ফাইল ছবি

বিতর্কের আগুনে এবার ঘি দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সবাই যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর লিটন দাসের দুই ক্যাচ মিস আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাপ্টেসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন, তখন ভিন্ন দিকে চোখ দিলেন সাবেক অধিনায়ক। দেশসেরা সাবেক এই অধিনায়ক হারের পেছনে দায় দেখছেন বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফদেরও!

ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতায় মাশরাফির করা স্ট্যাটাসের উত্তাপ মঙ্গলবার লাগল বাংলাদেশের কোচিং স্টাফদের গায়েও। বুধবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তার আগে উঠে এসেছে সেই অপ্রিয় প্রসঙ্গও। কোচরা কি তাদের কাজটা ঠিকঠাক মতো করতে পারছেন? সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন পড়েন এমন প্রশ্নের মুখে!

এমন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই পেসার তেমন যুতসই জবাব দিতে পারলেন না, ‘দেখুন, এটা ব্যাক্তিগত মত। বাইরের কারও ভাবনা নিয়ে ভাবছি না। এটা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। আমরা জানি বাংলাদেশ দলের কোচিং নিয়ে আমরা কী করছি। বাইরে থেকে কেউ কিছু বললে সেটা নিয়ে লাভ হয় না!’
 
গিবসন প্রসঙ্গ এড়ালেও বিশ্বকাপ মিশনে এসে কথার ঝড় যে থামছেই না! এভাবে মাশরাফি যে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন, পারস্য উপসাগরের জলও যে এখানে উত্তাল হয়ে উঠেছে! গত রোববার বিশ্বকাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রানের পুঁজি পেয়েও হেরে যায় বাংলাদেশ দল। যেখানে একটা সময় জয়ের পথ তৈরি হলেও মাঝপথে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঠিক সেভাবে চাপ দিতে পারেননি প্রতিপক্ষকে। সাকিব আল হাসান আর মুস্তাফিজুর রহমানকে সরিয়ে রাখেন বোলিং থেকে। 

রিয়াদের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে আলোচনার ঝড়। মাঝে মাহমুদউল্লাহ নিজে বল করেন আর নিয়ে আসেন আফিফ হোসেনকে। তাদের তিন ওভারে ৩৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান। রিয়াদের এমন সিদ্ধান্তের পর ওঠে সমালোচনার ঝড়। সবাই অধিনায়ককে দায়ী করলেও মাশরাফি দায় দেখছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর কোচিং স্টাফদেরও।

‘স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট’-এর সময় কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কী করলেন সেটাই বুঝতে পারছেন না মাশরাফি। তার দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ নিয়ে আক্রমণটা বেশ যুতসই, ‘দেখুন, ম্যাচের ৯.৪ ওভারে ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংকস ব্রেক। তার মানে কোচ মাঠের ভেতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিলেন। তাহলে উনি এসে রিয়াদের সাথে কি কথা বলেছিলেন? যদি বলে থাকেন, তাহলে কি সব দায় রিয়াদের? মানলাম, অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন’স কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিসকাশন করে না? ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান কী, এটা কি জানতে চেয়েছিলেন কোচ?’

রিয়াদের ক্যাপ্টেন্সি আর লিটন দাসের দুই ক্যাচ নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে সেটিও ঠিক বুঝতে পারছেন না মাশরাফি। তিনি লিখেছেন, 'ক্যাচ মিসের অজুহাত না দিলেও এটাই সত্য, ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি। আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সাথে থাকতে হয়। তাহলে স্রেফ দল সফল না হওয়ার কারণে, এই দুজনকে এতটা তুলাধুনা করা কতটা ঠিক, আমি শিওর না। ঠিক এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সাথে কথা না বলে থাকে, তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায় হাই-হ্যালো করতে, কোচের আর প্রয়োজন কী!’

এখানেই শেষ নয়, রাসেল ডমিঙ্গোর নেতৃত্বাধীন কোচিং প্যানেল নিয়েও প্রশ্ন তুললেন ম্যাশ। টিম ম্যানেজম্যান্টকে রিহ্যাব সেন্টারের সঙ্গে তুলনা করলেন তিনি। লিখেছেন, ‘এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। হেড কোচ এক-এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে, এরপর যারা অস্থায়ীভাবে আছে, তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল ম্যানেজমেন্টের জন্য যেভাবে স্টেপ আপ করে, মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ভালো থাকে না? এটা ঠিক করা কি তার কাজ না?’

কথার এই যুদ্ধ কোথায় যাবে কে জানে? তবে একটা জয় বড্ড দরকার বাংলাদেশের। না হলে মাঠের বাইরে এমন কাদা ছোড়াছুড়ি হয়তো চলতেই থাকবে। জয়ই কেবল সব বিতর্ক সরিয়ে দিতে পারে এক পাশে।

এটি/টিআইএস/জেএস