মানকাড আর শেষ ওভারের রোমাঞ্চ ছাপিয়ে পাকিস্তানের জয়
ফ্রেঞ্চ ভাষায় ‘দেজা ভ্যু’ নামে একটি শব্দ আছে। যেটা পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষাতেও এসেছে। এর অর্থ, এমন কোন ঘটনা যা পূর্বেও ঘটেছে বলে মনে ধারণা জন্মায়। বাস্তবে অনেকেই এমন দেজা ভ্যু এর কবলে পড়ে থাকেন নিয়মিত। ঠিক যেমনটা গতকাল রাতে ঘটলো পাকিস্তানের নাসিম শাহ আর আফগানিস্তানের ফজল হক ফারুকির মাঝে।
গত বছরের এশিয়া কাপ। শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ১১ রান। ফজল হক ফারুকির দুই বলে দুই ছয় মেরে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছিলেন নাসিম শাহ। গতকাল দুই দলের ওয়ানডে ম্যাচেও সমীকরণ ছিল ৬ বলে ১১। এবারেও ফারুকির ওভারে সেই নাসিমই এনে দিয়েছেন জয়। এক উইকেটের এই জয়ে সিরিজটাও নিশ্চিত করেছে বাবর আজমের দল।
বিজ্ঞাপন
— Pakistan Cricket (@TheRealPCB) August 24, 2023
শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে ব্যাটে রান আসেনি কারোরই। আফগানিস্তান তো আউট হয়েছে মাত্র ৫৯ রানেই। এদিন অবশ্য হাই স্কোরিং ম্যাচই দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। আফগানিস্তান করেছে বরাবর ৩০০ রান। ক্রিকেটের বর্তমানে এই স্কোর মানসিকভাবে এগিয়ে রাখে যেকোন দলকেই। আফগানদেরও রেখেছিল। কিন্তু নাসিম শাহর সেই শেষ ওভারের ব্যাটিংটাই কাল হয়ে গেল তাদের জন্য।
আগের দিন যাচ্ছেতাই ব্যাটিং পারফর্মের পর এদিন আফগান ওপেনাররা করেছেন মন্থর শুরু। ওভারপ্রতি ৫ এর নিচে রান করেছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দুজনের ইনিংস এতই মন্থর, প্রথম ১০ ওভারে এসেছে মোটে ৪৮ রান। আর ২১ ওভারে করেছেন ৯১। এরপরেই যেন ঘুম ভাঙলো তাদের।
বিজ্ঞাপন
গুরবাজ আর ইব্রাহিম খেললেন চিরচেনা মারকুটে ইনিংস। শ্রীলঙ্কার মাঠে বা টিভিপর্দায় দর্শকদের মোহিত করে রেখেছেন। দুজন খেলেছেন আরও ২০ ওভার। এইসময় রান এসেছে ওভারপ্রতি ৭ এর কাছাকাছি। ৩৯.৫ ওভারে যখন ইব্রাহিম আউট হয়েছেন তখন দলীয় স্কোর ২২৭। ব্যক্তিগত স্কোর ৮০। খেলেছেন ১০১ বল।
তবে অন্যপাশে গুরবাজ তখনও টিকে ছিলেন। মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে করেছেন ২৯ রানের জুটি। দলীয় ২৫৬ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে তার নিজের স্কোর ১৫১। আফগানিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর এটি। প্রথমটাও অবশ্য তারই করা (১৬২)।
ইব্রাহিম ও গুরবাজের পর আর কেউ খুব বড় কোনো ইনিংস খেলতে না পারলেও ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০০ রানের সাইকোলজিক্যাল মার্কে পৌঁছে যায় আফগানরা। ওয়ানডেতে এ নিয়ে সপ্তমবার ৩০০ বা তার বেশি রানের স্কোর গড়ল দেশটি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান পেয়েছে ভালো শুরু। ইমাম-উল-হক খেলেছেন স্ট্রাইক রোটেট করে, অন্যপ্রান্তে ফখর জামান ছিলেন আগ্রাসী। দুজন মিলে পাওয়ারপ্লে প্রায় শেষই করেছিলেন। নবম ওভারে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন ৫২ রানের জুটি গড়ে। ৩৪ বলে ৩০ করে আউট হন ফখর।
এরপর আফগান বোলারদের শাসন করেছেন বাবর আজম আর ইমাম। দুজনের ব্যাট থেকে এসেছে ১১৮ রানের জুটি। দুজনেই পঞ্চাশের কোটা পেরিয়েছেন। বাবর অবশ্য ফিরেছেন ফিফটির পরেই। ৬৬ বলে ৫৩ রানের কার্যকরী ইনিংস থেমেছে ফারুকির বলে।
ম্যাচের পরের দৃশ্যে শুধুই আফগান বোলাররা। ৪১ রানের মাথায় আউট হয়েছেন ৫ জন ব্যাটার। পাকিস্তানের কাছে জয় তখন দূরের বাতিঘর। ম্যান ইন গ্রিনরা এরপর ম্যাচে ফিরেছে অলরাউন্ডার শাদাব খানের কল্যাণে। তার ৩৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংসটা দলকে নিয়ে যায় শেষ ওভার পর্যন্ত।
— Zaibi_007 (@Szofficial5) August 24, 2023
শেষ ওভারে দরকার ১১ রান। প্রথম বলেই অতি উৎসাহী শাদাব ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান। মানকাডিং করে তাকে সাজঘরে পাঠান ফারুকি। কিন্তু ওপাশে যখন নাসিম শাহ, তখন পাকিস্তান কিছুটা হলেও আশা রেখেছিল ভাগ্যের উপর। নাসিম তার কাজ করেছেন ঠিকঠাক। দুই চার দিয়ে ১ বল বাকি থাকতেই শেষ করেছেন ম্যাচ। পাকিস্তানের জয় এসেছে ১ উইকেটের ব্যবধানে।
জেএ