টেস্ট ক্রিকেট ইউ বিউটি! ক্রাইস্টচার্চে রোমাঞ্চকর কোনো চলচ্চিত্রের শেষ মুহূর্তের ক্লাইম্যাক্স চলছিল যেন। দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ানো সিরিজের প্রথম টেস্টে জিততে শেষ ২ বলে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মোটে ১ রান। যা ডালভাতই হওয়ার কথা। তাছাড়া অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে দলকে এগিয়ে নেওয়া উইলিয়ামসন তখন স্ট্রাইকে। কিন্তু এমন ম্যাচেও চূড়ান্ত নাটকীয়তা। আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সারে বলের নাগাল পেলেন না। ম্যাচ গড়াল শেষ বলে।

এবার আরেকটি বাউন্সার। পুল করার চেষ্টায় আবারও ব্যাটে-বলে হলো না। কিন্তু এতদূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসা ম্যাচে শেষ হাসি হাসতে রান তো নিতেই হবে! নন-স্ট্রাইক থেকে ছুটলেন নিল ওয়াগনার। কিপার নিরোশান ডিকওয়ালা বল ধরে গ্লাভস হাতেই থ্রো করলেন। স্টাম্পে লাগলেই আউট, কিন্তু তিনি মিস করে গেলেন। ক্রিজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা আসিথা পেলেন বল। দ্রুত ধরেই তিনি থ্রো করলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে। স্টাম্পে লাগাতেও পারলেন। কিন্তু উইলিয়ামসন ততক্ষণে বিপদসীমা পেরিয়ে গেলেন, পৌঁছে গেলেন ক্রিজে। ব্যস! অবিশ্বাস্য এক জয়ের সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব। যে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক কেন উইলিয়ামসন।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দু'দিনে ম্যাচের রাশ ছিল শ্রীলঙ্কার হাতে। তবে তৃতীয় দিন থেকে শ্রীলঙ্কার রাশ আলগা হতে থাকে। চতুর্থ দিনের শেষে ম্যাচের পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল যেখান থেকে দু'দলের যে কেউই ম্যাচ জিততে পারত। যদিও ঘরের মাঠে খেলা বলেই কিছুটা এগিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড। শেষমেশ প্রকৃতির বাধা সত্ত্বেও শেষ দিনে বাজিমাত করেন উইলিয়ামসনরা। শেষ দিনে বৃষ্টি বাধ সাধায় মনে করা হচ্ছিল বুঝি নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট অমিমাংসিতই থেকে যাবে। তবে হিসাবটা বদলে দেয় নিউজিল্যান্ড। তারা কার্যত ওয়ানডে ক্রিকেটের ঢংয়ে রান তুলে ম্য়াচ নিজেদের করে নেয়। 

ক্রাইস্টচার্চে শ্রীলঙ্কার ৩৫৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৭৩ রান তোলে। প্রথম ইনিংসের নিরিখে ১৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করতে নামে লঙ্কানরা। অ্যাঞ্জেলো ম্য়াথিউসের ১১৫ রানে ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বীপরাষ্ট্রটি ৩০২ রান তোলে। আর তাতে নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৮৫ রানের। চতুর্থ দিন শেষে কিউইরা তাদের শেষ ইনিংসে তোলে ১ উইকেটে ২৮ রান। সুতরাং, শেষ দিনে জয়ের জন্য ৯ উইকেটে ২৫৭ রান তুলতে হতো স্বাগতিকদের।

তবে বৃষ্টির জন্য শেষ দিনের প্রথম সেশনের খেলা ভেস্তে যায়। দ্বিতীয় সেশনে খেলা শুরু হলে জয়ের জন্য ৫৩ ওভার হাতে ছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে। শেষমেশ ম্যাচের একেবারে শেষ বলে জয় নিশ্চিত করে তারা। অবশ্য শেষ বলের আগেও নাটক কম হয়নি। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল মোটে ২০ রান, তখনও নিউজিল্যান্ডের উইকেট ছিল ৫টি। কিন্তু পরপর দুই ওভারে তারা হারায় ২ উইকেট, রান আসে ১২। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮ রান।

প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল নেন উইলিয়ামসন ও ম্যাট হেনরি। তৃতীয় বলে রান আউট হয়ে যান হেনরি। ৩ বলে যখন প্রয়োজন ৫ রান, সীমানায় ছড়িয়ে প্রায় সব ফিল্ডার, অসাধারণ এক শটে দুই ফিল্ডারের মাঝ দিয়ে চার মারেন উইলিয়ামসন। সমীকরণ চলে আসে নাগালে। কিন্তু পঞ্চম বলে তিনি পারেনি বলে ব্যাট ছোঁয়াতে। এরপর সেই শেষ বলের নাটকীয়তা।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে হেরে যাওয়ায় টেস্ট চ্যাম্পিনশিপের ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গেছে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৫৫ 

নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৭৩ 

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩০৫

নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৭০ ওভারে  ২৮৫/৮ (লাথাম ২৫, কনওয়ে ৫, উইলিয়ামসন ১২১*, নিকোলস ২০, মিচেল ৮১, ব্লান্ডেল ৩, ব্রেসওয়েল ১০, সাউদি ১, হেনরি ৪, ওয়াগনার ০*; রাজিথা ১৭-৫-৬১-১, আসিথা ১৯-৪-৬৩-৩, জয়াসুরিয়া ১৯-১-৯২-২, কুমারা ১৫-৩-৬১-১)। 

ফল: নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী। 

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ড্যারিল মিচেল (১০২ ও ৮১)।

এফআই