জমে উঠেছে টি-টোয়েন্টির বিশ্বযুদ্ধ। ব্যাট-বলের তুমুল লড়াই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সব মহলে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টায় দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সুপার টুয়েলভের খেলায় অস্ট্রেলিয়া মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এই পর্বে নিজেদের প্রথম খেলায় জয় পেয়েছে দুই দলই। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় বিধ্বংসী অজি ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্মহীনতা।

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্যাডিংটনে জন্মগ্রহণ করা এই ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের শুরুতেই ব্যাপক পরিচিতি পান দ্রুত রান তোলার সক্ষমতার জন্য। কুড়ি ওভারের খেলায় ১৩৯.৩০ স্ট্রাইক রেট জানান দিচ্ছে তার প্রতিভা। টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ মনে করা হয় তার ব্যাটিং স্টাইল। তিনবার হয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে এবারের আইপিএল অভিজ্ঞতা একদমই সুখকর হয়নি ওয়ার্নারের জন্য। 

২০২১ আইপিএলে ওয়ার্নারের পরিসংখ্যান ঘাটার আগে তার এ যাবৎকালের আইপিএল পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত ওয়ার্নার খেলেছেন ১৫০টি ম্যাচ। করেছেন ৫৪৪৯ রান। গড়টাও চোখ কপালে তোলার মতোই। ৪১.৬ গড়ে ১৪০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন আইপিএলজয়ী সানরাইজার্স হায়াদরাবদের এই সাবেক অধিনায়ক। হায়াদরাবাদ দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সবচেয়ে বেশি ফিফটির মালিকও তিনি।

তবে এবারের আইপিএলে যেন দেখা মিলেছে অচেনা এক ওয়ার্নারের। অধিনায়ক হিসেবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হন তিনি। প্রথম পাঁচ খেলার চারটিতেই হেরে বসে সানরাইজার্স। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাকে বলা হয় কেন উইলিয়ামসনের কাছে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে। 

অধিনায়কত্বের গুরুভার মাথা থেকে নেমে গেলেও রানের দেখা মেলেনি ওয়ার্নারের ব্যাটে। ৮ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৯৫ রান। গড়টাও শোচনীয়, মাত্র ২৪.৩৭, যা একদমই যায় না তার সঙ্গে। নিজের সিগনেচার প্রতিভা, দ্রুত রান করাটাও যেন ভুলে গেছেন তিনি। নিজের খেলা ১২টি আইপিএল মৌসুমের মধ্যে এবারই সর্বনিম্ন ১০৭.৭৩ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ওয়ার্নার।

এবার আসা যাক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। ২০২১ সালে জাতীয় দলের হয়ে এই বাঁহাতি ওপেনার খেলেছেন মাত্র ১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সেটিও চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই ম্যাচে মাত্র ১৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। 

চলমান বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে তবুও ওয়ার্নারেই আস্থা রাখছে অজি টিম ম্যানেজমেন্ট। মূলত লেগ সাইডে অধিক শক্তিশালী ওয়ার্নার শট খেলতে পারেন উইকেটের চারদিকেই। কাভার অঞ্চল দিয়ে বল সীমানাছাড়া করতে বেশ পটু তিনি। পায়ের কাজও বেশ ভালো তার। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে এবং শট নির্বাচন ঠিক থাকলে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের রানে ফেরা শুধুই সময়ের ব্যাপার।  

তবে মঞ্চটা যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ার্নারকে নিয়ে কিছুটা সন্দিহান থাকতেই পারেন অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকরা। পরিসংখ্যান বলছে, এই টুর্নামেন্ট এলেই যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলেন বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর এই টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪৮৭ রান করেছেন ওয়ার্নার। গড় মাত্র ২১.১৭। এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরির দেখা পাননি ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটের এই বিশ্বমঞ্চে। 

২০১৮ সালে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে নাম আসা এই ক্রিকেটার সবচেয়ে সফল ঘরের মাঠে। বিদেশের মাটি ও নিরপেক্ষ ভেন্যুগুলোতে এখনো নিজেকে তেমন একটা কার্যকর প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। নিরপেক্ষ ভেন্যু ও বিদেশের মাটিতে তার ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ২৪.৬০ ও ২৮.৯৩। এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই। 

আইপিএল বাদে নিজের পুরো ক্যারিয়ারে কখনোই এশিয়া মহাদেশে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। এই অঞ্চলে খেলা ২৫টি ম্যাচে ২৪.৮২ গড়ে করেছেন ৫৭১ রান। এবারের বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়াতেই। ওয়ার্নার নিশ্চয়ই চাইবেন বিশ্বকাপ দিয়েই এই পরিসংখ্যান বদলে দিতে।

এআইএ/টিআইএস/জেএস