ছবি: সংগৃহীত

 সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ব্যাট হাতে ৪৮০ রান করেছিলেন শাহাদাত হোসেন দিপু। এরপর ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে ২ টেস্টে করেছেন ১৪৬ রান। যেখানে দ্বিতীয় টেস্টে উভয় ইনিংসেই অর্ধ-শতকের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। এমন পারফরম্যান্সের পর এবার জাতীয় দলে ডাক পেলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। 

২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন দিপু। সেই বিশ্বকাপে দল শিরোপা জিতলেও খুব একটা লাইম-লাইটে আসার সুযোগ পাননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। তবে থেমে থাকেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। ব্যাট হাতে পারফর্ম করে আলোচনায় এসেছেন বহুবার। চোখ এড়াননি নির্বাচকদেরও। 

চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েই ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নিজের অনুভূতি ভাগাভাগি করেছেন, 'আসলে সবারই তো ইচ্ছা থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। সবারই ইচ্ছা থাকে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর। আমারও একই ইচ্ছা ছিল। এখন আনন্দ লাগছে। চেষ্টা করব, নিজের সর্বোচ্চটা দিতে।'

২০১০ সালে ক্যান্সারের কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন দিপুর বাবা। তবে এই আনন্দের সময়টা দিপু ভাগাভগি করতে পেরেছেন তার মায়ের সঙ্গে, 'পরিবার থেকে আসলে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে, খুশি হয়েছে। প্রথমবার যেহেতু জাতীয় দলের ডাক পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ সবাই খুশি। আম্মু অনেক বেশি খুশি হয়েছে, এছাড়া ভাইয়া। আব্বু থাকলে হয়তো তিনিই বেশি খুশি হতেন।'  

২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জয়ের দলটার নির্বাচক প্যানেলের অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন হান্নান সরকার। শিষ্যের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় তিনিও খুশি। ঢাকা পোস্টকে যুব দলের এই নির্বাচক বলেন, 'দিপু তো মনে হয়, গত বছরও ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো খেলেছে। এ বছরও ভালো খেলেছে। সে পরিকল্পনার মধ্যেই ছিল। সে কিন্তু 'এ' দলের সাথে ছিল, প্রতিনিয়ত ম্যাচ খেলেছে। সেখান থেকে এ বছর যেটা হলো, সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে দেখলাম। বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসেই ফিফটি করেছিল।'

'লঙ্গার ভার্সনের জন্য যে মুড টা দরকার, সেই জিনিসটা তার আসলে খুব ভালো ছিল, আগে থেকেই ছিল। অনুর্ধ্ব-১৯ এ দিপু পাঁচে খেলতো। তাওহীদ চারে খেলত। ওই পজিশনে ব্যাট করে কিন্তু সে অভ্যস্ত। ওই পজিশনের জন্য সে সবথেকে ভালো খেলোয়াড়।'-আরও যোগ করেন হান্নান। 

ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে আছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অন্যদিকে শুরুর অপেক্ষায় দিপু। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সফল ব্যাটার মাহমুদউল্লাহর ছায়া দিপুর মধ্যে দেখছেন হান্নান। তিনি বলেন, 'সত্যি কথা বলতে, আমি কিছু খেলোয়াড়ের মধ্যে কিছু খেলোয়াড়ের ছায়া দেখি। দিপুর মধ্যে আমি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছায়া দেখতাম। আর তাহীদের মধ্যে মুশফিকের। এগুলো কিন্তু খেলোয়াড়রা জানে যে, তাদেরকে এভাবে আমি অনুপ্রাণিত করতাম। আমার মনে হয়, তাওহীদ যেভাবে খেলছে এখন চার/পাঁচ নম্বর পজিশনে, দিপুও যোগ্য ছিল। আরেকটু পরে হলেও আমি অবাক হতাম না। নির্বাচকরা ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।'

হান্নানের সঙ্গে দিপুসহ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের একাংশ

 

হান্নানের বিশ্বাস পাইপলাইনে যে সব ক্রিকেটার রয়েছে তাদের মধ্যে সেরাদের একজন দিপু, 'আমার মনে হয় তাকে ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে নেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়ে বা অন্যান্য সমস্যায় পড়ে তখন তাকে কাজে লাগাবে। ড্রেসিংরুম শেয়ার করার ব্যাপার বা এখন থেকে তৈরী হওয়ার যে ব্যাপার সেটার জন্য এই টেস্টে তাকে রাখা। এখনও আমার মনে হয় পাইপলাইনে যে খেলোয়াড়েরা রয়েছে ,তাদের মধ্যে সেরাদের একজন দিপু। তার জন্য ভালো একটা সুযোগ এটা।'  

অনেকেই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে আবার দ্রুততম সময়েই হারিয়ে যায়। তবে দিপুর সামনে লম্বা ক্যারিয়ার দেখছেন হান্নান। তিনি বলেন, 'দিপুকে খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি, তাকে নিয়ে আমার ভয় নেই। আমি আশাবাদী, সে যে ধরণের ক্রিকেটার এবং নিজের কাজটা যেভাবে করে তাকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলতেই পারি।'

এসএইচ/এইচজেএস