কাতার বিশ্বকাপটা লিওনেল মেসির জন্য যদি হয়ে থাকে আজীবন বাধাই করে রাখার মতো স্মৃতি, তবে তার ঠিক বিপরীত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য। মরক্কোর কাছে হেরে পর্তুগালের বিদায়ের পর স্টেডিয়ামের টানেল ধরে রোনালদোর কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্যটা কখনো ভুলতে পারবেন পর্তুগিজ রাজপুত্র? তার সমর্থকরাই বা কেমন করে ভুলে থাকবেন? কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া রোনালদো যেন সেদিন জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক। অথচ এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল? 

পর্তুগালের হয়ে অজস্র অভিযানের নায়ক রোনালদোর নেতৃত্বে অধরা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি জয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাতারে পা রেখেছিল পর্তুগাল। একের পর এক জয়ে দলটা উড়ছিল ঠিকই, কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সিআরসেভেনকে। একসময় আবিষ্কার করলেন পর্তুগালের প্রথম একাদশেই নেই তার নাম! মাঠের চেয়ে বেঞ্চ গরম করতেই বেশি দেখা গেল রোনালদোকে। গত এক দশকে এমন দৃশ্য কল্পনা করাটাও লোকে বড্ড বাড়াবাড়ি ভাবতো। এরপর তো কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে মঞ্চ ত্যাগ। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ থেকে একজন অলটাইম গ্রেটের এমন রিক্ত হাতে বিদায় তো শেকসপিয়ারের ট্রাজেডির চেয়ে কম হৃদয়বিদারক নয়।

সময়টা ভালো যাচ্ছিল না বিশ্বকাপের আগে থেকেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে একপ্রকার বিবাদ করেই চলে এসেছিলেন। ইংল্যান্ড ছাড়ার পর কাতার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিলেন ক্লাবহীন থাকাবস্থায়। তবে মরুর দেশের বিশ্বকাপটা ভুলে যেতেই চাইবেন পর্তুগিজ মহাতারকা। বয়সটা ৩৮, ফর্মটা পড়তির দিকে। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন রোনালদো। ইউরোপ ছেড়ে সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়ে শুরুর সময়টা তিনি বিদ্রুপ আর ফর্ম-হীনতায় কাটান। ধীরে ধীরে নিজের ছন্দে ফিরেছেন। তার মাঝেই বিরতি দিয়ে দেশের জার্সিতে খেলার ডাক পড়েছে জনপ্রিয় এই তারকার। আর এত দিন পর এসে ক্যারিয়ারের সেই খারাপ সময় নিয়ে মুখ খুললেন রোনালদো। 

ভুলে যাবার মতো সময়ের কথা স্বীকার করে রোনালদো বলেছেন, ‘কে তোমার পাশে আছে, সেটা দেখার জন্য এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যে যেতে হয়। কঠিন সময়েই বোঝা যায় কে পাশে আছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, ক্যারিয়ারে খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি, এ নিয়ে অনুশোচনা নেই। জীবন চলে যায়, ভালো খারাপ যাই করি, আর এটা আমার অভিযাত্রার একটা অংশ।’

ক্লাব বদল নিয়েও কম কথা শুনতে হয়নি তাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, য়্যুভেন্তাস মাতানো তারকা নাকি দল পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে থিতু হয়ে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তবে সমালোচনা থামেনি। ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ছেড়ে সৌদি আরবের অপেক্ষাকৃত দুর্বল লিগে যাওয়ার কারণে অনেক সমালোচনা তাকে নিয়ে।

তবে সমালোচনায় কান দিচ্ছেন না রোনালদো। বরং নিজেকে আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত মনে করছেন তিনি, 'পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না যে, নিচে কী আছে। আমি এখন আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত, এই শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত কয়েক মাসে যা ঘটেছে, এমন কিছু আমার সঙ্গে কখনো ঘটেনি। এটা আমাকে আরও ভালো মানুষও বানিয়েছে।'

এফআই