দুই দলের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কিউরেটর, সবাইকে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পিচ হতাশ করেছে। পার্থের মতো এই মাঠেও অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের খেলা শেষ হয়েছে মাত্র দুই দিনে। দুই ম্যাচেই ব্যাটাররা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তবুও পার্থকে পিচ রেটিংয়ে ‘খুব ভালো’ দিয়েছিল আইসিসি। কিন্তু মেলবোর্নের পিচ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার মত, ‘অসন্তোষজনক’। 

আইসিসি এলিট প্যানেলের ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো এই রায় দিয়েছেন। ক্রো বলেছেন, ‘এমসিজি পিচ বোলারদের বাড়াবাড়ি রকমের সহায়তা করেছে। প্রথম দিন ২০ উইকেট, দ্বিতীয় দিন ১৬, কোনো ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেনি। গাইডলাইন অনুযায়ী পিচ ছিল অসন্তোষজনক। ভেন্যুকে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেল।’

আইসিসির চার স্তরের পিচ রেটিং পদ্ধতির তালিকায় তিন নম্বরে ‘অসন্তোষজনক’, ‘যে পিচে ব্যাট ও বলের সমান লড়াই হয় না... বোলারদের মাত্রাতিরিক্ত সুবিধা দেয়, সিম কিংবা স্পিনে অনেক বেশি উইকেট নেওয়ার সুযোগ থাকে।’ অথচ আগের তিন বক্সিং ডে টেস্টে এই পিচের রেটিং ছিল সর্বোচ্চ- ‘খুব ভালো’।

এর আগে মেলবোর্নে প্রথম দিনে ২০ উইকেট পড়ার পর হতাশা প্রকাশ করেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ। তিনিও স্বীকার করলেন, এভাবে দুই দিনে টেস্ট শেষ হওয়া বোর্ডের জন্য ক্ষতির। তাকে প্রশ্ন করা হয়, এক দিনে ২০ উইকেট পড়া অনেক বেশি কি না। গ্রিনবার্গ বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর ছোট করে দিতে হলে বলব, হ্যাঁ। সমর্থক হিসেবে এই ধরনের ম্যাচ দেখা মন্ত্রমুগ্ধকর ও উপভোগ্য হলেও আমাদের দাবি টেস্ট ক্রিকেট আরও বেশি দিন চলুক। ছোট টেস্ট ব্যবসার পক্ষে খুবই খারাপ। এর থেকে কড়া উত্তর আর হয় না।’

তৃতীয় দিন থেকে প্রচণ্ড গরম পড়ার শঙ্কায় এবার মেলবোর্নে ১০ মিলিমিটার ঘাস রাখা হয়েছিল। কিন্তু খেলায় পিচের আচরণ দেখে পিচ কিউরেটর ম্যাথু পেজ নিজেও অবাক, ‘প্রথম দিনে যা হলো, একদিনে ২০ উইকেট… দিন শেষে আমি স্রেফ হতভম্ব। কখনো এরকম টেস্ট ম্যাচে সম্পৃক্ত ছিলাম না, আশা করি আর কখনো এমন কিছুতে সম্পৃক্ত থাকব না। প্রতিটি বছরের ব্যাপার আলাদা এবং ব্যবধান খুব সামান্য। তবে মনের কোণে সবসময় ভাবনা থাকে যেন লড়াইটা জমে। আমাদের চেষ্টা থাকে আকর্ষণীয় টেস্ট ক্রিকেট উপহার দেওয়ার, চার-পাঁচ দিন ধরে যেন ব্যাট-বলের লড়াইটুকু হয়।’

ইংল্যান্ড টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। জশ টাংয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অজিদের ১৫২ রানে অলআউট করে তারা। প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার মতো ইংল্যান্ডও প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায়। ৩০ ওভারের মধ্যে ১১০ রানে অলআউট হয়। ওই দিনেই অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামে। দিন শেষে পড়ে ২০ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসেও বোলারদের দাপট। অস্ট্রেলিয়া ১৩২ রানে অলআউট হয়। ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোর ৪৬ রান আসে ট্রাভিস হেডের ব্যাটে। ইংল্যান্ড ১৭৫ রানের লক্ষ্যে নেমে ৩২.২ ওভারে জিতে যায়। তারাও হারায় ছয় উইকেট। ১৪২ ওভারের খেলায় দুই দিনে পড়েছে ৩৬ উইকেট এবং কেউ ফিফটি করতে পারেননি।

এই ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড ১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট জেতে। প্রথম তিন ম্যাচ জিতে অজিরা ইতোমধ্যে অ্যাশেজ সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে। সিডনিতে আগামী ৪ জানুয়ারি হবে শেষ ম্যাচ।

এফএইচএম/