বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেকটাই ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব মোহাম্মদ আশরাফুলের। নিজের প্রতিভা আর ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শনে হয়ে ওঠেন মস্তবড় সুপারস্টার, বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম নক্ষত্র বনে যান তিনি। তবে নক্ষত্র তো আর সবসময় আলো দেয় না, দিনের আলোতে রঙহীন তাদের বৈশিষ্ট্য। আশরাফুলের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হলো না। জীবন নৌকায় অনেক চড়াই-উতরাই পার করা এই তারকার ৩৮তম জন্মদিন আজ।

১৯৮৪ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন আশরাফুল। জন্মের পর থেকে ঢাকায় বেড়ে উঠা এক সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আশারফুল’ বনে যাওয়া এই ক্রিকেটারের। বর্তমানে থাকেন বনশ্রীতে। এবারের জন্মদিনটা সেখানেই পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন তিনি। কিন্তু আসন্ন ঈদুল আযহা একাই করতে হবে আশরাফুলকে। মাইনর কাউন্টির বাকি অংশ খেলতে কাল শুক্রবার ইংল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন।

৩৮তম জন্মদিনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আশরাফুল বলছিলেন, ‘না তেমন কোন পরিকল্পনা এবার নেই। আগামীকাল সকালে ফ্লাইট, চলে যেতে হবে। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আরও পড়ুন >> কাউন্টি লিগে ৩২ চারে আশরাফুলের ১৮২!

দেশ ছাড়ার আগে জন্মদিনে ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীর সঙ্গে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও হচ্ছে না আশরাফুলের। রাস্তায় এখানে সেখানে কোরবানির পশুর হাটের জন্য নিজ বাড়ি থেকে ব্যক্তিগত গাড়িটি বের করতে পারছেন না তিনি। 

আশরাফুল এবার মাইনর কাউন্টিতে লানিংটন পার্কে নাম লিখিয়ে ব্যাট হাতে দারুণ মৌসুম কাটাচ্ছেন। চার মাসের চুক্তিতে দলটির হয়ে খেলবেন তিনি। মাঝে খেলা না থাকায় কিছুদিন আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ছুটি শেষে বাকি অর্ধেক টুর্নামেন্ট খেলতে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার জন্মদিনেও বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে স্পোর্টস শো করে। 

আগামীকাল ইংল্যান্ড যাত্রা তার। এবারের ঈদটা দেশের বাইরে পরিবার ছাড়া একাই করবেন বলে জানালেন, ‘এবার দেশের বাইরে ঈদ হচ্ছে। পরিবারের সবাই দেশে থাকবে, আমি ইংল্যান্ডে। ওদের আগামী মাসে নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে, ইনশাআল্লাহ্‌।’

আরও পড়ুন >> ঈদের নাটকে মোহাম্মদ আশরাফুল

স্বপ্নের মতো ক্যারিয়ার শুরু করা আশরাফুল জাগিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আশার ফুলের প্রদীপ। তবে ক্যারিয়ারের নৌকা যখন মাঝ সমুদ্রে, তখনই বৈঠা হারিয়ে বসেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে মুক্ত হয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছেন আশরাফুল। ৩৮ বছর বয়সেও দিব্বি খেলে যাচ্ছেন তিনি। এখনো স্বপ্ন দেখেন আবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপানোর।

জাতীয় দলের হয়ে আশরাফুল ৬১টি টেস্ট, ১৭৭টি ওয়ানডে ও ২৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টেস্টে ৬ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফসেঞ্চুরিসহ ২ হাজার ৭৩৭ রান, ওয়ানডেতে ৩ সেঞ্চুরি ও ২০টি হাফসেঞ্চুরিসহ ৩ হাজার ৪৬৮ এবং টি-টোয়েন্টিতে ২টি হাফসেঞ্চুরিসহ ৪৫০ রান আছে তার নামের পাশে। এ ছাড়া বল হাতে টেস্টে ২১, ওয়ানডেতে ১৮ এবং টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেট নিয়েছেন আশরাফুল।

এক নজরে ক্রিকেটার আশরাফুলের সংক্ষিপ্ত জীবনী- 

২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আশরাফুল কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরির করার রেকর্ড করেন। সেই বছরই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আশরাফুলের ওয়ানডে অভিষেক হয়। ২০০৫ সালের ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে আশরাফুল ১০০ রান করেন।

২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ২৪ গড়ে ২১৬ রান করে আশরাফুল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নায়কোচিত ইনিংস উপহার দেন অ্যাশ। একই বছর শাহরিয়ার নাফিসের স্থলে দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজের পর তাকে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আশরাফুলের অভিষেক হয় ২০০৭ সালে।

আরও পড়ুন >> ৬ দিন রান্না নেই ঘরে, ক্রিকেটে সান্ত্বনা খুঁজছেন তারা

আশরাফুলই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম অধিনায়ক। ২০০৯ সালে ভারতের আইপিএল টুর্নামেন্টে মু্ম্বাই ইন্ডিয়ানসের পক্ষে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেন। বিপিএলে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান আশরাফুল।

২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৯৪ রান করেন আশরাফুল। যা ছিল সে সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্টে সর্বোচ্চ রান। অবশ্য ওই টেস্টে মুশফিক প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। এরপর ফিক্সিং কান্ডে জড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে আবার ক্রিকেটকেই ফের জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছেন।

টিআইএস/এটি