রিয়াদকে নিয়ে ভাবার সময়টা তাহলে আসবে কবে?
শটে একাগ্রতা নেই। রিফ্লেক্স কমে গেছে। শরীরী ভাষায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। ফিল্ডিংয়েও সক্রিয়তা নেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেন ক্লান্ত পথিক। নিজেকে বয়ে বেড়ানো যাযাবর। মাঝেমধ্যে একটু-আধটু ঝলক দেখাচ্ছেন বটে। তবে সেটা এই বাংলাদেশ দলে টিকে থাকার জন্য কতটুকু যথেষ্ট, সে প্রশ্ন থাকছেই।
প্রশ্নটা আরও বড় হচ্ছে আফিফ হোসেনের কারণে। অনেকদিন ধরেই তিনি জাতীয় দলে আছেন। বেশ কিছু ভালো ইনিংসও খেলেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাটিংয়ে এতটাই পরে আসছেন, যথেষ্ট বল খেলতে পারছেন না বলে আফসোস থেকে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এতদিনে প্রমাণ হয়ে গেছে, আফিফ পাওয়ার হিটার নন, হাতে বল না থাকলে খেই হারান; তবে ইনিংস বিল্ড আপে দারুণ, সে জন্যে তো তার আরও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকা চাই! আফিফের ওপরে খেলতে না পারার প্রধান অন্তরায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একাদশেও প্রায়ই তাকে বোঝা মনে হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাতা ফাঁদে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। আগেও তার ব্যাটিং এপ্রোচ, আউটের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগে অবশ্য অধিনায়ক তামিম ইকবাল বেশ কয়েকবার বলেছেন, রিয়াদকে নিয়ে তাদের ভাবনাটা ২৩ বিশ্বকাপ অবধি।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এমন ক্রমাগত ব্যর্থতার পর তাকে নিয়ে টিম ম্যানেজম্যান্টের ভাবনায় বদল এসেছে কি না, এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। অধিনায়ক তামিম ইকবালকেও সেটা করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনে। তিনি যেন বুঝেও বুঝতে চাইলেন না কোন প্রসঙ্গে ভাবনা জানতে চাওয়া হচ্ছে। বললেন, ‘রিয়াদ ভাইকে নিয়ে কোন ভাবনা? একটু পরিষ্কার করে বলেন।’
অধিনায়ককে পরিষ্কার করা হলো। গতবছর শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে ১১ ম্যাচে ৩০০ রান, ২ ফিফটি, ৩৩ গড়, ৭০ স্ট্রাইকরেট। ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানের জন্য যেটা আদর্শ না একেবারেই। এ দৃশ্য শুধু পরিসংখ্যানেই। তার খেলার ধরন, শরীরী ভাষা তো দেখানোর সুযোগ নেই।
তাই দেখানো গেল না। তবে উল্লেখিত ১১ ম্যাচে অন্তত ৪ টা লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছেন, ফিল্ডিংয়ে একরকম লুকিয়ে রাখতে হয়েছে তাকে। এসব চিন্তাটা কেবল বাড়িয়েই দিচ্ছে। তামিমের কাছে এটাও জানতে চাওয়া হলো, আফিফ কি রিয়াদের কারণে ব্যাটিংয়ের সুযোগ কম পাচ্ছেন?
তামিম জবাব দিলেন এই বলে, ‘আমার কাছে মনে হয় রিয়াদ ভাই ইজ অ্যা ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট অব আওয়ার ওডিআই টিম। স্পেশালি ফর মি। আমার কাছে মনে হয় হি ইজ এ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট অব দ্য টিম।’ পরে আফিফকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাখ্যা দিলেন। তামিমের মনে হচ্ছে, ওই জায়গাটাতে আফিফই উপযুক্ত।
এরপর আবারও রিয়াদকে নিয়ে বললেন, ‘রিয়াদ ভাইয়ের ব্যাপারে, খুব পরিষ্কার ও সাধারণ ব্যাপার। আমি, নির্বাচক বা টিম ম্যানেজম্যান্ট কেউই কিছু ভাবছে না তাকে নিয়ে। ওয়ানডেতে তিনি খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার।’
একই কথা তামিম ঘুরিয়ে বললেন দু’বার। এভাবে টানা ব্যর্থতার পর। বয়স ৩৬ পার করা কোনো ক্রিকেটারকে নিয়েও যখন ভাবনার সময় আসে না। তখন কবে ভাবনা আসবে, এই প্রশ্ন তোলাটাকেও স্রেফ বিলাসিতাই মনে হয়।