আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ

২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনেও ফুটবল অঙ্গনে উত্তেজনা। রেফারিং সমালোচনা ইস্যুর পর এখন আলোচিত বিষয় ‘ফিক্সিং’। পাতানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের তীর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের ওপর। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে চিঠি দিয়েছে। আজ (রোববার) সকালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বাফুফেকে তাদের জবাব দিয়েছে।

আরামবাগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘আরামবাগ ক্লাব কোনো পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত নয়। বাফুফের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে সেক্ষেত্রে আরামবাগ প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত।’ 

আরামবাগের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে চিঠি প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফেডারেশনের চিঠি আমি পেয়েছিলাম। তাই আমিই ক্লাবের হয়ে চিঠির উত্তর দিলাম। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা পাতানো বা কিছুর সঙ্গে জড়িত নই। আমরাও চাই পাতানো মুক্ত থাকুক লিগ। আমরা সুষ্ঠ তদন্ত চাই ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে।’

আরামবাগের পাশাপাশি ব্রাদার্স ইউনিয়নেরও নাম এসেছে ম্যাচ পাতানোয়। ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার ও বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্য আমের খান অবশ্য এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় কোনোভাবেই বুঝতেই পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘ম্যাচ যদি পাতানোর অভিযোগ উঠেই থাকে তাহলে শুধু আরামবাগ ও ব্রাদার্সকে নিয়ে কেন তদন্ত হবে। সন্দেহভাজন ম্যাচগুলোতে আরামবাগ ও ব্রাদার্সের প্রতিপক্ষ দলগুলোকেও এই তদন্তের আওতায় অবশ্যই থাকতে হবে।’ 

আরামবাগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলীও আমেরের সাথে এক মত, ‘পাতানো সন্দেহ থাকলে তো স্বাভাবিক নিয়মে অন্য দলের সম্পৃক্ত থাকার কথা। আমাদের উপর সন্দেহ এসেছে। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে আমাদের ওপর থেকে সন্দেহের তীর দূর হোক।’ 

ফিক্সিং ইস্যুতে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবর, ব্রাদার্স ও আরামবাগ সরাসরি ম্যাচ পাতানো (ম্যাচ ছেড়ে দেয়া/পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া) নয় খেলোয়াড় উঠিয়ে নেওয়া, গোল বেশি খাওয়া, বিদেশি ফুটবলার খেলানো বা খেলানো নিয়ে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। 

ব্রাদার্সের ম্যানেজার এই অংশের সঙ্গেও তীব্রভাবে দ্বিমত পোষণ করছেন, ‘অন্য দলের বা অন্য কিছু স্বার্থ না থাকলে কেন এক দল রেলিগেশন জোনে থাকাবস্থায় এমন কাজ করতে পারে। ব্রাদার্স ও আরামবাগ দুই দলেরই মাত্র এক পয়েন্ট। বাফুফের চিঠির ভাষ্য ও প্রাপ্ত তথ্য কোনো কিছুই আমার কাছে সামঞ্জস্য ও বোধগম্য হচ্ছে না। কোনো খেলোয়াড়কে তারা সন্দেহ করলে সেটা স্পষ্ট করে বলুক। আমাদেরও জানা দরকার।’ 

ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ের মতো ফুটবলে ম্যান ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছে মূলত। তবে বাফুফে ব্রাদার্স ও আরামবাগ উভয় ক্লাবকে চিঠিতে স্পষ্টভাবে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগের কথা উল্লেখ করায় বিষয়টি আরও ঘোলাটে হয়েছে।

আরামবাগ ক্লাব অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ভারত থেকে কোচিং স্টাফ আনা, মৌসুম শুরুর আগে নীলফামারীতে ট্রেনিং করা আবার হঠাৎ করে ভারতীয় কোচ বিদায় করে ব্রাজিলিয়ান কোচ আনায় আরামবাগকে অনেক বেশি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 

এসব প্রশ্নের ব্যাপারে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের উত্তর, ‘কোচ আনা-বাদ দেওয়া সব কিছুই করেছেন মিনহাজ সাহেব (আরামবাগের সভাপতি )। তিনি আমাদের ক্লাবের অর্থসংস্থান করেছেন। এজন্য তাকে সভাপতি করেছি আমরা কিন্তু সে এখনো বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক। এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম আমরা প্রকাশ করিনি।’ 

ফুটবলসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাধ্যমে মিনহাজকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে আরামবাগের ওপর ম্যাচ পাতানো অভিযোগ ইস্যুতে। তবে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত সভাপতির কোনো দোষ দেখছেন না, ‘তিনি আমাদের দল গড়তে ও পরিচালনায় সহায়তা করছেন। বাইরে ভেন্যু নেওয়া (মুন্সিগঞ্জ আরামবাগের ভেন্যু) সহ দলের সব কিছুই তারা কয়েকজন করছেন। অভিযোগ যে কারও নামে উঠতেই পারে। প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা ঠিক নয়’।

২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটি থাকলেও আরামবাগের চিঠি গ্রহণ করেছে।  দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ এই ফিক্সিং ইস্যুতে বাফুফের পরবর্তী পদক্ষেপ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এই সংক্রান্ত আমাদের আলাদা কমিটি (পাতানো খেলা শনাক্তকরণ কমিটি) রয়েছে। তারা বিষয়টি সুচারুরুপে দেখবে। বাফুফে সচিবলায় তাদের সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোর কাছে আরও তথ্য চাওয়া হতে পারে।’  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ফুটবলে ম্যান ফিক্সিংয়ের অভিযোগ একেবারে নতুন হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় অবশ্য নতুন নয়। নেপালের কয়েকজন ফুটবলার ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যক্তিগতভাবে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতেন। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর পাঁচজন ফুটবলার সাজা পান।

এজেড/এমএইচ