পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক পেসার সালমান মির্জার। ক্যারিয়ার খুব লম্বা নয়, তবে সময়ের হিসাবে পাকিস্তানের জার্সিতে তার খেলার সংখ্যা বেশ নগণ্য- ১১টি টি-টোয়েন্টি। জাতীয় দলের পরবর্তী শ্রীলঙ্কা সফরের দলে রয়েছেন সালমান। সুযোগ রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলারও। বর্তমানে তিনি এখন সিলেটে, চলমান বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের সঙ্গে খেলছেন। সিলেটে বসে নিজের ক্যারিয়ার, পাকিস্তান দল; বাংলাদেশের নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন সালমান। 

বাংলাদেশে কয়েকবার এসেছেন, কেমন লাগে এখানকার খাবার-সংস্কৃতি?

সালমান: বাংলাদেশে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। এখানকার সংস্কৃতি, মানুষজন অনেকটা পাকিস্তানের মতোই। মনে হয় যেন আমার দেশেই আছি, খাবারও অনেকটা একইরকম। কিছু কিছু খাবার একটু আলাদা, কিন্তু অনেক ভালো। আমি চেষ্টা করছি বাংলাদেশের স্থানীয় খাবার খাওয়ার। সময়টা খুবই উপভোগ করছি।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন দেশের দর্শকদের উন্মাদনা বেশি?

সালমান: যদিও এটা কঠিন প্রশ্ন, তবে আমি যেহেতু পাকিস্তানি, সুতরাং আমি তো বলব পাকিস্তানের দর্শকই সেরা। 

প্রথমবার ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে খেলছেন, কেমন লাগছে?

সালমান: ঢাকা ক্যাপিটালস ফ্র্যাঞ্চাইজি অসাধারণ। কারণ তারা আমাদের বেশ রিল্যাক্স একটা পরিবেশের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের জন্য খুব জরুরি। ঢাকা ক্যাপিটালসের ম্যানেজমেন্টও ভালো। আশা করি দল খুব ভালো করবে টুর্নামেন্টে।

২০২১ সালে একবার পিএসএলে খেলেছিলেন, এরপর আবার ২০২৫-এ সুযোগ পেলেন। মাঝের সময়টাতে আলোচনার বাইরে থাকার কারণ কী?

সালমান: ওই সময়ে কিছুই হয়নি। আমি দলের সঙ্গেই ছিলাম। ২০২১ সালে ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, ২০২২-এ দলের সঙ্গে ছিলাম কিন্তু ম্যাচে খেলার সুযোগ পাইনি। ক্রিকেটে এমনটা হয়। কখনো ম্যাচ খেলতে পারব, কখনো পারব না। তবে এরপর ২০২৩, ২০২৪ সালে আমি পিএসএলে ছিলাম না। ওই সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। জিম্বাবুয়ে গিয়েছি খেলতে। এরপর পাকিস্তান এসেছি। সেখানে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ খেলেছি। পিএসএল খেলেছি, এমনিতে কিছু হয়নি। শুধু ওই সময়টাতে খেলার তেমন সুযোগ হচ্ছিল না। 

বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কায় দলের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ খেলতে ডাক পেয়েছেন। সামনে বিশ্বকাপ, এই সময়টাকে ঘিরে কীভাবে পরিকল্পনা করছেন?

সালমান: আমি কখনোই এত বড় পরিকল্পনা করি না যে ২-৩ মাস পরে কী হবে। ছোট লক্ষ্য হলে সেটা অর্জন করা সহজ হয়। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আসছে। চেষ্টা করব ওই সিরিজে পারফর্ম করার এবং সিরিজ জেতার। বিশ্বকাপে গেলে ইনশাআল্লাহ লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলার এবং বিশ্বকাপ জেতার।

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার মনে হয় কাকে?

সালমান: অনেক ক্রিকেটারই আছে। একজনের নাম নেওয়া কঠিন। তানজিদ তামিম আছেন, সাইফ হাসান আছেন। ওকে কয়েকদিন ধরে দেখছি, যে পরিমাণ ছক্কা ও মারে আমার ধারণা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি ছক্কা ও মারে, সে সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার। 

পাকিস্তান দলে শাহীন আফ্রিদি এবং হারিস রউফের মতো খ্যাতিসম্পন্ন পেসারদের সঙ্গে খেলেন। এটা চাপের নাকি সুবিধাজনক?

সালমান: ওদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে কোনো চাপ বোধ করি না। আমি ওদের সঙ্গে অনেকদিন ধরে আছি। আমাদের ভাইয়ের মতো সম্পর্ক। আমি একদমই চাপ অনুভব করি না, আমার উপকার হয়। কারণ এত বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে থাকলে শেখার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়। কোনো পরিস্থিতি যদি কঠিন লাগে, তখন তাদের সহায়তা নিয়ে ওই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তাদের সঙ্গে খেলা উপভোগ করি। 

বিশ্বকাপ হবে ভারতে, পাকিস্তান খেলবে শ্রীলঙ্কায়। এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

সালমান: ক্রিকেটে এসব হওয়া উচিত না। যদি আপনি ক্রিকেটে রাজনীতি আনেন এবং হাইব্রিড মডেলে নিয়ে যান ক্রিকেটকে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল, ভারতের কারণে আমাদের হাইব্রিড মডেলে করতে হয়েছে। এখন বিশ্বকাপেও সেটা হচ্ছে। খেলা ভারতে, আমাদের শ্রীলঙ্কায় খেলতে হচ্ছে। ক্রিকেটকে যদি রাজনীতির বাইরে রাখা যায়, এটি খেলার জন্য অনেক ভালো, ক্রিকেটারদের জন্য ভালো। তবে যারা যেভাবে করবে, তাদের ওইভাবেই সামাল দিতে হবে। 

এতে দলের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা?

সালমান: এতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে হয় না। আমাদের বেশিরভাগ ম্যাচই ওখানে। আমরা অনেক সময় ওখানে থাকব। তাই ওটা আমাদের জন্য ঘরের মাঠের মতোই হবে। আমার মনে হয় না, এটা পাকিস্তানের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে। 

চলতি বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে দুই দলের মধ্যে কোনো হ্যান্ডশেক হচ্ছে না। খেলোয়াড়দের মধ্যে সবধরনের কথাবার্তাও বন্ধ। এটা কীভাবে দেখেন?

সালমান: এটা খুবই খারাপ হচ্ছে। ক্রিকেটকে বলা হয়, ভদ্রলোকের খেলা। এটাকে সেভাবে রাখলেই ভালো হয়। ক্রিকেটে এসব বিষয় যে আনা হচ্ছে, এটা ক্রিকেটের জন্য একদমই ভালো কিছু নয়। ক্রিকেটকে ক্রিকেটের জায়গায় থাকতে দেওয়া উচিত। যেভাবে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলার মতো খেলে আসা হচ্ছিল, সেভাবেই এটা চলা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কী করার! এভাবেই চলছে। 

টি-টোয়েন্টি খেললেও ওয়ানডে এবং টেস্টে এখনও সুযোগ হয়নি। এই দুই ফরম্যাটে খেলা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কী?

সালমান: এখন আমি টি-টোয়েন্টি খেলছি। তবে ওয়ানডের জন্য আমার প্রস্তুতি চলছে। সুযোগ আসবে যখন, আমি ওয়ানডের জন্য তখনই প্রস্তুত। যেভাবে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার চেষ্টা করেছি, চেষ্টা থাকবে ওয়ানডেতেও করার। টেস্ট ক্রিকেট অবশ্যই একটু কঠিন, তবে সেটার জন্যও আমি পরিশ্রম করছি। যে ফরম্যাটেই সুযোগ মিলবে আমি প্রস্তুত। নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখছি। সুযোগ আসলে আমি সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব। 

বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পেসার উঠে আসে পাকিস্তান থেকে, এটার পেছনে কারণ কী?

সালমান: আমার ধারণা এটা সহজাত ব্যাপার। আমরা যখন বড় হই, তখন ফাস্ট বোলারদেরই দেখি। তখন যেটা দেখি, সেটাই আমাদের আদর্শতে রূপ নেয়, ওরকম কিছুই করার চেষ্টা করি। কোনো দেশে ব্যাটার বেশি থাকলে সবাই ব্যাটার হওয়ার চেষ্টা করবে, কোনো দেশে স্পিনার ভালো হলে ওই দেশের সবাই স্পিনার হতে চাইবে। পাকিস্তানের ইতিহাস ফাস্ট বোলার কেন্দ্রিক, তাই এখানে যেকোনো বাচ্চা বড় হয়ে ফাস্ট বোলার হতে চায়। 

ক্রিকেটে আপনার আদর্শ কে?

সালমান: যখন ছোট ছিলাম, ওয়াসিম ভাইয়ের ম্যাচ দেখতাম। লাইভ তো দেখিনি, তবে হাইলাইটস দেখতাম। তার মতো হওয়া সম্ভব না। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে শাহীন আফ্রিদি এবং মিচেল স্টার্ক, ওদের আমি অনুসরণ করি এবং চেষ্টা করি ওদের মতো বোলিং করতে। 

বাংলাদেশে আপনার পছন্দের ক্রিকেটার কে?

সালমান: মুস্তাফিজুর রহমান। ওর কাছ থেকে আমি স্লোয়ার শেখার চেষ্টা করব। আমারটাও খারাপ না। তবে ও যেভাবে করে, সেটা যদি রপ্ত করতে পারি, আমার জন্য অনেক ভালো হবে। 

বিপিএল ও পিএসএলের মধ্যে মূল কী পার্থক্য দেখা যায় বলে মনে করেন। 

সালমান: বিপিএলে একটু বোলিং সহায়ক উইকেট থাকে। এখানে শুরুতে পেসাররা সুইং পায়, মিডল ওভারে স্পিনও ভালো হয়। পিএসএলে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বেশি হয়। এইটুকুই পার্থক্য। এর বাইরে দুটোই বিশ্বের সেরা লিগগুলোর একটি। আর যেভাবে দর্শকরা সমর্থন করেন, খেলে ভালো লাগে।

বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সম্ভাবনা কেমন?

সালমান: চেষ্টা তো থাকবে ভালো ক্রিকেট খেলার। কিন্তু ফলাফলকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। আপনি চেষ্টা করতে পারেন, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন। এরপর যে ফলাফলই আসুক, সেটাতে কিছু যায় আসে না। আমাদের পুরোপুরি চেষ্টা থাকবে ভালো ক্রিকেট খেলার এবং বিশ্বকাপ জেতার। পাকিস্তানের জনগণকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চাই। 

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু?

সালমান: এশিয়ান কন্ডিশন হবে। স্পিন হবে এবং বাংলাদেশ স্পিন কন্ডিশনে ভয়ানক দল। বাংলাদেশের কাছে ভালো স্পিনার আছে এবং তারা এই কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয় জানে। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অনেক ভালো করবে।

এসএইচ/এফএইচএম