২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর শুরুর আর মাত্র ৬ মাস বাকি। প্রথমবার ৪৮ দলের অংশগ্রহণে হতে যাওয়া এই মেগা ইভেন্টের সূচিও ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ফুটবল ভক্তরা যখন মাঠে বসে সরাসরি খেলা দেখার ক্ষণ গুনছে, তখনই তারা বড় ধাক্কা খেলো। প্রথম রাউন্ডে যে দামে টিকিট বিক্রির কথা জানিয়েছিল ফিফা, তা থেকে ভোল পাল্টে ফেলেছে তারা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউরোপের ফুটবলভক্তরা।

সংবাদ সংস্থা এপি বলছে, গ্রুপপর্বে যে দামে ফিফা টিকিট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল নেই। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থার মতে– গ্রুপপর্বে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ৬০ ডলার বা ৭৩১৮ টাকা। অথচ সাত বছর আগে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়া নিয়ে বিডিংয়ের সময় প্রথম রাউন্ডের টিকিট সর্বনিম্ন ২১ ডলার করার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সকার কর্তৃপক্ষ।

জার্মান সকার ফেডারেশন বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে বিভিন্ন ক্যাটাগরির টিকিটমূল্য প্রকাশ করেছে। যেখানে সর্বনিম্ন ১৮০ ডলার (প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে ৭০০ ডলার (৮৫ হাজার ৩৮৪ টাকা) পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে দাম। এ ছাড়া ফাইনাল ম্যাচের টিকিট সর্বনিম্ন ৪১৮৫ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা) এবং সর্বোচ্চ ৮৬৮০ ডলার (১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা)। বিশ্বকাপ টিকিটের এই উচ্চমূল্যের তালিকা ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সমর্থকরা। ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপও (এফএসই) ফিফাকে ‘প্রতারক’ ও ‘চাঁদাবাজ’ বলে ক্ষোভ জানিয়েছে।

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো

গত সেপ্টেম্বরে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে টিকিট ছাড়ার পর ফিফা জানিয়েছিল, গ্রুপপর্বে সর্বনিম্ন ৬০ ডলার এবং ফাইনালে ৫৭৩০ ডলারে টিকিট পাওয়া যাবে। তবে সেই দাম ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে পরিবর্তন হতে পারে। এবারই প্রথম জাতীয় দেশগুলোর বিশ্বকাপে এই টিকিটমূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফিফার কাছ থেকে চার ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে বিশ্বকাপের টিকিট। সবচেয়ে উন্নতমানের আসন মিলবে ক্যাটাগরি–১ এ।

জার্মান সকার ফেডারেশনের প্রকাশিত তালিকায় তিন ক্যাটাগরির টিকিটমূল্য দেখা যাচ্ছে। তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি ২০২৬ আসরে ‘ই’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচ খেলবে আগামী ১৪ জুন। হিউস্টনে ওই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া কুরাসাও। জার্মান ফেডারেশনের তথ্যমতে– ওই ম্যাচে টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ১৮০ ডলার বা ২২ হাজার টাকা। সেমিফাইনালে সর্বনিম্ন ৯২০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১১২৫ ডলারে টিকিট কিনতে হবে। এ নিয়ে সমর্থকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে এপি এবং রয়টার্স যোগাযোগ করেছিল ফিফার সঙ্গে। তবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপের (এফএসই) নির্বাহী পরিচালক রোনান ইভেইন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আবহ উপভোগ ও রোমাঞ্চ বাড়াতে সরাসরি মাঠে থেকে সমর্থকদের অবদান রাখা দীর্ঘ সময়ের ঐতিহ্য। কিন্তু ফিফা “মনুমেন্টাল বিট্রেয়াল” (বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা) করেছে। ফিফা নির্ধারিত মূল্যতালিকা দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। এই টুর্নামেন্ট থেকে যত বেশি সম্ভব পকেট ভারী করার চেষ্টা চলছে। আমাদের বিশ্বাস এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে টুর্নামেন্টের যে সংস্কৃতি সেটি ঝুঁকির মুখে পড়বে।’

‘ফাইনালে টিকিটের দাম ৪০০০ ডলার থেকে বাড়বে। আপনার দর্শক প্রয়োজন, যারা স্ট্যান্ডে থেকে আমেজ যোগ করবে, নানা রঙের বৈচিত্র ও রোমাঞ্চকর আবহ দরকার আপনার। কিন্তু এই দামের টিকিটে সেসবের কিছুই পাবেন না’, আরও যোগ করেন ইউরোপীয় সমর্থকগোষ্ঠীর এই মুখপাত্র। এফএসই’র আরেকটি বিবৃতিতে ফিফার এই ‘চাঁদাবাজি’ থামিয়ে সুনির্দিষ্ট সমাধানের আহবান জানানো হয়েছে।

এএইচএস