ছবি-সংগৃহীত

বাংলাদেশের ফুটবলে ঐতিহ্যবাহী দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। সেই দল এবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়েছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। অবনমিত হয়েও প্রিমিয়ারে টিকে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্লাবটি। 

অবনমন নিশ্চিত হওয়ার আগেই ফেডারেশনকে রেলিগেশনের সংখ্যা কমানোর আবদার করেছিল মুক্তিযোদ্ধাসহ আরও তিনটি ক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অবনমন নিশ্চিত হওয়ায় আজ পুনরায় আবেদন করবে বিশেষ বিবেচনায় তাদের লিগে রাখার জন্য। ক্লাবটির ম্যানেজার আরিফুল ইসলামের যুক্তি, ‘প্রিমিয়ার লিগে জোড় সংখ্যক দল থাকার জন্য এবার দু’টির পরিবর্তে একটি রেলিগেশনের দাবি আমরা কয়েকটি ক্লাব আগেই জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি ক্লাব সেটিরও বিবেচনা করার অনুরোধ থাকবে ফেডারেশনের কাছে।’

দুই মৌসুম আগে ঐতিহ্যহাবী ব্রাদার্স ইউনিয়ন প্রিমিয়ার থেকে অবনমিত হয়। করোনা সংকট নানা ইস্যুতে ব্রাদার্স ইউনিয়ন অবনমিত না করার অনুরোধ করেও রক্ষা পায়নি। ফুটবল ফেডারেশন গত কয়েক মৌসুমে রেলিগেশন নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকলেও এবার খানিকটা নমনীয়তা লক্ষণীয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অবনমনের বিষয়ে বাফুফের নীতি নির্ধারকরা ভাবছেন। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অবনমনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করার মন্তব্যও করেছেন ইতোমধ্যে। 
 
গত কয়েকটি মৌসুম লিগের বাইলজ অনুসরণ করেই অবনমন করা হয়েছে। ব্রাদার্সের মতো ক্লাবের আবেদনও অগ্রাহ্য হয়েছে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ প্রদান করলে বাফুফের নিয়ম-নীতি ভঙ্গের প্রশ্ন উঠবে। আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ক্লাবটির নামের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার আবেগ ও চেতনা জড়িত। আবেগের সাথে নিয়মের দ্বান্দ্বিকতার মধ্যে পড়েছে বাফুফে। এই দোটানা কাটানোর উপযুক্তক্ষেত্র নির্বাহী সভা হতে চলছে বলে জানা গেছে। সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবনা বাফুফে সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী সালাউদ্দিনের। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অবনমনের বিষয়ে বাফুফের নীতি নির্ধারকরা ভাবছেন। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অবনমনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করার মন্তব্যও করেছেন ইতোমধ্যে

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হলেও গত কয়েক মৌসুম ধরেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়ছিল। বিগত মৌসুমগুলোতে কোনো রকম টিকে গেলেও এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার এমন পরিস্থিতিতে যারপরনাই ব্যথিত জাতীয় দলের বর্তমান সহকারী কোচ ও সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন, ‘আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধায় না খেলে যদি আবাহনী-মোহামেডানে খেলতাম তাহলে অনেকেই আমাকে কিংবদন্তির কাতারেই রাখত। এত বিসর্জন দিয়ে যে ক্লাবের জন্য খেলেছি সেই ক্লাব এখন শীর্ষ স্তরে নেই এর চেয়ে কষ্টকর জিনিস আর হতে পারে না।’

ক্লাবের এই পরিস্থিতির জন্য ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করলেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের সাবেক এই ফুটবলার, ‘ক্লাবটি কয়েক বছর ধরেই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কর্তৃপক্ষ এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। এর পরিণতিতে এমন ফলাফল।’ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের মাধ্যমেই পরিচালিত হতো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। পাঁচ বছরের বেশি সময় কাউন্সিলে নির্বাচন নেই। ফলে এর প্রভাব পড়ছে ক্লাবেও। 

কাউন্সিলের হেড অফ অ্যাকাউন্টস লিঙ্কন ক্লাবের আর্থিক দিকটি তুলে ধরলেন এভাবেই, ‘চলতি ফুটবল মৌসুমের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি টাকা দিয়েছিল। ঐ টাকার অধিকাংশ গত মৌসুমের বকেয়া ছিল। চলতি মৌসুমেও আমাদের দেনা কোটি টাকার উপরে।’ দেনার মধ্যে জর্জরিত হওয়ার কারণটিও ব্যাখ্যা দিলেন, ‘আমাদের ক্লাবের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল হাউজি। সেটা বন্ধ হওয়ায় নিয়মিত আয় নেই,স্পন্সরও নেই। আমাদের অনেকের বেতনই বকেয়া। ’

এজেড/এফআই