আজকের দিনে স্মার্টফোন ছাড়া একটি দিন কল্পনা করা কঠিন। অনেকে স্মার্টফোনের নেশায় বুঁদ হয়ে দৈনন্দিন কাজকে অবহেলা করে চলেছেন। স্মার্টফোনের কারণে ‘জীবন নষ্ট’ হয়ে যাচ্ছে এমন দশটি বিষয় আপনাদের জানাবো আজ।  

১. রাতের ঘুম 

সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের পর্যাপ্ত সময় ঘুমের প্রয়োজন। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে বিশ্রাম ও ঘুম মানুষকে পরদিন কাজ করার শক্তি যোগায়। কিন্তু রাতে না ঘুমিয়ে যদি স্মার্টফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন তাহলে শরীরে বাসা বাঁধে রোগ। কাজের ক্ষেত্রে দেখা দেয় অনিয়ম। 

২. সম্পর্ক 

আপনার সঙ্গে কথা বলছে আর আপনি দেখছেন স্মার্টফোন, দেখছেন ফেসবুকে গতকাল দেওয়া পোস্টে কতজন লাইক দিয়েছেন। এতে করে আপনার সঙ্গে যিনি কথা বলছেন, তিনি বিরক্ত হবেন আপনার প্রতি। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন। 

৩. ঘুম ভাঙিয়ে দেয় মোবাইল 

অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হলো স্মার্টফোন দেখা। এটাকে আমরা সকালের শুরু হিসেবে অবধারিত করে নিয়েছি। আর এটিই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে ফেলছে। এতে আমরা সকালের সূর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। নেওয়া হচ্ছে না প্রকৃতির ছোঁয়া।  

৪. ভাব বিনিময় 

স্মার্টফোনের কারণে আমরা আজ একে অপরের সঙ্গে মনের ভাব বিনিময় করার অবকাশটুকুও পাচ্ছি না। আমরা এতে এতটাই এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, একে অপরের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময়টুকুও হয়ে ওঠে না। এতে মানসিক অসুস্থতার হার দিন দিন বাড়ছে। 

৫. মনের রাখার অভ্যাস 

স্মার্টফোনের বদৌলতে সবকিছু আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যাত্রাপথে আমরা এখন পথ ভুলে গেলে সরাসরি গুগল ম্যাপে চলে যাই কিংবা কোনো তথ্য সম্পর্কে জানার প্রয়োজন হলে আমরা ইন্টারনেটে সার্চ দিই। 

কিন্তু এতে আমাদের স্মৃতিশক্তির ব্যবহার ঠিকমতো হচ্ছে না। কোনো একটা বিষয় দীর্ঘদিন মনে রাখার অভ্যাস চলে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।  

৬. মানসিক রোগ 

অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে আমাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে। এসব মানসিক রোগের মধ্যে ‘নোমোফোবিয়া’ অন্যতম। এটি মোবাইল ফোন সংশ্লিষ্ট একটি রোগ। রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করতে থাকে যে, মোবাইল থেকে তার ব্যবহৃত অ্যাপগুলো চলে যাচ্ছে। 

৭. সময়হীনতা 

অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে আমাদের মধ্যে সময়হীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্মার্টফোনকে সময় দিতে গিয়ে অনেক সময় পরিবার আর আত্মীয়-স্বজনকে সময় দেয়া হয়ে ওঠে না। এভাবে পরিবারের সদস্য আর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। 

৮. দাম্পত্য সম্পর্কে অনাস্থা 

অনেকের পরিবারে অশান্তির কারণও এই স্মার্টফোন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য এবং তা থেকে অনেক সময় অনাস্থা তৈরি হয়ে থাকে একে অপরের প্রতি। অনেক সময় এই অনাস্থা বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের চারপাশে এমনটা ঘটতেও দেখা যাচ্ছে। 

৯. বন্ধুত্বের সম্পর্কে টানাপোড়েন 

স্মার্টফোনের কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়ে থাকে অনেক সময়। বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া থেকে শুরু করে সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে। স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সময় দেয়ার ফলে বন্ধুদের সঙ্গে পারস্পরিক নানা বিষয় নিয়ে টানাপোড়েনও তৈরি হতে পারে। 

১০. অভিভাবকদের মধ্যে সমস্যা 

স্মার্টফোনের কারণে অভিভাবকদের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অভিভাবক যদি স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়েন তাহলে সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। আবার সন্তানরা যদি স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে অভিভাবকরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে যা পারিবারিক সংকট।  

লিস্টভার্স ডট কম, ফোর্বস ডট কম ও বিজনেস ইনসাইডার ডট কম অবলম্বনে। এইচএকে/এএস