শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬ রান। ক্রিজে সেট ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচার। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তুলেছেন ৭৪ রান, ব্যাট করছিলেন শেষতক। ফ্লেচারকে অবশ্য আউট করার প্রয়োজন হয়নি চট্টগ্রামের। মেহেদি হাসান মিরাজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে তাকে দর্শক বানিয়েই ৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এ জয়ের ফলে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চলে গিয়েছে দলটি।

হারলেই বিদায় নিশ্চিত, এমন ম্যাচে আগে ব্যাট করে চ্যাডউইক ওয়ালটনের ৪৪ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্কোর বোর্ডে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। ১৯০ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে আগের ম্যাচের মতোই ধ্বংসাত্মক ছিলেন ফ্লেচার। 

তবে মেহেদী হাসান মিরাজ আজ আর তাকে নায়ক হতে দেননি। শেষ ওভারে আক্রমণে এসে দেন মাত্র ৮ রান। এতে ১৮২ রানে থামে খুলনা। ৭ রানে পাওয়া জয়ে কোয়ালিফায়ারের টিকিট পেল চট্টগ্রাম। বিদায় নিতে হলো খুলনাকে।

ফ্লেচার যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে শেষ ওভারে ১৬ রান প্রয়োজন হলেও জয়ের পাল্লা ভারি ছিল খুলনার দিকে। তবে মিরাজ কেড়ে নিলেন পুরো আলো। একটি বাউন্ডারি হজম করলেও দিয়েছেন মোটে ৮ রান। শেষ বলে থিসারা পেরেরাকে ফিরিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এতে বিফলে যায় ফ্লেচারের ৫৮ বলে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংসটি।

বিশাল রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ইনিংসের শুরুটাই ভালো হয়নি খুলনার। আগের ম্যাচে ঝোড়ো অর্ধশতক করলেও আজ ২ রানে ফেরেন শেখ মেহেদী। একই পথে হাঁটেন সৌম্য সরকার। মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার হওয়া সৌম্যর সংগ্রহে ১ রান। তৃতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন ফ্লেচার-মুশফিক। গড়েন ৬৪ রানের জুটি। ফিফটি পথে ছুটতে থাকা মুশফিক মাইলফলক ছোঁয়ার আগে আউট হন ৪৩ রান করে। ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৪টি ছয় ও ১টি ছয় দিয়ে।

মুশফিকের আউটের পর চাপ বাড়ে খুলনা শিবিরে। তবে সে চাপ স্থায়ী হতে দেননি ফ্লেচার, সঙ্গী হিসেবে পান ইয়াসির আলি রাব্বিকে। শেষ ২৪ বলে দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৫৬ রান। সে সময় ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন দুই ব্যাটসম্যান। শরিফুলের করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে ১৩ ও মৃত্যুঞ্জয়ের করা ১৮ নম্বর ওভার থেকে তোলেন ১৯ রান। যদিও ১৯ নম্বর ওভারে প্রথম বলে শরিফুলকে ছক্কা হাঁকানোর পর দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন রাব্বি। 

ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরে যায় রাব্বির আউটেই। ২৪ বলে ৪৫ রান করে রাব্বি সাজঘরে ফিরলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬ রান। ক্রিজে সেট ব্যাটসম্যান ফ্লেচার। তবে ম্যাচ বের করতে পারলেন না তিনি। ইনিংসের ২০তম ওভারে হাত ঘোরাতে এসে মিরাজ দেন মাত্র ৮ রান। এতে ১৮২ রানে থামে খুলনা। ৭ রানে পাওয়া জয়ে কোয়ালিফায়ারের টিকিট পেল চট্টগ্রাম। বিদায় নিতে হলো খুলনাকে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি। ফুড পয়জনিংয়ের কারণে এ ম্যাচে খেলতে পারেননি দলের নির্ভরযোগ্য ওপেনার উইল জ্যাকস। তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পেয়ে ইনিংস শুরু করেন কেনার লুইস। লুইসের সঙ্গী জাকির হাসান। তবে থিতু হওয়ার আগেই ইনিংসের প্রথম ওভারে খালেদের বলে সাজঘরে জাকির। ফ্লেচারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিজের খেলা প্রথম বলেই।

সেই ধাক্কা সামলানোর আগেই রুয়েল মিয়ার শিকার অধিনায়ক আফিফ হোসেন। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন ৩ রানে। ১৬ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলেন দুই বিদেশি কেনার আর ওয়ালটন। তৃতীয় উইকেটে দুজনের পার্টনারশিপ থেকে আসে ৩৮ রান। ৩২ বলে ৩৯ রান করে লুইস সাজঘরে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। খানিক পর শামীম হোসেন পাটোয়ারি শেখ মেহেদী হাসানের শিকার হন ৭ বলে ১০ রান করে।

১০ ওভার শেষ না হতেই ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বড় সংগ্রহের স্বপ্নে ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। তবে দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান ওয়ালটন। পঞ্চম উইকেটে তার সঙ্গী হয়ে ওঠেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ালটন-মিরাজ গড়েন ১১৫ রানের পার্টনারশিপ। শেষ ওভারে বিদায় নেওয়ার আগে ৩০ বলে ৩৬ রান করেন মিরাজ। 

তবে অল্পের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পাননি ওয়ালটন। ৪৪ বলের মোকাবেলায় ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকেন, হাঁকান আসরে নিজের প্রথম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ৭টি করে চার-ছক্কা। ওয়ালটনের এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রামের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৯ রান। ৩ বলে ৮ রান করে অপরাজিত থাকেন বেনি হাওয়েল। খুলনার পক্ষে খালেদ শিকার করেন ২টি উইকেট।

টিআইএস