অর্ধশতকের পথে তামিম ইকবাল/ইএসপিএন ক্রিকইনফো

এ এক অনন্য অর্জনই বৈকি? প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে পঞ্চাশের পঞ্চাশ। তবু ইনিংস শেষ করে যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, কিছুটা আক্ষেপও কি আঁকড়ে ধরবে না তামিম ইকবালকে?

নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন তামিম। জিমি নিশাম যেভাবে দারুণ এক ‘শটে’ লক্ষ্যে আঘাতটা করলেন, সেটা কি মেসি-রোনালদোও করতে পারতেন? নিউজিল্যান্ড পেসার যখন বলে লাথিটা দিচ্ছেন, পাশ থেকে দেখা যাচ্ছিল কেবল একটা স্ট্যাম্প। নিশামের ‘কিক’টা কিনা আঘাত করল সেটাতেই! এর পরেও একবার এমন চেষ্টা করেছেন কিউই পেসার। মোহাম্মদ মিঠুন যখন ডেঞ্জার এন্ডে, বল যায়নি স্ট্যাম্পের ধারেকাছেও। গেল একবার, সেবারই ধুলোয় লুটাল ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির আশা। বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের আশাও কি?

তবে তার আগে যা করেছেন তাও কম কিসে? ইনিংসের শুরুতে বলেছিলেন, উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। লিটন দাস আর সৌম্য সরকার যে উইকেট হারিয়েছেন, তাতে ভালো বোলিংয়ের চেয়ে নিজেদের দোষই বেশি। লিটন ইনিংসের শুরুতেই ম্যাট হেনরির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়েছেন শর্ট মিড উইকেটে থাকা উইল ইয়ংকে। আর সৌম্য আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ডাউন দ্য উইকেটে আসার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারেননি, মিচেল স্যান্টনারের বলে স্ট্যাম্পড হয়েছেন টম ল্যাথামের হাতে।

তবে তামিম ছিলেন শুরু থেকেই সাবলীল। ‘ভালো ব্যাটিং উইকেটে’ যেমনটা হওয়া উচিত। শুরুর দিকের ১৫ ওভারকে ম্যাচ শুরুর আগেই বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিলেন তামিম। সে ১৫ ওভার বেশ দেখেশুনে পার করেছেন। দুবার অবশ্য ‘আউট’ হয়েছিলেন। প্রথমবার কট বিহাইন্ড হলেও বেঁচে যান সিদ্ধান্ত রিভিউ করে। পরেরবার ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন কাইল জেমিসনকে। তবে আম্পায়ার রিভিউতে দেখা যায় বলটা ধরার পর তা ছুঁয়েছিল মাটি, সে যাত্রায়ও রক্ষা পান তিনি। 

এরপর আর কোনো ভুলচুক নয়। ৮৫ বলে ছুঁয়ে ফেলেন ক্যারিয়ারের ৫০তম ওয়ানডে অর্ধশতক, এর আগে যে কীর্তি নেই আর কোনো বাংলাদেশির। তার কাছাকাছি আছেন কেবল সাকিব আল হাসান (৪৮) আর মুশফিকুর রহিম (৩৯)। 

এ পঞ্চাশের পথে বাংলাদেশকে লড়াকু সংগ্রহের মহাগুরুত্বপূর্ণ ভিতটা গড়ে দিয়েছেন তামিম। শুরুতে লিটনের উইকেট হারানোর পর সৌম্যকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলেছেন। এরপর সৌম্য সরকারের বিদায় আর নিজের অর্ধশতকের পর রানের চাকায় গতি আনতেও শুরু করেছিলেন। অর্ধশতক ছোঁয়ার পরের ৩৩ বলে করেছেন ২৮। আরও কিছুক্ষণ টিকে গেলে যে তা আরও সচল হতো, তা বলাই বাহুল্য। সেটা হলে ‘লড়াকু’ থেকে ‘বড়’ সংগ্রহও হতে পারতো বাংলাদেশের। তবে সেটা হয়নি দুর্ভাগ্যের খড়গে পড়ে, কিংবা নিশামের অভাবনীয় ঝলকে। তাই অনন্য এক অর্জনের পরও কিছুটা আক্ষেপও সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের।