বৃষ্টির বাধায় মাত্র ৫৯ ওভারেই শেষ হয়ে গেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্টের প্রথমদিন। নইলে একদিনেই অলআউটের লজ্জায় পড়তে হতো ভারতকে। কাগিসো রাবাদার আগুনে বোলিংয়ে ২০৮ রান তুলতেই তারা ৮ উইকেট হারিয়েছে। পাঁচ উইকেট নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) সপ্তম দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন। এমন তোপের সামনে ভারতের হয়ে কেবল প্রতিরোধ দেখাতে পেরেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল। তিনি ব্যক্তিগত ৭০ রানে অপরাজিত আছেন।

বক্সিং ডেতে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হতেও বিলম্ব হয় ৩০ মিনিট। ভেজা উইকেটের সুবিধা ভালোভাবেই আদায় করে নিয়েছেন রাবাদা, মার্কো জানসেন ও নান্দ্রে বার্গাররা। এর আগে টস জিতে শুরুতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ব্যাটে নামা ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ছিলেন। রাবাদা ও জানসেনের সুইংয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। চাপ কমাতে শর্ট বল পেয়ে পুল শট খেলতে যান ভারত অধিনায়ক রোহিত। কিন্তু ব্যক্তিগত ৫ এবং দলীয় ১৩ রানেই তিনি ‘আত্মাহুতি’ দিয়ে বসেন।

নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা জয়সওয়াল কয়েকটি ভাল শট খেললেও তাকে তেমন সাবলীল দেখাচ্ছিল না। বিশেষ করে বাঁ-হাতি বার্গারের সামনে নড়বড়ে ছিলেন তিনি। তার সুইং বুঝতে না পেরে ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় খোঁচা মেরে বসেন জয়সওয়াল। ফলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ আউট ২১ বছর বয়সী এই ওপেনারর। এক রানের ব্যবধানে তিন নম্বরে নামা শুভমান গিলকেও ফেরান বার্গার। মাত্র ২ রানেই তার লেগ স্টাম্পের বাইরের বল গ্লাভসে লাগিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে বন্দি শুভমান। অভিষেক টেস্টেই ম্যাচের শুরুর নায়ক বার্গার।

সফরকারীরা মাত্র ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বেশ চাপে। সেই চাপ কিছুটা হলেও কমে আসে অভিজ্ঞ বিরাট কোহলির সঙ্গে তরুণ শ্রেয়াস আইয়ারের জুটিতে। তাদের ব্যাটিংয়ে ভারতীয় স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৬৮ রান। যদিও শুরুতে প্রোটিয়া ফিল্ডারদের হাত থেকে দুজনেরই ক্যাচ ফসকে যায়। যার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন কোহলি-আইয়ার। তবে অহেতুক ঝুঁকি না নিয়ে তারা দেখেশুনে বাউন্ডারি ও সিঙ্গেল বের করার চেষ্টা চালান। ফলে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার কিছুটা স্বস্তিতে ছিল ভারত। কিন্তু সেখান থেকে ফিরতেই রাবাদার জোড়া আঘাত। 

আইয়ারকে হঠাৎই নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোকা বানিয়ে বোল্ড করে দেন এই পেসার। থিতু হয়েও ডানহাতি ব্যাটার ফেরেন ৩১ রানে। একটু পরেই ফের রাবাদার শিকার কোহলি। ফুল লেংথের বল খেলতে গিয়ে ভারতীয় মাস্টার ব্যাটার আউটসাইড এডজ হয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন। তার আগে কোহলির ব্যাটে আসে ৩৮ রান। ব্যক্তিগতভাবে ৮ রান যোগ করতেই রাবাদার বলে ফেরেন অভিজ্ঞ স্পিন অলরাউন্ডার রবীচন্দ্রন অশ্বিনও। দলীয় ১২৬ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় ভারত।

এরপর সফরকারীদের ইনিংস মেরামতে লেগে পড়েন রাহুল ও শার্দুল ঠাকুর। দুজনের ব্যাটিংই ছিল সাবলীল। কয়েকটি চার মেরে চাপ কমান শার্দুল। সেই সুযোগে এই পেস অলরাউন্ডারের জন্য ফাঁদ পাতেন রাবাদা। আউটসাইট লেংথের ডেলিভারিতে শট খেলতে গিয়ে সোজা ডিন এলগারের হাতে ধরা ডানহাতি ব্যাটার। অবশ্য তার আগে হেলমেট ও হাতে একাধিকবার বলের আঘাতে কিছুটা মনোযোগ সরে যায় শার্দুলের। নিজের দিনে শার্দুলকে ফিরিয়ে ফাইফার পূর্ণ করেন ২৮ বছর বয়সী পেসার। যা টেস্ট ক্রিকেটে তার এক ইনিংসে ১৪তম পাঁচ উইকেট।

জানসেনের বলে ব্যক্তিগত ১ রানে ফেরেন জাসপ্রিত বুমরাহও। সেঞ্চুরিয়নে পেসারদের দাপটের দিনেও ব্যতিক্রম ছিলেন রাহুল। ১০৫ বলে অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংসে তিনি দারুণ সব স্ট্রোক খেলেছেন। ২ ছক্কা এবং ১০ চারে সাজানো ভারতের হয়ে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি। যেখানে দারুণ কয়েকটি পুল এবং হুক শট ছিল। তার সঙ্গে দিন শেষ হওয়ার আগে ক্রিজে ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। বৃষ্টির বাধায় দিন শেষ হওয়ার অনেক আগেই ম্যাচ গুটিয়ে আনতে হয়। যেখান থেকে কাল দ্বিতীয় দিন শুরু হবে।

প্রোটিয়াদের হয়ে পাঁচটি শিকার করেছেন রাবাদা। এছাড়া অভিষিক্ত বার্গার দুটি এবং জানসেন এক উইকেট শিকার করেছেন।

এএইচএস