তিন বন্ধুর একই রেজাল্ট, একসঙ্গে পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্কলারশিপ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়ে ক্যারিয়ার গড়া, বন্ধুত্বের খুনসুটি, সিনিয়র-জুনিয়র মেলবন্ধনে আবদ্ধ। তাইতো প্রায় সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় কান্নায় চোখ ভেজে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বন্ধু নাঈম হোসেন, মামুনুর রশিদ এবং সুমন আলী।
তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিবিএতে ৩.৮৪ এবং এমবিএতে ৩.৯৩ সিজিপিএ পেয়েছেন তিনজনই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেট স্কলারশিপ পেয়েছেন তারা। স্বপ্ন জয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন একসঙ্গেই। আবার একইসঙ্গে জয়ী হয়েছেন তিন বন্ধুই। এতে উচ্ছ্বসিত তারা।
সুমন আলী University of Texas at El Paso (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স) বিশ্ববিদ্যালয়ে, মামুনুর রশিদ University of Texas San Antonio (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স) বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নাঈম হোসেন University of Nwe Orleans (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনোমিকস) বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে তাদের দেখা যেত একসঙ্গে। বিবিএতে ৩.৮৪ ও এমবিএতে ৩.৯৩ সিজিপিএ পেয়েছেন তিনজনই। সবাই একসঙ্গে অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে গবেষণা শুরু করেন এবং এমবিএ শেষ করার আগেই বিভিন্ন জার্নালে সবারই বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। তিনজনই আইইএলটিএসে ৬.৫ এর ওপর ও জিআই এ ৩০০ এর ওপর স্কোর পেয়েছেন। পরে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করেন তারা। সুযোগ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অনুভূতি জানিয়ে নাইম হোসেন বলেন, আমি এবং আমার বন্ধুরা অনেক বেশি খুশি। আমার এই অর্জনটা মানুষ এতো ভালোভাবে মূল্যায়ন করবে, ভাবতেই পারিনি। আরও ভালো লাগে এটা ভেবে যে, আমাদের অনার্স থেকে শুরু এই পর্যন্ত সবকিছু কেমন যেন আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন। একটার পর একটা ধাপ যে এতো সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পেরেছিলাম তা আজ বুঝতে পেরে ভালো লাগে। অনেকেই আমাদের অনেক বিষয়ে ঈর্ষা করলেও আমরা তিন বন্ধু কখনো তা করিনি। বরং এগিয়ে এসেছি একে অন্যের সহযোগিতায় নিঃস্বার্থভাবে।
আরেক শিক্ষার্থী মামুনু রহমান বলেন, আমার জন্য এই সাকসেসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ বাংলাদেশ থেকে খুব কম শিক্ষার্থীই আছেন, যারা সরাসরি আমেরিকার ফাইন্যান্সের পিএইচডিতে যান। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো তিন বন্ধু একসঙ্গে পিএইচডি শুরু করা, যেখানে আমরা তিনজনই একসাথে অনার্স চতুর্থবর্ষ থেকেই গবেষণা শুরু করি। আমরা এই চ্যালেন্জিং জার্নিতে সফল হয়েছি।
এই অর্জনে অবদানের বিষয়ে নাইম হোসেন বলেন, আমাদের এই সফলতার পেছনে আমাদের সুপারভাইজার ড. মো. বখতিয়ার হাসান স্যারের অবদান সবচেয়ে বেশি। বখতিয়ার হাসান স্যার আমাদেরকে হাতেকলমে যেভাবে গবেষণা শিখিয়েছেন, আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশে এরকম সুপারভাইজার হাতেগোনা কিছু পাওয়া যাবে, বিশেষত ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে। উনি সবসময় আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাতে সহায়তা করেছেন। দেশি এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষকদের সঙ্গে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া বন্ধুরাও সহযোগিতা করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নাইম বলেন, স্বপ্ন দেখি আকাশ সমান। আল্লাহর করূণা থাকলে অর্জন করতে পারব। একজন ভালো শিক্ষক হতে চাই। যেখানে আমি আমার গবেষণার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারব। আমি চাই আমার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে গবেষণাবিমুখী সংস্কৃতি, সেটাকে সমূলে উৎপাটন করে গবেষণার বীজ বপন করতে।
যারা স্কলারশিপ পেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে নাইম বলেন, আমেরিকায় ফুল স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পাওয়ার জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। শুধু মেধাবী হলেই হবে না, ধৈর্য ধরে লেগে থাকা ও পরিশ্রমের মানুসিকতা থাকতে হবে। যেটা আমাদের তিনজনেরই ছিল। আমাদের প্রত্যেকেই একাধিকবার আইলটস অ্যান্ড জিআরই পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কারণ প্রথমবারে আমরা আমাদের কাঙ্খিত ফলাফল পাইনি। এমনকি আমাকে তিনবার জিআরই দিতে হয়েছিল। যেটা ধৈর্য্য ও আর্থিক সামর্থ্যেরও ব্যাপার। সিজিপিএ, পাবলিকেশন, জিআরই, প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা, আইএলটিএস, রিকমন্ডেশন লেটার, স্যাটমেন্ট অফ পারপাস, ইত্যাদি। সুতরাং, সেগুলো রেডি করার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। যারা আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী, তাদের উচিত অনার্স দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষ থেকেই এসব উপাদানের ওপর কাজ শুরু করা।
জিআরই এর ক্ষেত্রে বলব, বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে এই ফ্যাক্টটা খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। এখানে ৩১০ এর উপরে তুলতে পারলে আপনি প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা রাখেন। এর পাশাপাশি যদি সিজিপিএ ও ভালো হয়, তাহলে আপনার সুযোগ অনেকাংশে বেড়ে যাবে। পিএইচডি আবেদনের ক্ষেত্রে রিসার্চের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। রিসার্চ পাব্লিকেশনকে ফান্ডিং পেতে সহযোগিতা করবে।
ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. বখতিয়ার হোসেন বলেন, তারা খুব পরিশ্রম করেছে। আমি সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের রেজাল্ট শুনে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি। তাদের সফলতায় আমি আনন্দিত। আগামীতে এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকুক।
রাকিব হোসেন/এমএএস