ইচ্ছে পূরণের দিনে মুশফিক জানালেন লড়াইয়ে ফেরার অজানা গল্প
মুশফিক হাসান
ইনজুরি হয়তো শরীরটাকে আটকে রাখতে পেরেছিল, কিন্তু মনোবলকে নয়। কঠিন সময়ে তাই হার মানেননি, চুপচাপ লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। এখন যখন মাঠে ফিরেছেন, এটা শুধু একজন খেলোয়াড়ের ফিরে আসা নয়- এটা এক সংগ্রাম-লড়াকুর ফিরে আসা। বলছিলাম তরুণ পেসার মুশফিক হাসানের কথা।
এমন প্রত্যাবর্তন শেখায় যে সংকটের মাঝেও আশার আলো জ্বলে। দর্শকদের চাওয়া, মুশফিকের জীবনে এই ফেরা আরও দুর্দান্ত কিছু হবে। ২০২৩ সালের জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার জাতীয় দলে (টেস্ট ফরম্যাটে) ডাক পান পেসার মুশফিক হাসান। সেবার অবশ্য লাল সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়নি তরুণ এই পেসারের।
বিজ্ঞাপন
এরপর গেল বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও দলে ছিলেন মুশফিক। তবে ভাগ্য ভালো না থাকায় সিরিজ শুরুর আগেই ইনজুরির কবলে পড়ে দল থেকে ছিটকে যান। পরবর্তীতে জাতীয় দলের স্কোয়াডে আর দেখা যায়নি তাকে। ফলে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি তার। তবে নিয়মিত খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেট, পাশাপাশি ইনজুরির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।
বিজ্ঞাপন
এ কারণে সবশেষ বিপিএলের শুরুতে ছিলেন না মুশফিক, শেষদিকে যোগ দেন খুলনা টাইগার্সের স্কোয়াডে। সামর্থ্য অনুযায়ী জানান দেন নিজের প্রতিভার। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএলে) কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর ঊরুর ইনজুরিতে পড়েন মুশফিক। এরপরে মোহামেডানের জার্সিতে আর মাঠে ফেরা হয়নি তার।
মাঠের বাইরে থাকা এই পেসার নিয়মিত চোট পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালিয়ে আবারো ফিরেছেন জাতীয় দলের রাডারে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘এ’ দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন মুশফিক। ‘এ’ দলে সুযোগ পাওয়ার পর ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্যের কথা, পাশাপাশি চোটে আক্রান্ত সময়ের মন খারাপের কথা। একইসঙ্গে জানিয়েছেন তামিম ইকবাল-নাজমুল শান্তদের থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণার কথাও।
চোটে আক্রান্তের কথা জানিয়ে মুশফিক-
‘সব মিলিয়ে ১০ মাস ইনজুরিতে ছিলাম। গেল বছর মাঝামাঝি সময়ের পর, এরপর বিপিএলের আগে। পরে চারটা ম্যাচ খেললাম বিপিএলে। এরপরে আবার ইনজুরিতে পড়লাম, আবার চার মাস লেগে গেল। তার মধ্যে দুই মাস রিহ্যাব করলাম ভাল মতো। চিকিৎসকরা সবকিছু ভালো বলার পরে এই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলাম। তো এখানে এসে চেষ্টা করলাম, আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালো হলো। দুই ম্যাচে ৭ উইকেট পেলাম।’
ইনজুরির সময়ে খারাপ লাগা নিয়ে মুশফিক-
‘এদিক থেকে সবাই অনেক সাপোর্ট করতো, বিশেষ করে পরিবার। এছাড়া কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী, তারা অনেক সাপোর্ট করতো। মাঠের বাইরে যখন থাকতাম তখন ভাবতাম যে সবাই খেলতে পারছে, আমি খেলতে পারছি না। অবশ্যই অনেক খারাপ লাগতো। আমি রিহ্যাবটা ঠিকমতো করছি, এই জিনিসগুলো যদি ঠিকমতো না করতাম তাহলে আরও দেরি হতো। আর পেসারদের একটু বেশি ইনজুরি হয়, এখান থেকে কিভাবে বের হয়ে আসতে পারি এটা শিখেছি। ভবিষ্যতে হয়তো আবার ইনজুরিতে পড়তে পারি, সেখান থেকে রিকভার কিভাবে করব এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্যারিয়ারের শুরুতে ইনজুরি হওয়াতে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি যা ভবিষ্যতে কাজে দিবে।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দলে থাকায় ইচ্ছে পূরণ-
‘গত বছর যখন এইচপি দল অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছিল তখন আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি আসলে ইনজুরিতে পড়েছিলাম, খুব খারাপ লাগছিল। তখন আমার পায়ের সমস্যা হয়, আরো সময় লাগতেছিল মন খারাপ হচ্ছিল। এত বড় দেশে খেলা হচ্ছে সেটা আমি খেলতে পারছি না। পরে কিছুদিন পর জানতে পারি যে এই বছর আবার এ টিমের খেলা আছে। এরপর এটার প্ল্যান সেট করেছিলাম যে সবকিছু যদি ঠিক থাকে আমি আবার যেতে পারি অস্ট্রেলিয়াতে। আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারেন সুযোগ এসেছে আবার। মানুষের তো স্বপ্নের শেষ নেই আমার স্বপ্ন আরো অনেক বড়, এটা ইচ্ছা পূরণ কেবল। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে শিখতে চাই, যেটা ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।’
শান্তর যে কথায় মোটিভেটেড হন মুশফিক-
‘গত বছরে আমি জিমে রিহ্যাব করছিলাম। তো ওই সময় শান্ত ভাইও ছিল। তিনিও রিহ্যাব করছিলেন। তখন শান্ত ভাই বলছিল যে তুই একটু ভালো করে রিহ্যাব করিস। তাহলে তুই তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারবি। এরপর ভাই আমাকে বলেছিল যে এরকম বড় একটা টুর্নামেন্ট মিস করলি। যেটা কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারবি না। খুব মন খারাপ করেছিলেন আমার উপরে এটা নিয়ে। উনি চেয়েছিল যে আমি এই অস্ট্রেলিয়া সফরটা যেন করতে পারি। শান্ত ভাই সবসময় আমাকে মোটিভেট করতেন, উনি অনেক ভালো মানুষ। এ দলে ডাক পাওয়ার পরে গতকাল দেখা হয়েছে ভাই বলেছে ওয়েলকাম ব্যাক মুশফিক।’
বিপিএলের আগে তামিম ইকবালের পছন্দের তালিকায় ছিলেন মুশফিক-
‘গেল বছর বিপিএল শুরুর আগে আমি একদিন মিরপুরে বোলিং করছিলাম। এরপর তামিম ভাইয়ের সাথে দেখা। পরে তিনি ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল যে আমি কোন দলে আছি। তখন বলেছিলাম ইনজুরিতে আছি কোনো দলে নেই। তো ভাই বলেছিল যদি গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া যায় চিকিৎসকদের তাহলে উনাকে জানাতে। পরে তো আমার খেলার কথা ছিল না। ফলে তামিম ভাই আমাকে একটা ভয়েস মেসেজ দিয়েছিলেন ৫০ সেকেন্ডের। যেখানে অনেক অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেছিলেন। তো তামিম ভাইয়ের মতো ক্রিকেটার আমাকে পছন্দ করেছিল এটা অবশ্যই আমার জন্য ভালোলাগার, আমার খুব ভালো লেগেছিল। এরপরে তো বিপিএলে সুযোগ পেয়েছিলাম চারটা ম্যাচে ইনজুরি ভালো হলে। তালহা স্যার আমার উপরে ভরসা রেখেছিলেন।’
এসএইচ/এএল