ফরাসি ক্লাব পিএসজির বর্তমান অবস্থাকে বিধ্বস্ত কোনো নগরীর সঙ্গে তুলনা করা যায়! টানা হারে বিপর্যস্ত ড্রেসিং রুম, তারকা ফুটবলারদের চোট সমস্যা এবং মেসি-নেইমারের দল ছাড়ার গুঞ্জন মিলিয়ে একেবারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এর ভেতরই দলের উপদেষ্টা লুইস ক্যাম্পোসের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন নেইমার। তারও আগে ফরাসি কাপ থেকে বিদায়, চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে প্রথম লেগে পরাজয়সহ টানা তিন ম্যাচে হার দেখেছে দলটি। সবমিলিয়ে দলের ব্যর্থতার দায়ভার কোচ ক্রিস্তফ গ্যালতিয়ের ওপরও বর্তাচ্ছে। সে কারণে ধুঁকতে থাকা দলের সঙ্গে তার ভাগ্যও দুলছে।

২০২২ সালের ৫ জুলাই পিএসজির প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন গ্যালতিয়ে। গত চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতার কারণে তার আগে মরিসিও পচেত্তিনোকে অপসারণ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মৌসুমের মাঝপথেই সাবেক পিএসজি ফুটবলার পচেত্তিনোকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ দেওয়ার মৌসুমে দলটি ফরাসি শিরোপা জিততে ব্যর্থ হন। পরের মৌসুমে লিগ শিরোপা জিতলেও ক্লাবের মূল লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে জয়। কিন্তু রিয়ালের কাছে হেরে বিদায়ের পর কার্যত পতেত্তিনোর বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যায়। সেই পেন্ডুলামটি একইভাবে এবার গ্যালতিয়ের জন্যও ফিরে এসেছে।

আরও পড়ুন : ‘নেইমারকে নিতে পিএসজিকে ইংলিশ ক্লাবের অফার’

সাধারণত বড় দলগুলোতে কোচের ভাগ্য নির্ভর করে বড় ম্যাচে পারফরম্যান্সের ওপর। তবে দলটির নাম যদি হয় পিএসজি, তবে কথাটা যেন আরও বেশি সত্যি। গালতিয়েরও এখন সেই শঙ্কায় আছেন। এই কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর অবশ্য অনেকেই তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। টানা তিন ম্যাচ হারের পর বিরোধী শিবিরের অবস্থানও এখন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ২০১১ সালের পর আর কখনোই টানা তিন ম্যাচে হারেনি পিএসজি।

পিএসজির এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের জন্য গালতিয়ের কোচিংয়ের ধরনকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। একই ফরমেশনে বৈচিত্র্যহীনভাবে তিনি দলকে খেলিয়ে যাচ্ছেন। এখন দলটির খেলার ধরনও সবাই বুঝে গেছে। বায়ার্নের বিপক্ষেও চাপের মুখে ভিন্ন কিছু করে চমকে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন পিএসজি কোচ। একইসঙ্গে একের পর এক তারকা ফুটবলারদের ইনজুরিতেও ম্যাচে তাদের বিকল্প ফরমেশন সাজাতে ব্যর্থ গ্যালতিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এমবাপের সঙ্গে নেইমারের সম্পর্কের ফাটল প্রকাশ্যে আলোচিত হয়ে আসছে। ঘরের খবর এভাবে বাইরে আসায় দলের বাইরে যেমন খেলোয়াড়দের ইমেজ সঙ্কটে ফেলেছে, তেমনি তাদের পারস্পরিক সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। 

শিষ্যদের ভেতর এ নাজুক সম্পর্ক উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি গ্যালতিয়েকে। একইসঙ্গে দলের শোচনীয় অবস্থা নিরসনে তিনি তারকা ফুটবলারদের মাঝে সমন্বয়ও তৈরি করতে পারেননি। এসব বিষয়ের ধারাবাহিকতায় ফরাসি সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্টস বলছে, ৮ মার্চ বায়ার্নের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে বিদায় নিতে হতে পারে গালতিয়েরকে। এই ফরাসি কোচের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সেই ম্যাচের ফলাফলের ওপর।

আরও পড়ুন : ‘পিএসজিতে অনিশ্চিত মেসি’

এক্ষেত্রে গ্যালতিয়ের পর মেসিদের কোচ কে হবেন- তা নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে গণমাধ্যমটি। তাদের মতে, ফ্রান্সের জাতীয় দলের কোচ হতে চাওয়া সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার জিনেদিন জিদানই হবেন নেইমার-এমবাপেদের পরবর্তী গুরু। এদিকে, ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী দিদিয়ের দেশমের সঙ্গে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছে। সে হিসেবে ক্লাবটির কোচ হতে জিদানের সামনে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে তার আগে বায়ার্ন ম্যাচের ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে ক্লাব সংশ্লিষ্টদের।

এএইচএস