ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের হকি অনেকটাই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( বিকেএসপি ) নির্ভর। হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে সমঝোতার কমিটিতে জায়গা হয়নি বিকেএসপির। আজ দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২৮ পদের বিপরীতে ২৮ টি মনোনয়নপত্রই জমা পড়েছে। পদের অতিরিক্ত মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। 

সংগঠকদের অর্ন্তদ্বন্দ্ব এবং নানা ইস্যুতে হকি সংকট। এই সংকটের মধ্যেও হকির ‘লাইফ সাপোর্ট’ বিকেএসপি। জাতীয় দলের ক্যাম্প এমনকি গত বছর জাতীয় দলের হেড কোচও করা হয়েছিল বিকেএসপির উপদেষ্টা কোচকে। জাতীয় দলের ক্যাম্প এবং জাতীয় দলের কোচিং স্টাফও বিকেএসপি নির্ভর। এরপরও সমঝোতার কমিটিতে বিকেএসপির জায়গা হয়নি। 

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে চলছেন মমিনুল হক সাঈদ। বিকেএসপিকে প্যানেলে না রাখার কারণ সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা, 'বিকেএসপি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তারা খেলোয়াড় তৈরি এবং পরিচালনা করে। বিকেএসপির মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই কমিটি করেছি।’ বিকেএসপিকে এবারের কমিটিতে না রাখার আরেকটি হিসেবে জানা গেছে, বিকেএসপির প্রতিনিধি সভায় আসতে ছুটির প্রয়োজন ও আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয় রয়েছে।

হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে এবার বিকেএসপির কাউন্সিলর ছিলেন কোচ জাহিদ হোসেন রাজু। যিনি গত কমিটিতেও সদস্য হিসেবে ছিলেন। বিগত কমিটিগুলোতে কাওসার আলী, নুরুল ইসলামরা বিকেএসপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হকি ফেডারেশনের কমিটিতে বিকেএসপিকে না রাখায় বেশ মর্মাহত দেশের হকির অন্যতম কিংবদন্তী ও বিকেএসপির সাবেক হকি প্রধান কোচ কাওসার আলী, 'বাংলাদেশের হকি ও বিকেএসপি একে অন্যের পরিপূরক। সেই হকি ফেডারেশন বিকেএসপিকে কমিটি রাখেনি এটি খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার। হকি ফেডারেশনের উচিত বিকেএসপির জন্য কমিটিতে বিশেষভাবে পদ সংরক্ষণ করার। হকির প্রকৃত লালন-পালন এবং চর্চা বিকেএসপিতেই হয় এবং ফেডারেশনও বিকেএসপির উপর নির্ভরশীল।’

বর্তমান নির্বাহী কমিটির মধ্যে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন ১৪ জন। এই ১৪ জন বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করে আজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কামরুল ইসলাম কিসমত, সাজেদ আদেল,রফিকুল ইসলাম কামাল, ফয়সাল আহসান উল্লাহর মতো তারকা হকি খেলোয়াড়রা বর্তমান কমিটিতে থাকলেও আসন্ন কমিটিতে জায়গা পাননি।

২৮ জনের কমিটিতে বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী চার জন। এর মধ্যে দুই জন যুগ্ম সম্পাদক এহসান রানা এবং আরিফুল হক প্রিন্স, সাঈদ-রশিদ প্যানেলের অন্যতম নীতি নির্ধারকও। বিকেএসপিকে বাদ রেখে কমিটি হওয়ায় হকি অঙ্গনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

২৮ জনের নির্বাহী কমিটির শীর্ষ পদগুলো আগেই অনেকটা নির্ধারিত ছিল। ১৯ জন নির্বাহী সদস্য নিয়েই গত দুই দিন বেশ কাটাছেড়া হয়েছে। নির্বাহী সদস্যের মধ্যে দেশের শীর্ষ ক্লাব ওয়ারীর প্রতিনিধি ও হকির বিশিষ্ট সংগঠক নাজুর জায়গা না হলেও ক্লাব কোটায় সাঈদ-রশিদের প্যানেলে ফেডারেশনে সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ঢাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মুক্ত বিহঙ্গের কাউন্সিলর শেখ আলমগীর হজ্ব পালন করতে সৌদি আরব রয়েছেন। আলমগীরের মনোনয়ন পত্রের স্বাক্ষর সম্পর্কে মমিনুল হক সাঈদ ও রশিদ শিকদার যৌথভাবেই বলেন, 'আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আলমগীরের মনোনয়নপত্রের কাজ সম্পন্ন করেছি। বিমানের মাধ্যমে তাকে মনোনয়নপত্র পাঠানো হয়েছে এবং তিনি স্বাক্ষর করে আবার বিমানে সেটি পাঠিয়েছেন।’ 

২৮ জনের সমঝোতা কমিটির মধ্যে ১০ টি পদ জেলা-বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ ফোরামের। সেই ১০ পদের মধ্যে চট্টগ্রামের ইউসুফ সহ-সভাপতি এবং বাকি নয় জন সদস্য হয়েছেন। এই ১০ জনের মধ্যে ময়মনসিংহের প্রতিনিধি থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, 'অনেক বিভাগকে বাদ দেয়া হয়েছে এবং ময়মনসিংহের প্রতিনিধি রাখা হয়নি ও তার ফরমও তাকে ফেরত দেয়া হয়নি।’ অন্য দিকে, কাউন্সিলর বঞ্চিতরা এখনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে শোনা গেছে। 

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেক জটিলতা ও প্রশ্ন থাকলেও সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ হকিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করলেন, 'সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কমিটি গঠন হয়েছে এবং কাজেও একতা থাকবে। হকির সব অংশেই আমরা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ করতে আমরা স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরি করতে চাই।'

কমিটি-

সাধারণ সম্পাদক: মমিনুল হক সাঈদ।

সহ-সভাপতি: রশিদ শিকদার, জাকি আহমেদ রিপন,এমএ রাজ্জাক, কাজী সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইউসুফ।

যুগ্ম সম্পাদক: মাহবুব এহসান রানা ও আরিফুল হক প্রিন্স।

কোষাধ্যক্ষ: সৈয়দ মাহমুদুল হক।

সদস্য: ইউসুফ আলী, মনোয়ার হোসেন, সাফায়াত হোসেন ( ডালিম ), হাজী হুমায়ুন, মাহবুব হারুন, মোসাদ্দেক পাপ্পু, লতিফ মুন্না, মোরশেদ লেবু, টুটুল কুমার নাগ, শহিদউল্লাহ টিটু, আসিফুল হাসান, নাসিম রেজা, শেখ আলমগীর, আউয়াল হোসেন, কামরুজ্জামান চৌধুরী তুহিন, রাজু আহমেদ, দিলিপ চক্রবর্তী ও তৌফিকুর রহমান রতন।

এজেড/এইচজেএস