আইসিইউতে থাকা চবি শিক্ষার্থীকে আনা হচ্ছে ঢাকায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে চবির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই একই ঘটনায় আরও ১৪৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, ৪৩ জনকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে এবং ২৪ জনকে ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাদের মধ্যে দুজনের মাথায় আঘাত, অন্যজনের ভাস্কুলার ইনজুরি রয়েছে। এছাড়া আহতদের বেশিরভাগের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে রোববার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও জনতার আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ১৪৪ জনকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রোববার দুপুরে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আগামীকালও (সোমবার) ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
সর্বশেষ রোববার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবিদ বলেন, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অফিসার কমান্ডিং থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পর আমরা গতকাল রাত তিনটার দিকে ব্যারাক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসি। এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। আজ সকাল পর্যন্ত আমরা দেখেছি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। দু’পক্ষের মধ্যে যে সংঘর্ষ হচ্ছিল তা বন্ধ হওয়ার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেজর শাহরিয়ার উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাসের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন এবং আমরা ব্যারাকে ফিরে যাই।
তিনি আরও বলেন, ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার পরও আমরা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে থাকি। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুপুর ২টার পর আমাদের জেনারেল অফিসারদের জানানো হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। তখন আমরা আশপাশের ক্যাম্প থেকে দ্রুত ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান গ্রহণ করি এবং দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। এখন সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। যেহেতু এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, তাই আমরা চাইলে ইচ্ছেমতো আসতে পারি না। আমাদেরকে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়েছে, তখনই এসেছি। বর্তমানে ক্যাম্পাস ও এর বাইরেও আমাদের টহল এবং বিভিন্ন ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তা এড়িয়ে যান।
এমআর/বিআরইউ