জাতীয় ব্যাডমিন্টনের ত্রিমুকুটের দোরগোড়ায় ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উর্মি আক্তার। নারী দ্বৈতে হেরে আর ত্রিমুকুট জেতা হয়নি উর্মির। তবে নারী একক ও মিশ্র দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উর্মি আক্তার ৩৮ তম জাতীয় ব্যাডমিন্টনে আলো কেড়েছেন ঠিকই।

গত বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপেও নারী এককে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন উর্মি। এবার তাই শিরোপা ধরে রাখা ছিল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেন খুলনার এই শাটলার। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপের প্রস্তুতির জন্য এইচএসসি পরীক্ষা দেননি। এ নিয়ে কোনো আফসোস নেই উর্মির,‘ সেপ্টেম্বরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ হওয়ার কথা ছিল। সেই সময় পরীক্ষাও ছিল। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পিছিয়ে পরে অক্টোবরে হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়নশীপের প্রস্তুতির জন্য আর পরীক্ষা দেইনি।’

বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়রা সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই উঠে আসে। বিশেষ করে নারী খেলোয়াড়দের পরীক্ষা না দিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া বেশ কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে এটি নাকি বেশ সহজই ছিল তার জন্য, ‘পরিবারের সমর্থন না থাকলে একজন মেয়ের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। আমার বাবা-মা উভয়ই আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। তাই আমি পরীক্ষা না দিয়ে খেলতে পারছি’ বলেন উর্মি।

নারী এককে নাসিমা খাতুনের সঙ্গে  ১৮-২১,২১-১৬-,২৩-২১ গেম পয়েন্ট ছিল। নারী  এককে খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও মিশ্র দ্বৈতে আলী আমিন জুমারের সঙ্গে জুটি গড়ে গালিব ও বৃষ্টি খাতুনকে ২১-১৫, ২১-১৬ গেম পয়েন্টে পরাজিত করে। দ্বিমুকুট জিতে উর্মির মিশ্র প্রতিক্রিয়া, ‘তিনটি চ্যাম্পিয়ন না হতে পেরে খারাপ লাগছে। একেবারে কাছে ছিলাম। আবার দু’টি চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেও ভালো লাগছে। কারণ সিঙ্গেল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ডাবলস এবং মিক্সড খেলার কথা ছিল না ব্যাথার কারণে।’

এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে শাটলারদের উপর অনেক ঝক্কি বইছে। আজ সকালে সেমিফাইনালে খেলেই আবার ফাইনাল খেলতে হয়েছে। তাই উর্মির মাসেলে টান ছিল। মিক্সড ডাবল ও নারী দ্বৈতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তাই সূচি পরিবর্তনের আহ্বান জাতীয় চ্যাম্পিয়নের, ‘আসলে এভাবে খেলা খুবই কষ্টসাধ্য। আমাদের দেশেই এভাবে খেলছি। এভাবে খেললে খেলোয়াড়দের অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীরও বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। সামনের চ্যাম্পিয়নশীপে এই জটিলতা এড়াতে খেলোয়াড়দের এন্ট্রি কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে ফেডারেশনের। 

নারী ব্যাডমিন্টনে দুই তারকা এলিনা ও শাপলা এবার সিঙ্গেল খেলেননি। দুই জন জুটি গড়ে দ্বৈত ইভেন্টে খেলেছেন। সেমিফাইনালে বাদ পড়েছেন। সাবেক দুই চ্যাম্পিয়নের চোখে উর্মির পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন, ‘উর্মি ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে। এই ধারা অব্যাহত রাখলে সে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভালো করতে পারবে।

উর্মির মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ বজায় রেখেছেন খন্দকার আব্দুস সোয়াত। তিনি লোকমানকে ২১-১১, ২১-১৯ গেম পয়েন্টে হারিয়েছেন। পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালে অবশ্য সোয়াত খেলতে পারেননি। পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিলেট জেলার আব্দুল জহির তানভীর ও গৌরব সিংহ। তারা একই সংস্থার মিজানুর রহমান ও রাহাতুল নাইমকে ১৮-২১,২১-১৯ ও ২১-৯ গেম পয়েন্টে হারিয়েছে।

আজ (শুক্রবার) রাতে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে বিজয়ীরা পুরস্কার গ্রহণ করেন। ফেডারেশনের সভাপতি ও প্রধান তথ্য কমিশনার আব্দুল মালেক বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করেন। এ সময় ফেডারেশনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সিএসআরএমের পরিচালক সহ অন্য ফেডারেশনের আমন্ত্রিত অতিথিরাও।

এজেড/জেএ