সাইফুল বারী টিটু

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ ইস্যু নিয়ে গোটা বিশ্ব টালমাটাল। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরাও ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই বিবর্তন নিয়ে চিন্তিত ও শঙ্কিত। সমর্থকদের মতো শীর্ষ ১২ ক্লাবের সিদ্ধান্তে হতাশ দেশের অন্যতম সেরা ফুটবল কোচ ও বিশ্লেষক সাইফুল বারী টিটু। ১২ ক্লাবের এই সিদ্ধান্তকে তিনি দেখছেন এভাবে, ‘ফুটবলের সাথে বাণিজ্য অনেক দিন যাবতই ছিল। এটা হলে বাণিজ্য ছাপিয়ে যাবে ফুটবলকে। ফুটবলে চিরাচরিত মজা হচ্ছে আপসেট বা অঘটন। বড় দলগুলোর সঙ্গে বড় দলগুলো খেললে ফুটবলের সেই আনন্দ আর থাকবে না।’

সুপার লিগের গঠন ও পদ্ধতিতে বড় বৈষম্য দেখছেন টিটু, ‘১২ ক্লাবের মধ্যে ৬টি ইংলিশ ক্লাব। ইংলিশদের আধিপত্য স্পষ্ট। ২০ দলের টুর্নামেন্টে ১৫ দল ফিক্সড থাকবে। এটা ফুটবলের মৌলিক নীতির চরম পরিপন্থী। রেলিগেশন এড়ানোর যে আনন্দ, মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে ওঠার যে আনন্দ সেটার ঊর্ধ্বে থাকবে ১৫ দল।’ সামগ্রিকভাবে খুব হতাশ সাবেক জাতীয় এই ফুটবলার, ‘ফুটবলকে ফিফা ওয়ে অফ লাইফ বলে। জীবনের বড় একটা অনুষঙ্গ। আমাদের প্রজন্ম বা পরবর্তী প্রজন্ম ফুটবলের প্রতি যে আবেগ ছিল সেই আবেগ আর থাকবে না।’

ফুটবলে বাণিজ্যিক ধারা বেশি বয়ে যাওয়ায় মানও কিছুটা কমতির দিকে মনে করেন এই বিশ্লেষক, ‘এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে ভুল দেখি। এই মানের ভুল আমরা যখন ফুটবল খেলতাম তখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখেনি। সাম্প্রতিক সময়ে মেসি ও রোনালদো মানের ফুটবলার আমরা পাচ্ছি না। নেইমারকে তাদের পরবর্তী তারকা ধরা হলেও নেইমার সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি।’

ভবিষ্যতে মেসি ও রোনালদো মানের ফুটবলার পাওয়া বড় সংকট হবে মনে করেন তিনি। এর পেছনেও কারণ বাণিজ্য, ‘অতি অসাধারণ হতে হলে নিজেকে বাড়তি অনুশীলনে রাখতে হয়। ফুটবলাররা এখন এজেন্ট নির্ভর। খানিকটা তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর এজেন্টরা খেলোয়াড়দের বাড়তি অনুশীলন বিশ্রামের চেয়ে বিজ্ঞাপন, শুটিংয়ে বেশি মনোযোগী হয়। ফলে নিজেকে নিজের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।’

চ্যাম্পিয়নস লিগের চ্যাম্পিয়ন মানির তুলনায় সুপার লিগের অংশগ্রহণ ফি অনেক বেশি। অর্থের এই ঝনঝনানিতে বড় বিপত্তি দেখছেন টিটু, ‘বড় ক্লাবগুলোর অনেক ব্যয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তারা এই প্রস্তাব লুফে নেবেই। উয়েফা একটা মডেলের আলোকে ট্রান্সফার ফি নিয়ন্ত্রণ করে। এরা উয়েফার বাইরে চলে গেলে তখন খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে একটা সমস্যা হতে পারে।’

ফুটবলাররা এখন পর্যন্ত মুখ খুলেননি এই বিষয়ে। তাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় টিটু, ‘সাবেক ম্যানইউ ফুটবলার রিও ফার্দিনান্দ কড়া সমালোচনা করেছেন। বর্তমানরা এখনো কিছু বলেননি। খেলোয়াড়েরা ক্লাবের কাছে দায়বদ্ধ থাকলেও জাতীয় দলের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তারা কতটুকু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সেটাই দেখার বিষয়।’

এজেড/এটি/টিআইএস