ভারতের বিপক্ষে গত বছর ঢাকা টেস্টে সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। এরপর থেকেই তিনি জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। পরবর্তীতে টাইগারদের হয়ে তিন ফরম্যাটের দল থেকেই সোহান বাদ পড়ে যান। 

বর্তমানে আফগানিস্তান সিরিজকে সামনে রেখে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে চলছে টাইগারদের অনুশীলন ক্যাম্প। যদিও অঘোষিত সেই ২৬ সদস্যের দলে অনুশীলন করতে দেখা যায়নি সোহানকে। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ডিপিএল, অধিনায়কত্ব এবং দলের তিন ফরম্যাট থেকে বাদ পড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন সোহান। পাঠকদের উদ্দেশে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো...

আরও পড়ুন >> বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ দেবে ইংল্যান্ড!

সর্বশেষ ডিপিএলে শিরোপা জিততে পারেননি, কোনো আক্ষেপ রয়েছে কিনা?
সোহান : না, আমার কাছে মনে হয় আমরা যেভাবে খেলেছি আক্ষেপ থাকার কথা না। টুর্নামেন্টজুড়ে সবাই খুব ভালো খেলেছে। নিজেদের জায়গা থেকে সেরাটা দিয়েছে সবাই। টিমটাও কিন্তু জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের নিয়ে ছিল না। যদিও আবাহনী প্রতিবারই ভালো দল গঠন করে। নরমালি আমাদের দলের ফোকাস থাকে একটা দল হিসেবে খেলা। সেটাই চেষ্টা করেছি, আমার মনে হয় সবাই তার জায়গা থেকে শতভাগ দিয়ে খেলেছে।

ডিপিএলের বেশকিছু ম্যাচে বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন, স্ট্রাইকরেট বাড়ানোয় মনোযোগী ছিলেন কিনা?
সোহান : আমার কাছে স্ট্রাইকরেট ম্যাটার করে না। দল আমার কাছে কি চায়, যখন যে পরিস্থিতি থাকে এবং দল যেটা ডিমান্ড করে সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি। আমি সবসময় স্ট্রাইকরেট বা রানের চেয়ে দল কি চাচ্ছে এবং পরিস্থিতি দেখি। আমি মিডল-অর্ডারে ব্যাট করি, কিন্তু অনেক সময় জাতীয় দলে লোয়ার মিডল অর্ডারেও নামা লাগে। সেই সময় কিন্তু রান বা স্ট্রাইকরেট দিয়ে বিচার করা যাবে না। দল যা ডিমান্ড করে, পরিস্থিতি অনুযায়ী ওটাই করার চেষ্টা করেছি।

অধিনায়কত্ব কেমন অনুভব করেন?
সোহান : উপভোগ করার চেয়ে একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে যখন যে দায়িত্ব আসে, সততার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার শতভাগ চেষ্টা করি। সে কারণে এটি আলাদা কিছু নয়, নতুন কিছুও না আমার কাছে। এখানে একই মন্তব্য আমার- যে পরিস্থিতি থাকে, সেটা অনুসারে সবসময় নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি।

সোহান বলছেন, আমার কাছে মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমি এরকম জায়গায় যখনই নেমেছি অনেকগুলো ইনিংস আছে যে ১০ বলে ২০ করেছি। ১২ বলে ২০-২৫ করেছি। এগুলো হয়তো অনেকের চোখে পড়বে না। কারণ একজন ওপেনারের যেমন রান থাকবে, একটা মিডল বা লোয়ার অর্ডার ব্যাটারের এরকমও হতে পারে যে ৫ বলে ১০ রান। এটাও অনেক বেশি ভ্যালু ক্রিয়েট করে। যেটা নরমালি বুঝবে না অনেকে। কিন্তু যেটা বললাম টি-টোয়েন্টিতে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে, সে কারণে উন্নতির জায়গাও রয়েছে।

গেল বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আশানুরূপ রান পাননি, এর কারণ কী মনে করেন?
সোহান : ব্যাটে রান পাইনি তা নয়। আমি যে জায়গায় ব্যাটিং করি সেখানে ১৫-২০ রান অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মানুষ অনেক সময় চিন্তা করে মাত্র ১৫-২০ রান করতেছি। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করি, এখানে স্ট্রাইকরেটটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ থাকে। এখানে এমন না যে আপনি প্রতিদিনই ভালো খেলবেন। যেখানে প্রথম বল থেকেই মারা লাগতে পারে, কোনোদিন ৫ আবার কোনো দিন ১০ বল পাচ্ছেন। হয়তো বলতে পারেন আরও উন্নতির জায়গা আছে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় দলের চাহিদা অনুযায়ী যা করা দরকার সেটা আমি চেষ্টা করেছি। ক্রিজে গিয়েই স্ট্রাইক-রোটেট কিংবা বিগ শট খেলার বিষয়ে আমাদের একটু সীমাবদ্ধতা আছে। এটা নিয়ে কাজ করারও জায়গা আছে। কিন্তু রান করিনি, এটা নিয়ে আমি খুব একটা বলতে চাচ্ছি না। আমার কাছে মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমি এরকম জায়গায় যখনই নেমেছি অনেকগুলো ইনিংস আছে যে ১০ বলে ২০ করেছি। ১২ বলে ২০-২৫ করেছি। এগুলো হয়তো অনেকের চোখে পড়বে না। কারণ একজন ওপেনারের যেমন রান থাকবে, একটা মিডল বা লোয়ার অর্ডার ব্যাটারের এরকমও হতে পারে যে ৫ বলে ১০ রান। এটাও অনেক বেশি ভ্যালু ক্রিয়েট করে। যেটা নরমালি বুঝবে না অনেকে। কিন্তু যেটা বললাম টি-টোয়েন্টিতে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে, সে কারণে উন্নতির জায়গাও রয়েছে।

হুট করেই ৩ ফরম্যাট থেকেই দলের বাইরে, কোনো উত্তর খুঁজে পেয়েছেন?
সোহান : না, উত্তর খোঁজার কিছু নেই। এখন পারফরম্যান্স করছি আলহামদুলিল্লাহ, প্রিমিয়ার লিগটা ভালো গেছে। সামনে যে খেলা আছে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ। আমি আশা রাখছি আবারও ফিরে আসব আল্লাহর রহমতে। আমার ওয়ানডে রেকর্ড ভালো, নিজেকে পরিণত করে আবারও ব্যাক করব।

আরও পড়ুন >> কোচিংয়ের প্রস্তাব দেবে বিসিবি, অপেক্ষায় আশরাফুল

৬ মাস দলের বাইরে আছেন, ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে কী করছেন?
সোহান : দলে ঢুকতে সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। ক্রিকেটটা একইভাবে চলতে থাকে না, এটা আপডেট হয়। সে সঙ্গে আমাদেরও যে দুর্বলতা আছে, এগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করার অপশন রয়েছে।

আফগান সিরিজের ওয়ানডে কিংবা টি টোয়েন্টি দলে নিজেকে দেখছেন কিনা! আর সুযোগ পেলে লক্ষ্য কী?
সোহান : না। তবে অবশ্যই জাতীয় দলে আবার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিতে চাই। ওইটা নিয়েই আসলে কাজ করছি।

জাতীয় দলের বাইরে থাকাবস্থায় কোচ কিংবা কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার থেকে কোনো বার্তা পেয়েছেন কিনা? বিশেষ করে হাথুরু...
সোহান : কথা তো সাধারণত হয়ই। তবে সেরকম কোনো কিছু না, যেহেতু সবাই একই প্রফেশনে আছি নরমাল আলোচনাই হয়। হাথুরুর সঙ্গে যখন ক্যাম্পে ছিলাম তখন কথা হয়েছে। আলাদা করে আসলে ওই ধরনের অনেক কথা-ই তো হয়, তবে তা ওরকম বলার মতো কিছু নয়।

বিশ্বকাপে ভালো করতে তামিম ইকবাল এবং মুস্তাফিজুর রহমানের পারফর্ম কতটা গুরুত্বপূর্ণ? 
সোহান : আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কিন্তু একইরকম পারফর্ম পাবেন না। এই জিনিসটা আমরা অনেক সময় ভুল করি, ভুল জাজমেন্ট করি। কারণ সবাই যদি ৫০ বা ১০০ করে তাহলে তো রান আমাদের ৭০০ পার হয়ে যাবে তাই না। একেক জনের রোল একেক রকম থাকে। আমার কাছে মনে হয় যে যার রোল থেকে চেষ্টা করবে, নিজের শতভাগ দিয়ে দলের জন্য যাতে কনট্রিবিউট করতে পারে।

২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু ভাবছেন?
সোহান : ভবিষ্যত নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না, নিজের যে প্রসেসগুলো আছে সেগুলো ফলো করার চেষ্টা করছি।

এসএইচ/এএইচএস