ ছিল না। তবে বই নিয়ে আমার একটা গর্ব আছে, কারণ সারাজীবনে কখনো যেটা না সেটা বলিনি। 

সবসময় সৎ ও সোজাসাপ্টা থেকেছি। সবাই হয়তো সেটা পছন্দ করেনি, কিন্তু আমার মনে হয় তারা সম্মান করেছে। এই কারণেই হয়তো এখনও আমি জনপ্রিয়। আমার কথাটা যদি নিজে ধারণ না করতাম, সবাই বলতো দেখো সে কী করছে। আমার মনে হয় মানুষ আমাকে এখনও এই কারণে পছন্দ করে। আর আমি মানুষ, ভুল করেছি, সামনে হয়তো আরও করব। 

তারকাদের ব্যাপারে একটা মিথ থাকে, আপনার ব্যাপারে কোনটা আছে?

ওয়ার্ন : ধারণা সবসময় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। বেশির ভাগ মানুষ ভাবে তারা আমাকে জানে। তারা হয়তো ক্রিকেট খুব বেশি পছন্দ করে না। কিন্তু ভালো বা খারাপ, আমার সম্পর্কে কথা বলে। তারা ভাবে আমি ইডিয়েট, কোনো বুদ্ধি নেই, গাধা; কারণ কিছুটা ভুল করেছি। কিন্তু ভুল করা মানে তো আপনি গাধা না। কিন্তু অনেকে ভালোও বলে। আমি কোনো ক্লাবে গেছি, ‘ওহ! ওয়ার্নি! কিংবদন্তি!’ 

অনেকে আছে, এসে ছবি তুলবে, একটা-দুইটা-তিনটা। আপনি পাব্লিক ফিগার মানে কিছু বলতেও পারবেন না। এসে কোলাকুলি করল। এটা খারাপ না। কিন্তু আমি বাসায় থাকতে, ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে অথবা সন্তানদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আরও বেশি পছন্দ করি।

আপনি বইয়ে বলেছেন, দুইটা সিরিয়াস রিলেশন করেছেন; এখন সিঙ্গেল। কী করে সময় কাটাচ্ছেন?

ওয়ার্ন : একটা সময় একা লাগতো। এখন পুরো বিশ্ব ঘুরি, ধারাভাষ্য দেই, স্পন্সরদের কাজে যোগ দেই, গেম খেলি। হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। এটা মজার, কিন্তু একাকিত্ব অনুভব করি। আমার মনে হয় দারুণ একটা সম্পর্কের চেয়ে ভালো কিছু নেই। এটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু দারুণ সম্পর্ক না থাকলে একা থাকাটাই ভালো পছন্দ। 

লোকজনকে বিশ্বাস করেন কীভাবে?

ওয়ার্ন : এটা খুব কঠিন। লোকজন আপনার গল্প বিক্রি করতে বসে থাকে। এই ভয়ে কারো সঙ্গে মিশতে ইচ্ছে করে না। আমি মিশতে পছন্দ করি যদিও। আমি আর সন্তান চাই না, দারুণ তিনটা সন্তান আছে। কিন্তু আমার জীবনে শেষ বলতে কিছু নাই। তবে মাথায় তেমন কিছু নেই। তরুণদের বাচ্চা দরকার, আমার বয়সীদের বাচ্চা লালন-পালন। আমি সিঙ্গেল হিসেবে খুশি আছি, তবে সম্পর্কে থাকতে ভালোবাসি। 

আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোসটা কী?

ওয়ার্ন : আহ... সবচেয়ে বড় আফসোসটা যদি বলি, আমার কারণে বাচ্চাদের জীবনে যে প্রভাব পড়েছে। আমি তাদের হতাশ করেছি। বাকি জীবনটা তাদের ছাড়াই কাটাতে হবে। আমার সাবেক স্ত্রী ও আমি যখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেই, এটা বাচ্চাদের জন্য কঠিন ছিল। তবে আমি বাবা হিসেবে গর্বিত। তবুও তাদের ওপর আমার কারণে প্রভাব পড়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস সম্ভবত।

বাচ্চাদের সঙ্গে এখনও সম্পর্কটা কীভাবে ধরে রেখেছেন?

ওয়ার্ন : তাদের সত্যিটা বলেছি। আমি ক্ষমা চেয়েছি, তাদের বলেছি তোমাদের হতাশ করেছি। তারা কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। তারা আমাকে খুশি দেখতে চায়। আমার মনে হয় তারা আমাকে গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ, আমি তাদের লজ্জিত করেছি। যেমনটা বললাম, আমি খুব হতাশ বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক দারুণ। 

ব্যক্তিগতভাবে আপনার সবচেয়ে বাজে মুহূর্ত কোনটা?

ওয়ার্ন : আমার মনে হয় যখন সবাই ভেবেছে আমি ড্রাগ নিয়েছি। আমি কখনো ড্রাগ, কোকেন নেইনি। যখন ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হলাম, তারা ভাবল আমি ড্রাগ নিয়েছি। কিন্তু আমি আমার মায়ের ওষুধ নিয়েছিলাম। তবে কখনো তাকে দোষ দেইনি। খুব কষ্ট পেয়েছি যখন শুনেছি মানুষেরা আমার মাকে দোষ দিচ্ছে। 

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ফাউন্ডেশন। বোর্ড সদস্যরা টাকা নিয়ে পার্টি করেছে! যখন আমরা চার মিলিয়নের বেশি অর্থ জমা করেছি! যে ধরনের চেষ্টা আমি ও বোর্ড সদস্যরা  করেছি; আমার টাকা দিয়েছি। এরপর এই ধরনের অভিযোগ পাওয়াটা ছিল ভীষণ কষ্টের। 

স্বপ্নে কি এখনও ক্রিকেট খেলেন?

ওয়ার্ন : হাহাহা। আমি ক্রিকেটে আর যুক্ত হতে চাই না। আমার মনে হয় আর কোনো ক্রিকেট বাকি নেই। দলের ভেতর থাকা, মজা করাটা কিছুটা মিস করি। কিন্তু খেলাটা খুব বেশি মিস করি না। 

আপনি একবার সাইকোলোজিস্টের কাছে গেছেন। ধরেন জীবনের আরও ৩০ বছর বাকি আছে। কী করবেন?

ওয়ার্ন : আমি যে কাউকে উৎসাহী করি সাইকোলিজিস্টের কাছে যেতে। সবসময় কারো সঙ্গে কথা বলা জরুরি। আমরা সাধারণত বলি, দরকার নেই, দরকার নেই। যখন এলিজাবেথেরে সঙ্গে প্রেম হলো, আমি আরও ভালো মানুষ হতে চেয়েছি। শুধু তার জন্য না, আমার সন্তানদের জন্যও। 

আমি অসুস্থ বোধ করতাম। বুঝতে চাইতাম কেন ব্যাপারগুলো ঘটে। আমি জেরেমি স্নেপের কাছে গিয়েছিলাম। সে আমার দারুণ বন্ধু হয়ে গিয়েছিল এবং প্রথম এক সপ্তাহ আমরা হোটেল রুমে কাটিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘এটা খুব নিষ্ঠুর হবে’। এরপর আমি বলেছি, ‘করো, আমি এটা বুঝতে চাই’।

প্রথম যে প্রশ্নটা সে আমাকে করেছে, বলল ‘নিজের মৃত্যু বার্তা লেখো’। তখন নিজেকে নিয়ে খুশি ছিলাম না। বদলাতে চেষ্টা করেছি, কিছু বিষয়ে ভালো হওয়া দরকার ছিল। আমার মনে হয় খুব ভালো করেছি এতে। আগের চেয়ে বেশি ম্যাচিউর এখন। নিজেকে নিয়ে এখন খুশি। 

এমএইচ/এটি