মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কয়জন হাতেগোনা ক্রীড়াবিদের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম এই নারী ভারোত্তোলক। মাত্র ২২ বছর বয়সেই দেশের অন্যতম সফল ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, দেশকে এনে দিয়েছেন ‘সোনালী’ সাফল্য। ক্রীড়া জগতে অনন্য সব অর্জনের মাধ্যমে শুধু নিজেকেই যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাই নয়, বরং সময়ের সঙ্গে ক্রমেই নিজেকে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

মাদারীপুরে জন্ম নেওয়া মাবিয়া শৈশব থেকেই ভারোত্তোলনে বুঁদ ছিলেন। মূলত চাচার মাধ্যমে ভারোত্তোলনের সঙ্গে পরিচিত ঘটে তার। অনুশীলনে প্রতিকূলতা থাকলেও পরিবারের সমর্থনে সব বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে যান মাবিয়া। আর্থিক সমস্যায় একসময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। ভারোত্তোলনের অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার জোগাতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

আরও পড়ুন >> টাইমিংয়ে উন্নতি, তবু কমনওয়েলথ থেকে বিদায় ইমরানের

তবে নিজের দৃঢ়চেতা মনোভাব আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অভাব-অনটনের দিনগুলোকে পিছু ঠেলেছেন মাবিয়া। এখন তিনি দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) দুইবারের স্বর্ণপদকজয়ী। বার্মিংহ্যামে অনুষ্ঠানরত এবারের কমনওয়েলথ গেমসেও প্রত্যাশার চেয়েও ভালো প্রদর্শন ছিল তার, পদক এনে দিতে না পারলেও নজর কেড়েছেন। ৬৪ কেজি ক্যাটাগরিতে অষ্টম হয়েছেন, মোট ১৮১ কেজি ওজন উঠিয়ে নিজের জাতীয় রেকর্ড ছুঁয়েছেন।

প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিতে গিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের পতাকা বহন করেছেন মাবিয়া। গেমসে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় মাবিয়া বলেন, ‘আমার সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা করছি, যাতে অন্য নারীরাও ভারোত্তোলন বা অন্য খেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। আমি অন্যদেরও আমার সঙ্গে একই অবস্থানে দেখতে চাই। আমার মনে হয় না লিঙ্গ আমার জন্য এখন বড় কোনো ইস্যু, আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে (পুরুষদের) সমান সহযোগিতা পাই। সম্ভাব্য ভালো ফল এনে দিতে পারলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন >> কমনওয়েলথে টেবিল টেনিসে ইতিহাস বাংলাদেশের

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে মাবিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত নারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে এবং আমাদের ক্ষমতায়িত করছে। নারীদের মধ্যে (খেলাধুলা নিয়ে) একটু বাড়তি আগ্রহের মানে হচ্ছে আমরা এখন পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

সঙ্গে মাবিয়া যোগ করলেন, ‘আমি চাই আরও অনেক মেয়ে ভারোত্তোলনের জন্য এগিয়ে আসুক। একদিন আমি বাংলাদেশি অ্যাথলেটদের অলিম্পিকে অংশ নিতে এবং পদক জিততে দেখতে চাই।’
 
এইচএমএ/এটি