এরিকসেন অনুপ্রেরণায় নকআউটে ড্যানিশ রূপকথা
ছবিটা যেন প্রতীকী। ডেনমার্ক ভাসছে উল্লাসে, আর রাশানরা অপাংক্তেয়। ম্যাচেও তো ঘটেছে তাই! ছবি: মার্কা
সেই একই তেলিয়া পার্কেন স্টেডিয়াম। নয় দিন আগে আর পরের দৃশ্যটা রীতিমতো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, পৃথিবীর এ মেরু-ও মেরু! সেদিন মনোযোগ নড়ে যাওয়া ডেনমার্ক ম্যাচটা হেরেছিল ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে; সেই দলটা এভাবে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে শেষ ম্যাচে এসেও উঠে যাবে শেষ ষোলয়, ভেবেছিলেন আপনি?
রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ডেনমার্ক হয়তো ভেবেছিল। নাহলে শেষ ম্যাচে এসে ৪-১ ব্যবধানে টুর্নামেন্টের ‘ডার্ক হর্স’ রাশিয়াকে এভাবে উড়িয়ে দেওয়া, দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা কি আর সম্ভব ছিল?
বিজ্ঞাপন
দুই ম্যাচে জয় নেই। তবু একটা আশা ছিল, নিজেদের ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে যদি কোনোক্রমে গ্রুপের তৃতীয় স্থানটাও বাগানো যায় তবে শীর্ষ চারটা তৃতীয় দলের একটা হয়েও যে চলে যাওয়া যায় পরের রাউন্ডে। তবে তার জন্য আগে নিজেদের ম্যাচে জয়টা তুলে নিতে হতো।
তবে তার আগে মিলেছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণাটা। যেই এরিকসেনকে মাঠ থেকে হারিয়েছিলেন সবাই, সেই এরিকসেনই হাসপাতাল ছেড়ে সরাসরি চলে এসেছিলেন অনুশীলন মাঠে।
বিজ্ঞাপন
দর্শকরা তো ছিলেনই। মাঠের বাইরে একটা প্রকাণ্ড লাল ড্যানিশ জার্সি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তারা, যেখানে নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘হেল্টে’ বা নায়ক। এরিকসেন মাঠে মুষড়ে পড়ার পর যা করেছেন সব খেলোয়াড়, তাতেই তো বীরত্বগাঁথা লেখা হয়ে গিয়েছিল! তার সম্মানেই এদিন সমর্থকরা একটা ছোট্ট নিবেদন নিয়ে এসেছিলেন স্টেডিয়ামে।
এমন সব অনুপ্রেরণা যখন থাকে, একটা দলের সফল না হওয়ার কী কারণ থাকে! তবে তাদের সফলতা তুলে নেওয়ার পথ কঠিন করে তোলার যথাসম্ভব চেষ্টাটাই করে গেছে রাশিয়া। দারুণ পোক্ত রক্ষণ, জানপ্রাণ দিয়ে করা সব ট্যাকল, ক্রস ব্লক কিংবা মাঝমাঠ থেকে খেলোয়াড়দের সব দৌড় কড়া প্রহরায় রেখে ডেনমার্ককে অপেক্ষায় রেখেছিল ৩৮ মিনিট পর্যন্ত।
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 21, 2021
বিরতি থেকে সাত মিনিট আগে রাশান দুর্গে যেন মিসাইল ছুঁড়ল ডেনমার্ক। বক্সের একটু বাইরে ছোট একটা স্পেস পেলেন ২০ বছর বয়সী মিকেল ড্যামসগার্ড। দুই সেন্টারব্যাকের পাশ দিয়ে তার করা দারুণ শট আছড়ে পড়ে রাশিয়ার জালে, ১-০ গোলে এগোয় ডেনমার্ক। একটু পরে ড্যানিশদের ইউরো ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ এই গোলদাতার বাড়ানো বলে ইউসুফ পোলসেনের শট যদি বেরিয়ে না যেত লক্ষ্যের একটু বাইরে দিয়ে, তাহলে ডেনমার্ক বিরতিতে যেতে পারত দুই গোলে এগিয়ে।
ড্র করলেই রাশিয়া উঠে যেতে পারত নকআউটে। আলেক্সান্ডার গলভিনের দারুণ সব ফরোয়ার্ড রান, আর আর্তেম জিউভার উন্মত্ত সব পাস শটে রাশানরা ত্রাস ভালোভাবেই ছড়াচ্ছিল ডেনমার্ক রক্ষণে।
৫৯ মিনিটে কোচ স্তানিস্লাস চেরচেশভের দলের সব আশা শেষ হয় নিজেদের ভুলে। ডালের কুজায়েভের একটা ব্যাকপাস গোলরক্ষক সাফোনভকে হকচকিয়ে দেয়। প্রায় একটা থ্রু বল পেয়ে তা কাজে লাগাতে ভুল করেননি বিরতির আগে সুযোগ নষ্ট করা পোলসেন। কোপেনহেগেনের তেলিয়া পার্কেনে তখন রীতিমতো কান পাতা দায়।
ড্যানিশ সমর্থকদের আগ্রহের কেন্দ্রে শুধু নিজেদের ম্যাচেই ছিল না, ‘সি’ গ্রুপের অন্য ম্যাচে বেলজিয়াম-ফিনল্যান্ডের লড়াইয়েও রাখতে হচ্ছিল চোখ। সে লড়াইয়ে যখন বেলজিয়াম এগিয়ে গেল, সমর্থকদের সে উল্লাস রূপ নিল উৎসবে।
কিন্তু নাটকের তখনো অনেক বাকি। বেলজিয়ান গোলটা বাতিল হলো অফসাইডে, কোপেনহেগেনে পেনাল্টি পেল রাশিয়া, জিউভা ঠাণ্ডা মাথায় কমান ব্যবধান; মুহূর্তেই যেন পার্কেনে নেমে এল শ্মশানের নিরবতা।
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 21, 2021
সেখানে ম্যাক্সিকান ওয়েভ ফিরল একটু পর। বেলজিয়াম যখন অন্য খেলায় লিড নিল ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই অনুপ্রেরণায় কিনা ড্যানিশরাও গোল পেল প্রায় কাছাকাছি সময়েই। ২০ গজ দূর থেকে আন্দ্রেয়াস ক্রিশ্চেনসেনের এক আগুনে শটে স্কোরলাইন হলো ৩-১।
এর কিছু পর, ৮১ মিনিটে জোয়াকিম মাহেলে ঠুকলেন রাশান কফিনে শেষ পেরেকটা; বিদায়ও নিশ্চিত হয় রাশিয়ার। স্টেডিয়ামে যেন তখন উৎসব লেগে গেছে, এক ম্যাচ আগে যা ছিল কল্পনারও বাইরে।
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 21, 2021
বেলজিয়ামের ম্যাচটাও গোল দেখেছে সেই ৮১ মিনিটেই, যাতে শঙ্কায় পড়ে যায় ফিনল্যান্ডের শেষ ষোলর আশা। রোমেলু লুকাকুর সে গোল রেড ডেভিলদের এনে দেয় তিন ম্যাচ থেকে নয় পয়েন্ট। ড্যানিশ রূপকথার দিনে ইউরো ২০২০ বেলজিয়ামের হুঙ্কারও শুনে রাখল বৈকি!
এনইউ/এটি