বিদ্যুৎ নিয়ে বিপাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
ফেডারেশনগুলোর বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এমনিতেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিপাকে। অনেক ফেডারেশনের বড় অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। কোটি টাকার উপর সেই বকেয়ার জের টানতে হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। সেই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে এখন এনএসসির নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেডারেশনগুলোর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ভাবে ব্যবহারের তদারকি করা।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকার অফিসের সময়সূচি এগিয়ে এনেছে। এখন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত অফিস চলছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণলায়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারের এই আদেশ অনুযায়ী চলছে।
বিজ্ঞাপন
দেশের সকল ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারের আদেশ ফেডারেশনগুলোকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ বলেন, ‘আমরা সরকার আদেশ মেনে নতুন সূচিতে অফিস করছি। ফেডারেশনগুলোকেও সরকারের নির্দেশনা অনুসরণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।’ ২৫ আগস্ট এনএসসির পরিচালক ক্রীড়া শাহ আলম সরদারের স্বাক্ষরিত চিঠি ফেডারেশনগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
দেশের অধিকাংশ ক্রীড়া ফেডারেশন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক। মতিঝিলে রয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। বাফুফের আগে কর্মঘণ্টা ছিল সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা। সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ঘোষণার পর বাফুফে তাদের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৯ টা থেকে বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত করেছে। সেপ্টেম্বরে বাফুফের বেশ কর্মব্যস্ততা চারটি দল দেশের বাইরে যাবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে। তাই তারা বিশেষভাবে বাড়তি দুই ঘণ্টা কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
দেশের আরেক শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশনা মেনে চলছে। দুবাই থেকে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘আমরা সরকারের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে কাজ করতাম। এখন যে নির্দেশনা রয়েছে সেটি অনুসরণ করা হবে।’
সরকারি আদেশে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। দেশের ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন ছাড়া অন্য কোনো ফেডারেশনের শনিবার ছুটি নেই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কিছু দিন শনিবার অর্ধদিবস অফিস করলেও এখন প্রায় পূর্ণ দিবসের মতোই কাজ হয়। অন্য ফেডারেশনগুলো শুক্রবারই সাপ্তাহিক ছুটি। অন্য দিনগুলোর তুলনায় শনিবারই বিসিবিতে বেশি কাজ হয় বলেন সিইও, ‘শনিবার দিন তুলনামূলক বোর্ড পরিচালকরা বেশি আসেন। ফলে অন্য দিনের তুলনায় এদিন বিসিবিতে কর্ম তৎপরতা বেশি থাকে এবং অনেক কাজও হয়।’
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য ফেডারেশনগুলো মূলত দুপুরের পরই কার্যক্রম শুরু করে। সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত ফেডারেশনগুলো খোলা থাকে। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অনেক সময় স্রেফ আড্ডাও হয় ফেডারেশনগুলোতে। বিদ্যুৎ বিল নিজেদের দিতে হয় না বিধায় অপ্রয়োজনে ফ্যান, লাইটও জ্বলে অনেক সময়।
আবার অনেক ফেডারেশনের অফিস বন্ধ থাকাবস্থায় চলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। অপ্রয়োজনে অফিস খোলা এবং বৈদ্যুতিক ব্যবহার কমানোর বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশনগুলোকে নজরদারিতে রাখার চেষ্টা করছে, ‘আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে প্রতিদিনই দু’তিনটি ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনটার মধ্যে অফিস সম্পন্ন করা এবং অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে’ -বলেন ক্রীড়া পরিষদ সচিব পরিমল সিংহ। দেশের প্রতিটি ফেডারেশনই স্ব স্ব খেলার আন্তর্জাতিক ও মহাদেশীয় সংস্থা দ্বারা নিবন্ধিত। সেই সংস্থার সঙ্গেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হয় তাদের। নতুন অফিস সূচি অনুসরণে একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে ফেডারেশনগুলোর জন্য।
শুধু অফিস নয়, সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ফেডারেশনগুলোকে সূর্যের আলোয় খেলা শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বর্তমানে ফুটবল ফেডারেশনের অধীনে জুনিয়র ডিভিশন ফুটবল, স্কুল হ্যান্ডবল ছাড়া অন্য তেমন কোনো প্রতিযোগিতা নেই ঢাকা মহানগরীতে। এই দু’টি প্রতিযোগিতা বিকেলের মধ্যেই শেষ হওয়ায় তেমন বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ খাত এনএসসির জন্য এখন বড় একটি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বলেন, ‘প্রতি মাসেই এই খাতে আমাদের বাড়তি অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফেডারেশনগুলোকে বিল পরিশোধের অনুরোধ করলেও তারা দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের দিতে হচ্ছে।’ অনেক ফেডারেশনের বিল দেয়ার সামর্থ্য থাকলেও তারা বিষয়টি এনএসসির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নীতির পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয়ও করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্টাফদের জন্য রয়েছে বাস, প্রাইভেট কার। প্রতি মাসে এই গাড়িগুলোর পেছনে যে ভর্তুকি ছিল সেখান থেকে ভতুর্কির মাত্রা কমানো হয়েছে।
এজেড/এটি/এনইউ