টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের পথচলা শুরু ২০১৬ সালে। এর বছর খানেক আগে আরব সাগরের পশ্চিম উপকূলের দেশটির এই ফরম্যাটে অভিষেক। তবে একটি সবুজ ঘাসের মাঠই ছিল না তাদের। গত ১০ বছর ধরে বালি ও সিমেন্টের খোলা মাঠেই খেলতে হয়েছে।

ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত আল আমেরাত শহরে বালি ও সিমেন্টে ঘেরা মাঠটিকেই সবুজ ঘাসের ক্রিকেটীয় মাঠে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেয় ওমান ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ২০২১ সাল যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে দেশটির ক্রিকেটের জন্য। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৬ টি ম্যাচ আয়োজন করার সুযোগ পেয়েছে তারা। 

আরও পড়ুন-স্কটল্যান্ড : উপত্যকার ক্রিকেট আবারও বিশ্বমঞ্চে

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় ‘দ্য ল্যান্ড অফ ফ্লাইং কার্পেট’ হিসেবে পরিচিত দেশটি। ত্রিশ লাখ দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু নিজেদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে অনেক সময় লেগেছে আরব সাগরের পশ্চিম উপকূলের এই রাষ্ট্রটির। আইসিসির ৩৮তম সহযোগী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ হয় ওমানের।

৩০ লাখ জনগণ যার এক তৃতীয়াংশ মানুষই বিভিন্ন দেশের। সেখানে ক্রিকেটের পথচলাটা মসৃণ ছিল না। ১৯৭৯ সালে কনক খিমজিকে সভাপতি করে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় ওমান ক্রিকেট। 

ওমানে যেভাবে ক্রিকেট এলো

৩০ লাখ জনগণ যার এক তৃতীয়াংশ মানুষই বিভিন্ন দেশের। সেখানে ক্রিকেটের পথচলাটা মসৃণ ছিল না। ১৯৭৯ সালে কনক খিমজিকে সভাপতি করে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় ওমান ক্রিকেট।

ওই সময়ে প্রযুক্তি ও জনবলের অভাবে ক্রিকেটকে সেভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারেনি তারা। ২০০০ সালে ওমান ক্রিকেট আইসিসির অধিভুক্ত হয় এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মর্যাদা লাভ করে। 

২০০২ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফিতে ওমান তাদের সর্ব প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। ২০০৪ সালে এসিসি ট্রফিতে রানার্স-আপ হয়ে সফলতার দেখা পায় ওমান।

২০০৭ সালে এসিসির টি-টোয়েন্টি কাপে ওমান যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ধীরে ধীরে ওমান ক্রিকেট এগিয়ে যায়। ২০১১ সালে আইসিসির ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে তৃতীয় হয় তারা। ২০১১ সালে ওমান ক্রিকেটের সভাপতি কনক খিমজিকে আইসিসির পক্ষ থেকে তার অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর ওমান ক্রিকেটের জন্য আসে খুশির এক সংবাদ তাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আল আমেরাতে সবুজ ঘাসের ক্রিকেটীয় মাঠ তৈরির জন্য ভূমি বরাদ্দ দেয়। ২০১৪ সালে ওমান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন আসে মেলবোর্নে আইসিসির বার্ষিক সভা থেকে।

আরও পড়ুন-পাপুয়া নিউগিনি : অবশেষে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নপূরণ

ওই সভায় ওমানকে আইসিসির ৩৮ তম সহযোগী দেশ ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে আইসিসির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করে দারুণ পারফম্যান্স করে ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপে সুযোগ পায় ওমান। 

২০১৬ সালের বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল ওমান। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ঝড়ো শতক করেছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ দলে অবশ্য নেই তামিম। তবে এবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবে ওমান।

২০১৬ সালের বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল ওমান। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ঝড়ো শতক করেছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ দলে অবশ্য নেই তামিম। তবে এবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবে ওমান।

ওমানের এই অভিজ্ঞ দলটি নিজেদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে দারুণ এক লড়াই উপহার দেবে সেটাই ভক্তদের প্রত্যাশা। ১৭ অক্টোবর পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে জিসানরা। খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষেও।

২০১৬ সালে পাঞ্জাবের ধর্মশালায় আয়ারল্যান্ডকে দুই উইকেটে পরাজিত করে ক্রিকেট বিশ্বকে বার্তা দেয় তারা। এরপর থেকে আইসিসির বিভিন্ন আসরে অংশগ্রহণ করে আসছে দেশটি। ২০২১ সালে এসে তাদের নিজেদের জন্য সবচেয়ে বড় সফলতার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। নিজেদের ঘরের মাঠে যে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের খেলা। 

বিশ্বকাপে নজরে রাখবেন যাদের

ওমান তাদের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে অভিজ্ঞদের নিয়ে। এই দলটিই দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধারাবাহিকভাবে খেলে আসছে। অধিনায়ক জিসান মাকসুদ আসন্ন বিশ্বকাপে দলটির মূল ভরসা। তার নেতৃতে ঘরের মাঠ আল আমেরাতে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের দল মুম্বাইয়ের সঙ্গে কিছু দিন আগেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে একটি সিরিজ খেলেছে ওমান।
 
অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার খাওয়ার আলিসহ বাঁহাতি স্পিনার আমির কালিমের উপর নিজেদের স্পিন বোলিংয়ের গুরু দায়িত্ব দিয়েছে ওমান। ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব থাকবে অধিনায়ক জিসান মাকসুদের পাশাপাশি ওপেনিং ব্যাটসম্যান জিতেন্দার সিংয়ের কাঁধে। কিছু দিন আগে ইউএসের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে সবার নজরে এসেছেন তিনি। 

বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ওমান স্কোয়াড

আকিব ইলিয়াস, আয়ান খান, বিলাল খান, ফয়েজ বাট, যতিন্দর সিং, কালেমুল্লাহ, খাওয়ার আলী, খুররম খান, মোহাম্মদ নাদিম, নাসিম খুশি, নেস্টার ধাম্বা, সন্দীপ গৌদ, সুফিয়ান মেহমুদ, সুরজ কুমার, জীশান মাকসুদ(অধিনায়ক)।

ওমানের বিশ্বকাপ সূচি

ম্যাচ       সময় (বাংলাদেশ অনুযায়ী) তারিখ
ওমান-পাপুয়া নিউ গিনি         বিকেল- ৪টায় ১৭ অক্টোবর ২০২১
ওমান-বাংলাদেশ          রাত- ৮টায় ১৯ অক্টোবর ২০২১
ওমান-স্কটল্যান্ড          রাত-৮টায় ২১ অক্টোবর ২০২১

সবগুলো ম্যাচ আয়োজিত হবে সদ্য নির্মিত ওমানের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে।

এমএফ/এমএইচ