নাদির শাহর স্মৃতিতে ধানমন্ডিতে ক্রিকেট একাডেমিতে ‘নাদির কর্নার’
নাদির শাহ স্ট্যান্ড
গত ১০ সেপ্টেম্বর জীবনের পাট চুকিয়ে চিরতরে বিদায় বলেছেন নাদির শাহ। বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকে মনে রাখবে চিরকাল। বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা না হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপিয়েছেন আম্পায়ারের ভূমিকায়। নাদিরের পদচারণ ছিল ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। এজন্য নাদির শাহর স্মৃতিতে সেখানে করা হয়েছে নাদির শাহ কর্নার।
ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমির সভাপতি আবু এম সবুর বলছিলেন, ‘১৭ সেপ্টেম্বর আমাদের অ্যাকাডেমিতে তাকে নিয়ে স্মরণ সভা ছিল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান ভাই, তার দীর্ঘদিনের বন্ধু বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান মাহবুব আনাম ভাই, তার সহকর্মী আম্পায়ার সৈকত (শরফুদ্দোলা ইবনে সৈকত) সহ অনেকেই উপস্থিত ছিল। সেখানেই রকিবুল ভাই প্রস্তাব দেন নাদির কর্নারের।’
বিজ্ঞাপন
নাদির শাহ কর্নার বা নাদির শাহ স্ট্যান্ড নিয়ে সবুর জানান, ‘আমি সহ সকলেই তার এই প্রস্তাবে তাৎক্ষনিক সাড়া দিয়েছি। আজই (শনিবার) আমাদের মাঠের যে পাশটায় আমরা বসে আড্ডা দিই, সময় কাটাই কিংবা বিশ্রাম করি, সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি নাদির শাহ স্ট্যান্ড নামে। আশা করি এটা ভবিষ্যতেও এভাবেই থাকবে। অ্যাকাডেমির শিশু, কিশোরদের কাছে নাদিরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যমও হবে এই স্ট্যান্ড।’
নাদিরের সঙ্গে ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সম্পর্ক বেশ পুরনো। ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। সবুর স্মৃতিচারণ করেন নাদিরকে নিয়ে কি ভাবনা থেকে ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি যাত্রা শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
সবুর বললেন, ‘ধানমন্ডিতে আমরা ৫০ বছর ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত। নাদিরদের নিজেদের বাড়ি ৫ নম্বর রোডে। সে সারাজীবন ক্রিকেটই বুঝেছে শুধু, ক্রিকেট ছাড়া তার মাথায় আর কিছু থাকতো না। আবাহনীর হয়ে খেলেছে। একটা সময় মূল ধানমন্ডি ক্লাবে ভাগাভাগি শুরু হয়ে যায়। আমরা তখন বেরিয়ে যাই। আর সে সময়ে নাদিরকে নিয়ে আলোচনা করি কি করা যায়, সে ভাবনা থেকে আজকের ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি।’
আরও যোগ করেন তিনি, ‘নাদির আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, শুরুর দিকের কোচও। বাচ্চাদের সে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করতো। এরপর তার ব্যস্ততা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু অ্যাকাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল নিবিড়ভাবে। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও আমাকে ফোনে বলতো, ঠিকভাবে দেখে রেখো ছেলেদের আমিতো আমেরিকায় চলে যাব। আসলে সে আমাদের কিংবদন্তী, আর ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির অন্যতম ধারক, বাহক।’
দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন নাদির শাহ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জাতীয় লিগের ম্যাচ পরিচালনা করার সময় মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধরা পড়ে কর্কট রোগ। তারপর থেকেই অনেকটা গৃহবন্দি মাঠের এই মানুষ। চলছিল চিকিৎসা। মাঝে সুস্থ হওয়ার বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, আবার আম্পারিংয়ে ফিরতে চান। তবে প্রাণঘাতী ক্যান্সারের সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না তিনি। একেবারে বিদায় বলে দিলেন তিনি!
বগুড়ায় বাংলাদেশ-কেনিয়া ম্যাচ দিয়ে ২০০৬ সালে শুরু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আম্পায়ারিংয়ের পথচলা শুরু নাদির শাহের। ৬ বছরে ৩ টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন ৪০ ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি। বড় ভাই জাহাঙ্গীরের মতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে না পারলেও আশির দশকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ছিলেন নাদির শাহ। একাধারে খেলেছেন ভিক্টোরিয়া, বিমান, আবাহনী, মোহামেডানের মতো ক্লাবের হয়ে।
টিআইএস/এনইউ