সাইক্লিংয়ের টানে চাকরি ছাড়লেন চ্যাম্পিয়ন ফার্মাসিস্ট রাকিবুল
সাইক্লিং এখনো খেলা হিসেবে পেশা হয়ে উঠেনি। শখের বশেই মূলত সাইক্লিং করেন অনেকে। যাদের পেশা তারা বিভিন্ন সার্ভিসেস বাহিনীর হয়ে খেলেন। সাইক্লিংয়ের জন্য নিজের পেশা ছেড়েছেন সদ্য সমাপ্ত মাউন্টেনবাইক চ্যাম্পিয়ন হওয়া রাকিবুল ইসলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিতে পড়াশোনা করা রাকিবুল রাজধানীর এভাকেয়ার হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিন বছরের বেশি সময়। মাস তিনেক আগে সাইক্লিংয়ের জন্য চাকরি থেকে ইস্তেফা দিয়েছেন। ভালো একটি চাকরি ছাড়ার পেছনে তার যুক্তি, ‘আমার পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি সাইক্লিংয়ে আরো বেশি সময় দিতে চাই। জবে থাকলে অনুশীলনে সময় দেয়া যাবে না। তাই শেষ পর্যন্ত জব ছেড়েই দিলাম।’
বিজ্ঞাপন
দেশের একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পর ভালো চাকরি করে ছেড়ে দিলেও পরিবারকে তার পাশেই পেয়েছেন, ‘পরিবার আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তারা আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে । আমি যেখানেই যা করব, ভালো কিছু করব এই বিশ্বাস তাদের আছে।’
বিজ্ঞাপন
সাইক্লিংয়ে বাংলাদেশে তেমন অর্থ নেই। এজন্য তিনি নিজের চলা, অনুশীলন করা এবং বাইরে খেলার জন্য নিজেকে ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে তৈরি করেছেন।আল্পস নামের একটি ফিটনেস প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ফিটনেস ট্রেইনিংই এখন তার জীবিকাশক্তি, ‘পরিবার ও অন্যদের উপর চাপ হতে চাই না। এজন্য ট্রেইনার হয়ে উপার্জন করছি।’
ফার্মাসিস্ট হয়ে ক্রীড়াপুষ্টি, ক্রীড়া মেডিসিন নিয়ে কাজের সুযোগ থাকলেও ট্রেইনার হয়ে আর্থিক উপার্জন বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘একাডেমিক পড়াশোনার দিকেই যেতে হবে এমন ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। জাহাঙ্গীরনগরে আমার বিভাগের অনেক বন্ধুবান্ধব রয়েছেন যারা অন্য সেক্টরে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন।’
চাকরি ছাড়ার পর অনুশীলন করেছেন। সেই অনুশীলনের ফলও পেয়েছেন বান্দরবানের মাউন্টেনবাইক প্রতিযোগিতায়। এখন সাইক্লিং নিয়েই পড়ে থাকতে চান এই তরুণ, ‘সাইক্লিং নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক। গত বছর এশিয়ান পাওয়ারম্যান সাইক্লিং করেছি। সেখানে নির্দিষ্ট টাইমিং করায় আগামী বছর সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব পাওয়ার ম্যান খেলব।’ এই সব টুর্নামেন্টে ফেডারেশন থেকে তেমন কোনো আর্থিক সহযোগিতা থাকে না, নিজের উদ্যোগেই অংশ নিতে হয়।
২০১৩ সাল থেকে মূলত সাইক্লিংয়ে ঝোঁক রাকিবুলের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরু রাস্তায় তার সাইক্লিংয়ের হাতেখড়ি, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাব থেকে আমার পথচলা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ।’
২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগরে স্নাতক শেষে ভারতের দিল্লির দক্ষিণ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজিতে দুই বছর উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন সাউথ এশিয়ান সিলভার জুবলি স্কলারশিপের আওতায়। দিল্লিতেও সাইক্লিং চর্চা অব্যাহত ছিল, ‘আসলে ২০১৩ সালের পর থেকে সাইকেল ও সাইক্লিং আমার জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠে। প্রথম দুই তিন বছর নিজে অনুশীলন করি। এরপর একজন বিদেশি ট্রেইনারের পরামর্শ নিতাম। গত আগস্ট থেকে নিজেই প্রশিক্ষক তবে নতুন প্রশিক্ষক খুঁজছি।’
আগামী মাসের ডিসেম্বরে একটি বিশ্ব রেকর্ড করতে চান রাকিবুল। ৪৮ ঘণ্টা সাইক্লিং করে সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রম করতে চান র্যালি টিমের পক্ষে। ৮-১০ ডিসেম্বর ঢাকায় টিম বিডিসি'র হয়ে এই র্যালি সাইক্লিং হবে। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাবর বাংলাদেশ। রাকিবুল সদ্য সমাপ্ত মাউন্টেইন সাইক্লিং ছাড়াও বাংলাদেশ গেমস, জাতীয় সাইক্লিং ও আন্তর্জাতিক সাইক্লিংয়ে নানা পদক রয়েছে।
সাইক্লিং এখনো অজনপ্রিয় এবং অপেশাদার একটি খেলা বাংলাদেশে। সাইক্লিংকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড় করানোর স্বপ্ন তার, ‘দেশের তরুণরা সাইক্লিংয়ে আকৃষ্ট হবে সেই স্বপ্ন দেখি। পাশাপাশি অন্যান্য খেলার মতো সাইক্লিংও অনেক জনপ্রিয় হবে একদিন।’
এজেড/এনইউ