প্রায় ১ যুগ ধরে একে অপরের বিপক্ষে লড়ছেন পেপ গার্দিওলা এবং ইউর্গেন ক্লপ। জার্মানিতে দুজন ছিলেন লিগের সেরা দুই ক্লাবের কোচ। বায়ার্ন মিউনিখ ছিল ধনী শ্রেণীর আশীর্বাদপুষ্ট, বিপরীতে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছিল খনি অঞ্চলের শ্রমিকদের ক্লাব। ক্লপ সাদামাটা। মোটা ফ্রেমের চশমা আর ট্র্যাক-স্যুট পরে বুরুশিয়াকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর গার্দিওলা তার ফুটবল মস্তিষ্কের মতোই পোশাকেও পরিপাটি।

ইংল্যান্ডে এসেও চিত্রটা একই। ক্লপ এসেছেন মার্সিসাইডের ক্লাব লিভারপুলে। ইংল্যান্ডের বন্দরের শ্রমিকদের ঘামের বিনিময়ে উঠে এসেছে অ্যানফিল্ড রোডের প্রতিনিধিরা। আর ম্যানচেস্টারের ধনী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ম্যানচেস্টার সিটি। আরও স্পষ্ট করে বললে ফুটবলে আরব বিশ্বের পেট্রোডলারের প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ম্যানসিটিতে। সেই ক্লাবের কোচ পেপ গার্দিওলা। 

কিন্তু দুজনের মধ্যে লড়াই চলে সমানে সমান। শেষ ৬ বছরে ম্যানসিটির একক অধিপত্যে ভাগ বসাতে পেরেছে কেবল লিভারপুলই। আর দুবার সিটিজেন্স লিগ শিরোপা জিতেছে শেষ দিনে গিয়ে। সেটাও কেবল ১ পয়েন্টের ব্যবধানে। ইউর্গেন ক্লপ এবং পেপ গার্দিওলার দ্বৈরথ ঠিক এতটাই উত্তেজনা ছড়িয়েছে গত এক যুগ ধরে। 

এবারের মৌসুমের ভাগ্যটাও অনেকাংশে নির্ভর করছে এই এক ম্যাচের ওপরেই। গতকাল রাতে ব্রেন্টফোর্ডকে হারিয়ে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে সবার ওপরে উঠে এসেছে আর্সেনাল। ১ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে লিভারপুল। আর লিভারপুলের চেয়ে এক পয়েন্ট কম নিয়ে তিনে ম্যানসিটি। এই ম্যাচে যারাই জয় পাবে, তারাই অনেকটা এগিয়ে থাকবে শিরোপার দৌড়ে। তবে পরের ম্যাচেই ম্যানসিটি এবং আর্সেনালের ম্যাচটাও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ভাগ্য নির্ধারণে রাখবে বড় ভূমিকা। 

ম্যাচ হবে লিভারপুলের ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে। গত ২০ বছরে যেখানে কেবল একবারই জয় পেয়েছে সিটিজেন্সরা। সেটাও কোভিড-১৯ মহামারীর দিনে, ফাঁকা গ্যালারির সামনে। এরপর থেকে অ্যানফিল্ডে জয় পায়নি পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। তবে প্রিমিয়ার লিগ বা অন্যান্য প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দুই দলের পরিসংখ্যান প্রায় সমানে সমান। 

লিগে দুই দলের শেষ ৫ দেখায় ৩ বারই হয়েছে ড্র। একবার করে জিতেছে ম্যানসিটি এবং লিভারপুল। এমনকি চলতি মৌসুমের ম্যাচেও ফলাফল ছিল ড্র। আর সবমিলিয়ে শেষ ১০ ম্যাচের হিসেবে ৪ ম্যাচ ছিল ড্র। ম্যানসিটি এবং লিভারপুল উভয়ে জয় পেয়েছে ৩টি করে ম্যাচে।

এই ম্যাচের আগে অবশ্য কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে ম্যানসিটি। দলে কেভিন ডি ব্রুইনা ফিরেছেন। আর্লিং হালান্ড ও ফিল ফোডেনরা আছেন দুর্দান্ত ছন্দে। বার্নাদো সিলভা, রদ্রিরা আছেন মাঝমাঠের দখল নিতে। কাইল ওয়াকার কিছুটা ফর্মহীনতায় থাকলেও রক্ষণে রুবেন দিয়াজ, নাথান আকে আছেন প্রাচীরের দেয়াল হয়ে। আর গোলবারের নিচে থাকছেন এডারসন মোয়ারেস। 

লিভারপুল ঘরের মাঠে খেললেও তাদের প্রধান দুশ্চিন্তা ইনজুরি। একের পর এক ইনজুরিতে এবারের অলরেড শিবির রীতিমত ক্লিনিকে পরিণত হয়েছে। দলের বড় তারকা মোহাম্মেদ সালাহ পুরো ফিট কিনা তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। এই মৌসুমে দলের প্রাণভোমরা হয়ে ওঠা ডমিনিক সবোস্লাইও পুরো ফিট নন। যদিও তাদের শুরুর একাদশে দেখা যেতে পারে। শঙ্কা আছে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডকে নিয়েও। 

তবে মাঝমাঠে ওয়াতারু এন্ডো এবং অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার আছেন দারুণ ছন্দে। নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ডারউইন নুনিয়েজ। অলরেডদের জন্য তুরুপের তাস হতে পারেন এরাই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কে হাসিমুখে ফিরবেন তা জানা যাবে ৯০ মিনিটের ধ্রূপদী লড়াই শেষে। 

জেএ