আহমেদ মাহলুফ মালদ্বীপের সাবেক ফুটবলার। খেলোয়াড় পরিচয় ছাপিয়ে এখন তার মুল পরিচয় যুব, ক্রীড়া ও সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রী। ওআইসি’র ইয়ুথ ক্যাপিটালের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ঢাকায়। ব্যস্ততাপূর্ণ এই সফর শেষে গতকাল মালদ্বীপ ফিরে গেছেন তিনি। ঢাকা ছাড়ার আগে আহমেদ মাহলুফ কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। এই আলাপে উঠে এসেছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপের ক্রীড়াঙ্গন ও দুই দেশের নানাবিধ সম্পর্ক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া প্রতিবেদক আরাফাত জোবায়ের। 

আপনি একজন সাবেক ফুটবলার। আপনার ফুটবলার জীবনের কথা শুনতে চাই...

মাহলুফ : আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধূলা ভালোবাসি। স্কুল থেকেই খেলাধুলা শুরু। পরবর্তীতে পেশাদার ফুটবলার ছিলাম। ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি জাতীয় অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও ছিলাম। ফুটবল ছাড়া আরো অনেক খেলাই খেলেছি। টেনিস ছাড়া মোটামুটি সব খেলাতেই আমি অভ্যস্ত। জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজারও ছিলাম একসময়।

ফুটবলার থেকে এখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক। বিষয়টি কেমন উপভোগ করছেন?

মাহলুফ : দারুণ উপভোগ করছি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কাজ করতে পারার মতো আনন্দ আর হয় না। ক্রীড়ার সাথে যুবাদের দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ সময় যাচ্ছে। 

আপনি বয়সের হিসেবে তরুণ এবং বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও তরুণ। তারুণ্যের নেতৃত্বে চলছে দুই দেশের ক্রীড়াঙ্গন...

মাহলুফ : রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। তার চিন্তা-চেতনা মানসিকতার সঙ্গে আমার দারুণ মিল। আমরা দুই জন দুই দেশের ক্রীড়া ও যুব সমাজকে আলোকিত করার জন্য সব সময় আলোচনা করি। প্রায় সব ক্ষেত্রে আমরা একমত পোষণ করি। 

ওআইসির অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সফরে আসলেও আপনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের কয়েকটি ফেডারেশন পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন। আপনার এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের ক্রীড়ায় কেমন প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।  

মাহলুফ : বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে এখন অত্যন্ত দারুণ সময় যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মাত্রই মালদ্বীপ থেকে ফিরলেন। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে এটি দারুণ ভূমিকা রাখবে। 

আমার এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। মুনীর ভাইয়ের (বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সহ-সভাপতি) সাথে আমার সুসম্পর্ক অনেক দিনের। তাঁর সাথে কয়েকটি ক্রীড়া সংস্থা পরিদর্শন করেছি৷ হ্যান্ডবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস এই তিনটি খেলায় দুই দেশের পারস্পরিক সফর ও ট্যাকনিক্যাল সাপোর্টের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথেও আমার আলোচনা হয়েছে। 

মালদ্বীপ হ্যান্ডবল দলের কোচ ছিলেন বাংলাদেশের আমজাদ হোসেন...

মাহলুফ : মালদ্বীপের হ্যান্ডবল কোচ বাংলাদেশের এটা জানতাম। আজ (বৃহস্পতিবার) সরাসরি তার সঙ্গে আলাপ হলো মালদ্বীপের ও বাংলাদেশের হ্যান্ডবল নিয়ে। তিনি খুবই আন্তরিক ও নিবেদিত প্রাণ। মালদ্বীপের হ্যান্ডবলে তাঁর অবদান অনেক। এভাবে পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এগিয়ে যাবে। 

আপনি একজন সাবেক ফুটবলার। মালদ্বীপ সাম্প্রতিক দুই টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হলো। আপনার দৃষ্টিতে এর কারণ কী?

মাহলুফ : শ্রীলঙ্কায় চার জাতির টুর্নামেন্টে মাঠের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। আমরা প্রথম ম্যাচে চার গোল দিয়েও ড্র করেছি। পরের ম্যাচগুলোতেও একই অবস্থা। শ্রীলঙ্কায় ফাইনাল না খেলতে পারার পেছনে মাঠ একটি কারণ। 

নিজেদের মাটিতে সাফে সবার প্রত্যাশা ছিল মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। টুর্নামেন্টে আমরা নিজেদের সেরা খেলা খেলতে পারিনি। আশা করি দ্রুত খারাপ সময় কাটিয়ে উঠব। 

সাফে আপনারা প্রথমবারের মতো সফল আয়োজক হয়েছেন কিন্তু এএফসি কাপ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে মে মাসে এএফসি কাপের প্লে অফ ম্যাচ বাতিলের ক্ষেত্রে আপনি খুবই সোচ্চার ছিলেন...

মাহলুফ :  আসলে তখন ওই সময় টুর্নামেন্ট স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেই সময় মালদ্বীপে করোনায় আক্রান্তের হার বেশি ছিল৷ জনগণ ও সরকার সেই পরিস্থিতিতে এমন টুর্নামেন্ট নিয়ে শঙ্কিত ছিল। এরপরও বায়ো বাবল করে টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতের দল ব্যাঙ্গালুরু এফসি যখন বায়ো বাবল ভাঙল তখন সবাই ব্যথিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। সেই মুহূর্তে টুর্নামেন্ট সাময়িক স্থগিত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। 

সাফ ফুটবল কাভারের জন্য প্রায় সপ্তাহ তিনেক মালেতে ছিলাম। মালদ্বীপের সবাই ফুটবল ভালোবাসে। ফুটবল তাদের জীবনের অংশ। মালদ্বীপে পেশাদার ফুটবলারদের সমস্যা অনুশীলন। অর্ধেক মাঠে অনুশীলন করতে হয় তাদের বছরের অনেক সময়। সাবেক ফুটবলার হিসেবে মাঠ সংকট নিরসনে আপনার পদক্ষেপ কী? 

মাহলুফ : আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক ও যথার্থ। আমি নিজেও এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে খেলেছি। দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপের ক্লাবগুলো অর্ধেক মাঠে অনুশীলন করে। আমার লক্ষ্য সারা মালদ্বীপ জুড়ে ৫০টি মাঠ নির্মাণ করা। ইতোমধ্যে বিশটির বেশি মাঠ স্থাপন করেছি। বাকিগুলো হয়ে যাবে শীঘ্রই। 

আপনার মন্ত্রীত্বের মেয়াদকাল শেষে মালদ্বীপের ক্রীড়াকে কোথায় দেখতে চান...

মাহলুফ : এসএ গেমসের দ্রুততম মানব এখন মালদ্বীপের। এসএ গেমসের পর এশিয়ান গেমসেও ভালো কিছুর প্রত্যাশা। আমরা এশিয়ান পর্যায়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে আরো বিকশিত করতে চাই। বিশেষ করে বিলিয়ার্ডে আমাদের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রীড়াবিদ থেকে রাজনীতিবিদ, সাংসদ, মন্ত্রী হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, প্রধানমন্ত্রীও হয়েছে...

মাহলুফ : ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল অ্যাওয়ার্ডে অনেক ক্যাটাগরিতে দক্ষিণ এশিয়ার যুবারা সেরা হয়েছে। এই অঞ্চলের যুবারাই একদিন বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। 

ক্রীড়াবিদরা দেশের দূত। তাদের সাথে  নাগরিকদের সম্পৃক্ততা, ভালোবাসা ভিন্ন পর্যায়ের। অন্য সময় ও অন্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াবিদদের জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বেশি। এমপি-মন্ত্রী নয় শুধু প্রধানমন্ত্রীও আছেন একজন সাবেক তারকা ক্রীড়াবিদ। দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াবিদরাও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দেবে একদিন।

এজেড/এটি/জেএস