ছবি: বিসিবি

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৪৩০ ও  ২২৩/৮ ডিক্লে. (মুমিনুল ১১৫, লিটন ৬৮ মুশফিক ১৮; কর্নওয়েল ৩/৮১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৯ (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, ব্ল্যাকউড ৬৮, ডি সিলভা ৪২; মিরাজ ৪/৫৮, মুস্তাফিজ ২/৪৬)

উইকেটের চরিত্র, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারলের সাদামাটা বোলিং নাকি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সাবলীল ব্যাটিং? চলমান চট্টগ্রাম টেস্টে আলোচনা হতে পারে তিনটি বিষয় নিয়েই। তবে সব ছাপিয়ে মূখ্য আলোচনা যেটি, ২ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের জন্য উইন্ডিজের সামনে ৩৯৫ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এই টার্গেট পাড়ি দিয়ে জয় তুলে নিতে গেলে রেকর্ড গড়তে হবে ক্যারিবীয়দের।

ঘরের মাঠে বরাবরই বাংলাদেশ দলের সাফল্যের রহস্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে স্পিন সহায়ক উইকেট। উপমহাদেশের বাইরের দলগুলো তো বটেই, এমনকি উপমহাদেশীয় দলগুলো বাংলাদেশে খেলতে এলে টেস্টে স্পিন দিয়ে ঘায়েলের পরিকল্পনা আঁটে স্বাগতিকরা। এজন্য অস্ত্র বানায় স্পিন সহায়ক উইকেটকে। উইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান টেস্টেও এক পেসারের পাশাপাশি ৪ স্পিনার খেলাচ্ছে টাইগাররা। 

সচরাচর বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচগুলো ৫ দিনে গড়ায় না। এর আগেই ফলাফল বের হয়ে যায়। আবহাওয়ার হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশে সবশেষ ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ শেষ দিনে গড়িয়েছে ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে। ৩ বছর ঘরের মাঠে আবার ৫ দিনে রোমাঞ্চের পথে টাইগাররা। এজন্য উইকেটের চরিত্রের ভূমিকা ঢের। স্পিন সহায়ক উইকেটে ম্যাচের চতুর্থ দিনেও খুব বেশি ফায়দা পাননি ক্যারিবীয় স্পিনাররা। স্পিনারদের পাশপাশি ক্যারিবীয় পেসাররাও স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে পারেননি। তাতে অবশ্য পুরো কৃতিত্ব টাইগার ব্যাটসম্যানদের।  

৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল বাংলাদেশ। যেখানে ২১৮ রানের লিড বাড়িয়ে নিতে শনিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন মুমিনুল হক ৩১ ও মুশফিকুর রহিম ১০ নিয়ে ব্যাটিং নামেন। বাংলাদেশের কন্ডিশনে ধীরগতির উইকেটে স্বাগতিকরা যেখানে চার পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছে, সেখানে উইন্ডিজ দল একাদশে রেখেছে মাত্র দুজন পরীক্ষিত স্পিনার। 

শুক্রবার ম্যাচে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান জার্মেইন ব্ল্যাকউড জানিয়েছিলেন, চতুর্থ দিনের শুরুতে পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। তবে এদিন দলের সেই আস্থার প্রতিদান ঠিকঠাক দিতে পারলেন না তিনি। দিনের শুরুতেই গ্যাব্রিয়েলের হাতে বল তুলে দেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। নড়বড়ে বোলিংয়ে টাইগার ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হন এই পেসার। অন্যপ্রান্তে অফ স্পিনার রাকিম কর্নওয়েলও সাদামাটা শুরু করেন। ফলে গ্যাব্রিয়েলকে সরিয়ে কেমার রোচকে নিয়ে আসেন ব্র্যাথওয়েট। সেই রোচও শুরুতে বিবর্ণ, গ্যাব্রিয়েলের সমান ৩ ওভার বল করে উইকেট শূন্য। 

চতুর্থ দিনের ১০ নম্বর ওভারে এসে ব্রেক থ্রু পায় সফরকারীরা। কর্নওয়েলের করা সেই ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে হালকা ভেতরে ঢোকে, তবে লাইন মিস করেন মুশফিক। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, লাভ হয়নি তাতে। ১৮ রানে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। এরপর দুই প্রান্তেই স্পিন আক্রমণ শুরু করে উইন্ডিজ। কর্নওয়েলের সঙ্গে বোলিংয়ে জুটি বাঁধেন ওয়ারিক্যান। তবে ম্যাচের চতুর্থ দিনে এসেও উইকেট থেকে খুব বেশি সুবিধা পাননি এই দুই স্পিনার। এজন্য অবশ্য সাধুবাদ পাবেন টাইগার অধিয়ায়ক মুমিনুল ও লিটন দাস। ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে সফরকারী বোলারদের ধৈর্য্য পরীক্ষান নেন দুজন।

এরই মধ্যে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন লিটন। পরে ৬৯ রানে আউট হলে পঞ্চম উইকেটে ১৩৩ রানের জুটি ভাঙে। এর আগে অবশ্য নিজের ১০ নম্বর সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। তামিমকে ছাড়িয়ে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ টেস্ট শতকের মালিক বনে যান তিনি। পরে মুমিনুল ১১৫ রানে আউট হলে মিরাজ আর তাইজুলও সুবিধা করতে পারেননি। ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ২২৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৯৪ রান জমা হয় বাংলাদেশের পাশে। ফলে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের পাহাড় টপকাতে হবে ক্যারিবীয়দের। 

টিআইএস/এনইউ/এটি