‘রাঙামাটি-বান্দরবানে লিগ চালুসহ ক্রিকেটার তুলে আনতে চাই’
সংগঠক হিসেবে অনেকদিন ধরেই কাজ করেছেন আহসান ইকবাল চৌধুরি। তবে এবারই প্রথম তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে। এখন নিজের জেলা-বিভাগসহ দেশের ক্রিকেটে উন্নতি আনার দিকেই পুরো মনোযোগ আহসান ইকবালের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে বাংলাদেশ দল এখন চট্টগ্রামে। যেখান থেকে বিসিবির দায়িত্ব পেয়েছেন আহসান, ফলে এই সময়েই তাকে খুঁজে ফেরা। নিজ বিভাগ, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ক্রিকেট কাঠামো উন্নতিতে লক্ষ্য, প্রথমবার বিসিবির দায়িত্ব গ্রহণসহ সংগঠক হিসেবে ইচ্ছা ও স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রথমবার বিসিবির দায়িত্বে এলেন, কেমন লাগছে?
আহসান ইকবাল : এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, তবে অবশ্যই ভালো লাগা কাজ করছে। আরও ছয় মাস গেলে বলতে পারব ভালো লাগছে কি না। যদি পরিচালক হিসেবে পারফর্ম করতে পারি, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগবে। যদি না পারি তাহলে মনে হবে সময় নষ্ট করেছি।
বিজ্ঞাপন
কখনও বিসিবির প্রশাসক হিসেবে কাজ করার ভাবনা ছিল?
আহসান ইকবাল : না, এই চিন্তা কখনোই ছিল না। তবে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ, চেষ্টা ও ভালো লাগা সবসময়ই ছিল। ছোট বেলায় আমি নিজেও খেলাধুলা করেছি, পরে আর হয়ে ওঠেনি। তবে সংগঠক হিসেবে অনেক বছর ধরে কাজ করছি চট্টগ্রামে। এখানে বেশ কিছু অবদান রাখার চেষ্টাও করেছি।
ঠিক কোন চিন্তা থেকে বোর্ডে আসলেন, কোনো বড় লক্ষ্য আছে কি না...
আহসান ইকবাল : আমার লক্ষ্য একটাই- দেশের জন্য যদি কিছু করতে পারি তাহলে ভালো লাগবে। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য কিছু করতে পারাই আমার লক্ষ্য। আর বোর্ডে আসার আরেকটি কারণ চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করা। যেহেতু আমি স্পোর্টসের সঙ্গেই জড়িত ছিলাম, এখানে একাডেমি ও আমার মাঠ রয়েছে। তো সবকিছু মিলিয়ে এদিকে আগানো।
বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে আপনাদের নিয়ে ২৫ জনের দল, কেমন হলো দল কতটা শক্তিশালী?
আহসান ইকবাল : আমার ব্যক্তিগত অভিমত- সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে যে তারা পজেটিভ। যারা এসেছেন তারা কাজ করতে চান, আমিও আশাবাদী যে তারা কাজ করবে, ভালো কিছু করবে। আরেকটা পজিটিভ দিক- বেশ কিছু তরুণ পরিচালক রয়েছে। যাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কথা হয়েছে তাদের ভাবনা খুব পজিটিভ, আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।
পুরো দেশের ক্রিকেটের দেখভালের দায়িত্ব, কতটা চ্যালেঞ্জ দেখছেন? বাইরের অনেকেই আপনাদের কাজ দেখতে মুখিয়ে আছেন...
আহসান ইকবাল : এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং একটা চাকরি। আগে শুধু আমার জেলা বা বিভাগের হয়ে কাজ করেছি, চট্টগ্রামের ক্রিকেট নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন পুরো দেশের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং, সেক্ষেত্রে দায়িত্বটাও বেড়েছে অনেক।
বোর্ডের পরিচালকদের তো বেতন নেই, সেক্ষেত্রে আপনার যে পেশাটাও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হচ্ছে নিশ্চয়ই?
আহসান ইকবাল : হ্যাঁ, সেটাও করতে হচ্ছে। তবে আমার একটা সুবিধা হয়েছে। আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারা আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় দেয়। সেক্ষেত্রে আমার সেখানে এখন খুব একটা সময় দেওয়া লাগে না। আমি সংগঠক হিসেবে ক্রিকেটের পেছনে সময় ব্যয়ের চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় আগে থেকে এখন ক্রিকেটে বেশি সময় দিচ্ছি। দুই বছর আগে যেমনটা পারতাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ আছে। যদিও ব্যবসাটা আমার রুটি-রুজির জায়গা।
চট্টগ্রামের মাঠে নিয়মিত আন্তর্জাতিক খেলা হয়, খেলোয়াড়ও উঠে আসে। কিন্তু বাকি যেসব জেলা আছে, বান্দরবান-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি থেকে খেলোয়াড় আসে না, সেখানকার সুযোগ-সুবিধাও ওই অর্থে নেই...
আহসান ইকবাল : এটা আমি বিসিবি ডিরেক্টর হওয়ার আগেও চিন্তা করেছিলাম, কাজও করেছি কিছু। এ ছাড়া একটা টুর্নামেন্ট করেছিলাম চট্টগ্রামে, সেখানে আমার দুটো দল ছিল- একটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আরেকটা খাগড়াছড়ি। আমি প্রথমে চট্টগ্রাম নিয়েই ভাবতাম শুধু। এরপর মনে হয়েছে যে বাকিদের জন্যও কিছু করি, সেসব জেলাগুলোতে অনেক পটেনশিয়াল ক্রিকেটার রয়েছে। যারা সুযোগের অভাবে ভালো করতে পারছে না, তখনই আলাপ হচ্ছিল, যেহেতু আমি একাডেমি করেছি।
বিশেষ করে যারা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান বা রাঙামাটির আছে। তাদের ফ্রি-তে কিছু করার চেষ্টা বা চিন্তা ছিল সেখানে যারা ভালো ক্রিকেটার রয়েছে কিন্তু সামর্থ্য কম, তাদের নিয়ে আমি ফ্রি-তে কাজ করতে চাই। এটা নিয়ে অলরেডি ওখানকার কোচদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যাতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে যারা পটেনশিয়াল আছে তাদের ফ্রি-তেই আমি সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি। এটা জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে। খাবার দেওয়া বা অন্যান্য অনুশীলন সুবিধা সবকিছুই দিতে চাই তাদের। অনুশীনের পাশাপাশি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগেরও যারা অন্যান্য জায়গায় আছে, তাদেরও একইভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চিন্তা আছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়মিত লিগ হয় না, একইসঙ্গে জেলা লিগও অনেকটাই অন্ধকারে, সেসব জায়গায় খেলা ফেরানো নিয়ে কী ভাবছেন?
আহসান ইকবাল : এটা আসলে একটা ভুল তথ্য, এই বছরই শুধু লিগ হয়নি বিভাগে। বাকি সব সময় কিন্তু লিগ হয়েছে, যদিও জেলাগুলোতে খেলা হয় না। এটার জন্য আমরা চেষ্টা করব, আর জেলাভিত্তিক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে তাদেরও সাহায্য দরকার। উনারা যদি সবকিছু চায় আমাদের সাপোর্ট থাকবে।
দায়িত্ব পাওয়ার আগে অনেকেই বড় কথা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন উন্নয়নের। পরবর্তীতে আর কাজের সঙ্গে মিল থাকে না...
আহসান ইকবাল : আমি প্রথমত রাজনীতিবিদ না, সবসময় স্পষ্ট কথা বলি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত আমার সফলতার রেট খুবই ভালো। এজন্য আমি আশা করি- আমার দায়িত্বটা আমি সফলভাবে পালন করতে পারব এবং চেষ্টা করব সব সময়।
আপনার ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেকের কাছে অজানা...
আহসান ইকবাল : আমি আগে একজন ব্যবসায়ী ছিলাম, কিছু ব্যবসা রয়েছে আমার। তবে প্যাশন কিন্তু খেলাধুলা, সেই হিসেবে সংগঠক হয়েছি। চট্টগ্রামে আমি প্রিমিয়ার দল চালাচ্ছি অনেক বছর, ২০১২-১৩ থেকে। আমাদের এখন পাঁচটা দল রয়েছে, তিনটা প্রিমিয়ারের, আর দুইটা শুরু করবে এবার থার্ড ডিভিশন থেকে।
বিসিবিতে টুর্নামেন্ট কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন, কীভাবে সামলাচ্ছেন?
আহসান ইকবাল : আমার ইচ্ছা থাকবে অবশ্যই টুর্নামেন্ট নিয়মিত করার জন্য। তবে টুর্নামেন্ট করেই কিন্তু সবকিছু হবে না, যদি না তা প্লেয়ারদের কাজে আসে। টুর্নামেন্টটা ক্রিকেটারদের উপকৃত না করলে আমি ব্যর্থ হব। ওটাকে সফলতা বলা যাবে না। এখন এনসিএল হচ্ছে, এরপর বিসিএল ও বিপিএল আছে। আমার যেটা মনে হয় যে, ক্রিকেটারদের হোম-অ্যাওয়ে বেশি খেলা উচিত।
যদিও আমাদের মাঠের সমস্যা রয়েছে, অনেক উন্নতির জায়গা রয়েছে। খেলার মানও বাড়াতে হবে, ওটা তো আসলে আমার একার পক্ষে সম্ভব না। বিসিবির সবার সহযোগিতা নিয়েই করতে হবে। আমি মাত্র দায়িত্ব বুঝে পেয়েছি, এত তাড়াতাড়ি কমেন্ট করা ঠিক না। আশা করি সবার সাপোর্ট যদি পাই, তাহলে ভালো কিছু হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো নয়, টি-টোয়েন্টিতে তুলনামূলক ভালো করছে...
আহসান ইকবাল : আমি এই মুহূর্তে জাতীয় দল নিয়ে মন্তব্য করব না। আমি আমারটা নিয়ে বলতে পারি। তবে সবারই একটা ভালো ও খারাপ সময় যায়। ওয়ানডেতে আমরা একটা খারাপ সময় কাটাচ্ছি। দলের সবাই যখন খারাপ খেলে তখন কিন্তু খারাপ ফল হবেই। আমি আশা করব এখান থেকে বাংলাদেশ ফিরে আসবে, ভালো কিছু করবে। সবশেষ সিরিজটি কিন্তু ডমিনেট করে জিতেছি।
এসএইচ/এএইচএস/এফআই