গেল বছর লিওনেল মেসির বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ, আর এরপর পিএসজি যাত্রাটা অনেক বড় এক চমক হয়েই এসেছিল ফুটবল বিশ্বে। শুধু সমর্থকই নয়, এমনকি তার সতীর্থরাও এতে চমকে গিয়েছিলেন বেশ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তার স্বদেশি পিএসজি সতীর্থ লিয়ান্দ্রো পারেদেস। তিনি জানান, মেসি আগের দিনই তাদের বলেছিলেন বার্সেলোনাতেই থাকছেন তিনি, তার ঠিক এক দিন পরই সিদ্ধান্তটা বদলাতে হয় আর্জেন্টাইন তারকাকে। 

বার্সেলোনার হাত ধরেই আর্জেন্টিনা থেকে ইউরোপে আসা হয়েছিল মেসির। এরপর লা মাসিয়া, বয়সভিত্তিক সব দল পেরিয়ে আসা মূল দলে। জাভি-ইনিয়েস্তাদের সঙ্গে মূল দলে আসার পর ১৭টা বছর তিনি ছিলেন ন্যু ক্যাম্পে। 

তবে তাতেই গেল বছর ছেদ পড়ে বার্সেলোনার আর্থিক দুরাবস্থার কারণে। এতটাই সমস্যায় ছিল দলটি যে মেসিকে তার বেতনের সিংহভাগ ছেড়ে দিলেও ধরে রাখা সম্ভব হতো না। ফলে ন্যু ক্যাম্প থেকে কান্নাভেজা বিদায়ই শেষমেশ নিয়তি হয় মেসির। পিএসজি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সে সময় ছয় বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীকে দলে ভেড়ায়। সম্প্রতি টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই গল্পের ভেতরের কাহিনিটা শুনিয়েছেন পারেদেস। 
বার্সায় না থাকার সেই ঘোষণা আসার আগের দিনে ইবিজা সৈকতে নেইমার, পারেদেস, ডি মারিয়াদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিলেন মেসি। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছিল মুহূর্তে। এ নিয়ে শুরু হয়েছিল মেসির পিএসজিতে যাওয়ার গুঞ্জনও, কারণ সেই খেলোয়াড়দের সবাই যে ছিলেন ফরাসি দলটির।  

সে খবর যে ভিত্তিতে করা হয়েছে, সেটা সত্য না হলেও পারেদেসরা তাকে পিএসজিতে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে আর্জেন্টাইন এই মহাতারকার মনে তখন ছিল কেবলই বার্সায় থাকার ইচ্ছা। এর এক দিন পরেই পরিস্থিতি পুরো ১৮০ ডিগ্রি উলটে গিয়েছিল।

পারেদেসের ভাষ্য, ‘আমরা এর আগের দিন ইবিজায় তার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সে পরের দিন বার্সার সঙ্গে চুক্তিতে সই করার জন্য চলে যাওয়ার কথা ছিল, এতটুকুই। আমরা তাকে বলেছিলাম, আমাদের সঙ্গে চলে এসো। কিন্তু সে আমাদের বলেছিল, আমি ইতোমধ্যেই সব গুছিয়ে ফেলেছি, কাল আমি সেখানে যাচ্ছি কেবল সইটা করতে।’

এর ঠিক পরের দিনই আসে সেই ঘোষণাটা। পারেদেস বলেন, ‘আমি জানি না বার্সেলোনায় কী হয়েছিল, কারণ সেই রাতেই তো তার চুক্তি সই করার কথা। সেই রাতেই সে আমাদের বলে, সে এখানে আসছে। তখন প্রথমে আমরা তাকে বিশ্বাসই করিনি।’

তখন পারেদেসের অবিশ্বাসটা এতই গাঢ় ছিল যে তিনি মেসিকে পিএসজির জার্সিতে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাসই করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, যতক্ষণ না তুমি চুক্তি সই করছ, আর তোমাকে যতক্ষণ না পিএসজির জার্সিতে দেখছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাকে বিশ্বাসই করছি না।’

পরের গল্পটা সবারই জানা, মেসি শেষমেশ গিয়েছেন পিএসজিতেই। তবে নতুন ক্লাবে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। আগে যেমন গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন প্রতি মৌসুমে, মেসি পিএসজির হয়ে তেমনটা করতে পারেননি মোটেও। যে কারণে এক বছর পেরোনোর অনেক আগেই সমর্থকদের চক্ষুশূলও হয়ে যেতে হয়েছে তাকে। হজম করতে হয়েছে দুয়ো। 

সেটাই অবাক করেছে পারেদেসকে। তিনি বলেন, ‘যখন তারা তাকে দুয়ো দিয়েছে, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। এমন কিছু বিষয় আছে যা আমরা স্রেফ সামলাতে পারি না। এটা পাগলাটে ছিল।’

এনইউ