লিওনেল মেসি, নেইমার, আনহেল ডি মারিয়া, কিলিয়ান এমবাপে... পিএসজির ফরোয়ার্ড লাইনটা বেশ তারকাখচিত। মাঝমাঠ আর রক্ষণেও তারকাদের উপস্থিতি আছে বেশ। শুক্রবার রাতে এমন দল নিয়েও রীতিমতো হারতেই বসেছিল পিএসজি। তবে ব্রাজিলিয়ান মারকিনিয়োসের গোলে সমতা, আর আর্জেন্টাইন আনহেল ডি মারিয়ার জয়সূচক লক্ষ্যভেদে সে শঙ্কা কাটিয়ে পিএসজি ২-১ গোলে হারিয়েছে লিগ ওয়ান শিরোপাধারী লিলেকে।

বলের দখল ছিল বেশ। পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বল রেখেছে পিএসজি। তবে ফরাসি দলটির আক্রমণভাগ যেন বিবর্ণই ছিল বেশ। মেসি, নেইমার, এমবাপেরা প্রতিপক্ষ গোলমুখে শট নিয়েছিলেন ১৭টি, যার কেবল ৬টিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে লিলে ১১শটের তিনটি রেখেছে লক্ষ্যে, যার একটি ছিল গোল। 

মেসির ভুলে পিএসজি বিপদে পড়তে পারতো ম্যাচের প্রথম মিনিটেই। তার ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতি আক্রমণে উঠে আসে লিলে। মিডফিল্ডার নানিতামো ইকোনের পাস থেকে শেষমেশ বুরাক ইলমাজ শটটাও নিয়েছিলেন ঠিকঠাক, কিন্তু গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমার কল্যাণে সে যাত্রায় রক্ষা পায় পিএসজি।

ম্যাচের পরের উল্লেখযোগ্য আক্রমণটাও লিলেরই। সংঘবদ্ধ আক্রমণ শেষে বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে শটটা অবশ্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইকোনে। 

২৩ মিনিটে একটা সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল পিএসজি। লিওনেল মেসি পাস বাড়িয়েছিলেন আর্জেন্টাইন সতীর্থ ডি মারিয়ার উদ্দেশে। তা থেকে অবশ্য ‘এল ফিদেয়ো’র শটটা জোরালো হয়নি আদৌ। গোলবঞ্চিত থাকে পিএসজি। 

শুরু থেকে পিএসজিকে চোখ রাঙানো লিলে এগিয়ে যায় ম্যাচের ৩১ মিনিটে। গেল মৌসুমে লিলকে শিরোপা জেতানোর কারিগর ইলমাজ পিএসজি বিপদসীমায় ঢুকে পাস বাড়ান, দারুণ এক ট্যাপ ইনে জনাথন ডেভিড পান গোল। পিএসজি নিজেদের মাঠে পিছিয়ে পড়ে ১-০ গোলে।  

এ পর্যন্ত পিএসজি যথেষ্ট বিবর্ণ ছিল, বিরতির আগে দুটো সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল তারা। কিন্তু ডি মারিয়ার শট, কিংবা মেসির ফ্রি কিক, কোনোটাই ছিল না লক্ষ্যে; ফলে এক গোলে পিছিয়েই বিরতিতে যায় প্যারিসিয়ানরা।

বিরতির পর মেসিকে তুলে আরেক আর্জেন্টাইন মাউরো ইকার্দিকে মাঠে আনেন কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। তবে খেলার ধারায় বদল আসেনি কোনো। উল্টো গোলই হজম করতে বসেছিল ৫৭ মিনিটে। ইলমাজের ক্রসটা কোনোক্রমে ঠেকিয়েছিলেন ডনারুমা, ফিরতি চেষ্টায় ডেভিড শটটা লক্ষ্যে রাখতে পারলেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়তো পিএসজি। কিন্তু কানাডিয়ান ফরোয়ার্ডের শটটা ছিল না লক্ষ্যেই।

পিএসজি ম্যাচে ফেরে এর কিছু পরই। ৬৯ আর ৭৩ মিনিটে ভালো দুটো আক্রমণ শানায় দলটি। কিন্তু নেইমারের শট লিলের রক্ষণ দেয়ালে আটকে যায়, আর ইকার্দির হেডার যায় লক্ষ্যের অনেক উপর দিয়ে।

তবে একটু পরই আসে সমতাসূচক গোল। বাম পাশ থেকে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন ডি মারিয়া। তা থেকে মারকিনিয়োসের গোল।

সমতা ফেরানো হয়ে গিয়েছিল। এবার ছিল জয়সূচক গোলের অপেক্ষা। সেই গোলটা আসে ৮৮ মিনিটে। নেইমারের পাস থেকে বাম পায়ের দারুণ এক শটে পিএসজিকে এগিয়ে দেন ডি মারিয়া। সেটাই পরে দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে টানা তিন ম্যাচ লিলের বিপক্ষে জয়শূন্য থাকার পর অবশেষে জয় তুলে নিয়েছে দলটি। এর আগে গেল মৌসুমে লিলের বিপক্ষে দুই লিগ ম্যাচের একটায় ড্র ও এক ম্যাচে হেরেছে পিএসজি; চলতি মৌসুমের শুরুতে ফ্রেঞ্চ সুপার কাপেও হেরেছে ১-০ গোলে।

এই জয়ের ফলে ১২তম ম্যাচে এসে শীর্ষে জায়গাটা আরও সুসংহত করে ফেলে পচেত্তিনোর শিষ্যরা। লিগ ওয়ানের শীর্ষে থাকা দলটির সংগ্রহ এখন ৩১ পয়েন্ট। দুইয়ে থাকা লেঁস খেলেছে একটি কম ম্যাচ, পিছিয়ে আছে ১০ পয়েন্টে।

এনইউ