চলতি বছরেই প্রযুক্তিগত ৫টি বড় পরিবর্তন দেখা যাবে। এ তালিকায় দূরশিক্ষণ ও কাজের জন্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন, ইন্টারনেটে সুরক্ষা বিষয়ে শংকা, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব, একাকিত্ব ঘোচাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।

টেলিনরের টেক ট্রেন্ড নামে পরিচিত এক গবেষণার ষষ্ঠ সংস্করণে ২০২১ সালের প্রযুক্তি দুনিয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জিপি হাউজে টেলিনরের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পূর্বাভাসগুলো নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। টেলিনর রিসার্চের হেড বিয়র্ন তালে স্যান্ডবার্গ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গবেষণার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, এটুআই এর পলিসি উপদেষ্টা আনির চেীধুরী, ফাউন্ডার এসবিকে ভেনচার এ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশান সোনিয়া বশির কবির, কাউন্সিলিং সাইকোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ড. মেহতাব খানম আলোচনায় অংশ নেন।

টানা ছয় বছরের মতো স্যান্ডবার্গ ও টেলিনর গবেষক দল আগের বছরের অবস্থা বিশ্লেষণ করে ২০২১ সালের পাঁচটি টেক ট্রেন্ডের বিষয় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে-

ট্রেন্ড ১ : মানসিক স্বাস্থ্যজনিত অসুস্থতা মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার। ই-হেলথ খাত মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসবে। যা এ খাতে সেবার বিকাশ ঘটবে। আগামী বছরের মধ্যে পুরোপুরি ফাইভজি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোতে সম্ভবত হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশন টুল হিসেবে অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যাবে।

এছাড়াও ২০২১ সালে নতুন প্রজন্মের চ্যাটবটের আবির্ভাব ঘটবে। যারা নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, কল করার সুবিধা, বিনোদন দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

ট্রেন্ড ২ : বছরটি গ্রিন টেকের জন্য একটি ডিজিটাল বসন্ত। স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বের সব সরকার জলবায়ু আইন কার্যকর করার মাধ্যমে ২০২১ সালে হারিয়ে যাওয়া সবুজ পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করতে ২০২০ সালে প্রাপ্ত গতি কাজে লাগাবে।’

সারা পৃথিবীর শহরগুলোতে ডাটা সেন্টার এবং মোবাইল বেইজ স্টেশনগুলোতে জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করবে। এমন পদক্ষেপ বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তিকে আরও অনুমানযোগ্য করবে এবং পরিবহনের অনুকূলকরণ ও বায়ুর গুণমান পূর্বাভাসের মাধ্যমে ‘স্মার্ট’ শহর তৈরিতে সহায়তা করবে।

যখন আল্ট্রা-স্মল এবং আল্ট্রা-লো পাওয়ারড ড্রোনগুলো চিত্র-প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জলবায়ু-উন্মুক্ত অঞ্চলগুলোর ড্রোন পর্যবেক্ষণকে সম্প্রসারণ করতে আকাশে উড়তে শুরু করবে, তখন টাইনি মেশিন লার্নিং (টাইনিএমএল) নামে পরিচিত এআই-চালিত মাইক্রো আইওটি ডিভাইস অপারেশন শুরু করবে।

যেসব কৃষকদের কৃষি শ্রমিক খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাদের সহায়তায় শহরের বাইরে নতুন অটোনমাস মডুলার রোবট ক্ষেতে কাজ করবে। মেশিনের মাধ্যমে আগাছা পরিস্কারের পদ্ধতি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনবে, ফলে কৃষিকাজের পরিবেশগত প্রভাব কমে যাবে।

ট্রেন্ড ৩ : পাসওয়ার্ড আতঙ্ক, সাইবার সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে। ২০২১ সালে যারা সঠিক পাসওয়ার্ড ব্যবহারের সমাধান সম্পর্কে অবগত নন বা যারা কঠোর ডিজিটাল হাইজিন বজায় রাখছেন না, তারা ‘পাসওয়ার্ড আতঙ্ক’ নামক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। স্যান্ডবার্গ ভবিষ্যদ্বাণী করেন, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সুবিধা বা আইরিস এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং সমাধান আরও বেশি প্রচলিত হবে, যার মাধ্যমে দক্ষতা, সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং শ্রমিকদের ঝামেলার একটি কারণ কমে যাবে।

ট্রেন্ড ৪ : এর মাধ্যমে কর্ম ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ হবে। এ বিষয়ে স্যান্ডবার্গ বলেন, ২০২০ সালে অনেক কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করেছেন। এ রুপান্তর কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করবে। বিশেষত বাড়ি বা অন্যস্থান থেকে নিয়মিতভাবে কাজ করার ব্যাপারে এবং কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে। ভবিষ্যতের কাজের পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করতে পরিচালকরা কর্মীদের সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল হাইজিন, ডিজিটাল টুলস এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কিত দক্ষতা বৃদ্ধির উপর আরও জোর দেবে।

ট্রেন্ড ৫ : শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধান নিয়ে ভাবনা। এ বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়, ২০২১ সালে দ্রুত অগ্রগামী ভার্চুয়াল শিক্ষার ক্ষেত্র থেকে উদ্ভাবিত দূরবর্তী, ডিজিটাল শিক্ষার নতুন এবং সৃজনশীল পদ্ধতির একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা যাবে। নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস এবং ইন্টারনেট-সক্ষম ডিভাইস আছে এমন সবাই এ ডিজিটাল যাত্রায় অংশ নিতে পারবেন।

একে/এমএইচএস