চোখের জলে অমিতকে ক্রীড়াঙ্গনের শেষ বিদায়
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সোমবারের সকালটি অন্য দশটি দিনের মতো ছিল না। এই স্টেডিয়ামের নিত্যদিনের সঙ্গী আহসান আহমেদ অমিতের নিথর দেহ শেষবারের মতো আসল চিরচেনা অঙ্গনে। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষেরা করোনা ও চলমান লকডাউনকে উপেক্ষা করেই ভালোবাসার অমিতকে শেষ দেখা দেখতে এসেছিলেন।
বয়স মাত্র ৪৩ বছর। এর মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনেই কাটিয়েছেন ত্রিশ বছরের বেশি সময়। অমিতের বাবা আফসান আহমেদ নিজ ছেলে সম্পর্কে জানাজার আগে বললেন, ‘ওর জন্মই হয়েছিল ক্রীড়াঙ্গনের জন্য। একদম ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। অনেক খেলা ও সংস্থার সাথে ও সম্পৃক্ত ছিল। বিশেষ করে ফুটবল ফেডারেশন এবং টেবিল টেনিস ফেডারেশন ছিল ওর প্রাণ।’
বিজ্ঞাপন
টেবিল টেনিস ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন অমিত। কোষাধ্যক্ষের বিদায়ে মুহ্যমান টেবিল টেনিস ফেডারেশন। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খন্দকার হাসান মুনীর অমিতের লাশ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে জড়িত। জানাজার আগে অশ্রুবিজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আজ ফুটবল ও টেবিল টেনিস তার এক সেরা সন্তানকে হারাল। সাংবাদিকরা হারাল তার এক বন্ধুকে।’
অমিতের ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেই। গত এক দশকে তার সেই পরিচয় কিছুটা পেছনে পড়ে যায়। ২০১০ সালের দিকে ফুটবল ফেডারেশনে হেড অফ মিডিয়া হিসেবে যোগদান করেন। ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ পেশাদার অমিতকে মূল্যায়ন করলেন এভাবে, ‘তাকে আমি সব সময় অমিত ভাই সম্বোধন করতাম। অনেক ভালোবাসা ও আন্তরিকতা নিয়ে তিনি কাজ করতেন।’
বিজ্ঞাপন
ফুটবলের তৃণমূলের সংগঠকদের এক আশ্রয়স্থল ছিলেন অমিত। সেই অমিতের মৃত্যুতে করোনার মধ্যেও অনেক তৃণমূলের ক্লাবের কর্মকর্তারা এসেছিলেন। অমিতের হাত দিয়ে ফুটবল ফেডারেশনের কত ফুলেল শুভেচ্ছা ও শোক সংবাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতো। আজ সেই নিথর অমিতকে শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হলো। ফুটবল ফেডারেশন, টেবিল টেনিস ফেডারেশন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ বয়েজ, পাললিক, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতিসহ আরো অনেক ক্রীড়া সংস্থা অমিতকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
অমিত এক দশকে ফুটবল ফেডারেশনে ছিলেন। ফুটবল ফেডারেশনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা অমিতের বিদায় বেলায় আসেননি।
ফেডারেশনের একমাত্র নারী সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ ঠিকই এসে অমিতকে শেষবারের মতো দেখে গেছেন। নারী ফুটবলে ছিল অমিতের অসম্ভব সম্পৃক্ততা। অনেক নারী সংগঠকও এসেছিলেন অমিতকে শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে চিরশায়িত হবেন। লাশ আনা থেকে শুরু করে জড়িত, দাফন পর্যন্ত পুরোটা সময় ছিলেন বাফুফের গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ।
এজেড/এটি/টিআইএস